ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দীতে আত্মসমর্পণের ঘটনা তুলে ধরলেন নাট্যকলার শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সোহরাওয়ার্দীতে আত্মসমর্পণের ঘটনা তুলে ধরলেন নাট্যকলার শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘এখন মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করবেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর প্রধান আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি।’ সমবেত জনতার উদ্দেশে ঘোষণা করা হলো। সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, পাকিস্তানী বাহিনীর নিয়াজিসহ কয়েকজন দ্রুত উঠে এলেন আগেই ঠিক করে রাখা টেবিলের সামনে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে দুজন বসলেন দুই চেয়ারে। নিয়াজির হাতে তুলে দেয়া হলো দলিল। তীক্ষè চোখে সেটি কিছুক্ষণ দেখলেন। মলিন মুখে সই করলেন তিনি। একই সঙ্গে নিজের অস্ত্র সমর্পণ করে, গম্ভীরভাবে স্যালুট জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়া শুরু করলেন। যেন এখনই হানাদারমুক্ত হলো বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভূমি পাক-হানাদার বাহিনীমুক্ত হলো। দেশ স্বাধীন হলো। শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরের মঞ্চে এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো। প্রতীকী হলেও ৪৬ বছর আগের সেই দৃশ্যই উপস্থিত ছোট-বড়, বৃদ্ধ সবাই মনোমুগ্ধ হয়ে প্রত্যক্ষ করলেন। ‘জেগে আছে বাংলাদেশ, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে’ সেøাগান নিয়ে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৬তম বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণের এই প্রতীকী দৃশ্যে অভিনয় করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। আত্মসমর্পণের পর পরই একাত্তরের ৪৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা নতুন প্রজন্মের ৪৬ জনের হাতে তুলে দেন লাল-সবুজের প্রিয় জাতীয় পতাকা। নয় মাসের যুদ্ধে অর্জিত প্রিয় দেশকে রক্ষার দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় নতুন প্রজন্মের হাতে। তাদের হাতে পতাকা তুলে দেয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যত বাংলাদেশের দায়িত্ব অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুন হাবীব। তিনি বলেন, ‘এই সেই মাটি যেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের জাতির পিতা ৭ মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণ শুনে বাঙালীর ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে উঠেছিল। দেশের মুক্তিযোদ্ধারা সেই ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। এই মাটিতেই ৯৩ হাজার পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। লাল-সবুজের পতাকা পত্ পত্ করে উড়তে থাকে। বিজয় মানেই আনন্দ, উল্লাস। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিকৃত ইতিহাস রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া।’ এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নৃত্যানুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক লায়লা হাসান। ‘বিজয় মানে শিশুর হাসি, মায়ের কান্না শেষ, বিজয় মানে লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ’। কবির লেখনীর ওই কবিতার মতো স্বাধীন বাংলার মুক্ত আকাশে আজ বিজয়ের লাল সবুজে চেয়ে গেছে। শিশু, কিশোর, বুড়ো আর মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আয়োজন ছিল বহুমাত্রিক। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করে এ বিজয় দিবস উদযাপন। এদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বিজয়ের বহুমাত্রিক আনন্দের রেশ আরও বাড়িয়ে দেয় সন্ধ্যায় আতশবাজি ফোটানোর মাধ্যমে।
×