ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি যেন অটুট থাকে

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি যেন অটুট থাকে

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আগের জায়গায় নেই। আগেও বলেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাকে এখন সবাই সমীহ করে। দেশের দিকেও আগের দৃষ্টিতে তাকায় না বিদেশীরা। সাধারণ একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। একসময় আমরা বিদেশী দেখলেই কেমন জানি সঙ্কুচিত হয়ে যেতাম। আমাদের চোখে তারা ছিল প্রভু। উপনিবেশ আর পাকি শাসনের জেরে আমাদের রক্তে এমন একটা ধারা বইত। আজ সেই দিন গত। আজ যারা তরুণ-তরুণী তাদের জীবনে স্বাধীনতা জন্মগত অধিকার হিসেবে পাওয়া এক পরম সম্পদ। আজ আমাদের দেশের রংপুরের হয়ে ক্রিকেট খেলে ক্রিস গেইল। এখন দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায় বিদেশী ক্রিকেটাররা। মফস্বলে আছে হাজার বিদেশী। আছে কাজ করতে আসা মানুষ সব মিলিয়ে তা এক আরেক ধরনের বাংলাদেশ। যারা বলেন এ দেশ এগোয়নি তাদের বলি, চোখ খুলে দেখুন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কি করেছেন। কেমন পাল্টে দিয়েছেন জীবন ও সমাজ। সে কারণে আজ প্রবাসেও আমরা গর্বের সঙ্গে বলি, বাংলাদেশ আমার দেশ। এই ভাবমূর্তি কেবল আর্থিক উন্নতি ধরে রাখতে পারে না। এর সঙ্গে চাই সমাজ ও মনোগত উন্নয়ন। সম্প্রতি আমেরিকার নিউইয়র্কে যে ঘটনাটি ঘটল তাতে আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে। এমন ঘটনা যারা ঘটাত তাদের আমরা এতদিন অন্য চোখে দেখতাম। একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল আমাদের তারুণ্য তা করতে পারে না। কিন্তু সে জায়গাটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। বিদেশী মিডিয়ায় ঘন ঘন প্রচারিত এই নিউজে যতবার বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়েছে ততবার আমাদের বুকে এসে আঘাত লেগেছে। বিজয়ের মাস বলে আমরা যখন নিজেদের আবেগকে অনেক বড় করে দেখছি তখন কোন অজান্তে আমাদের ঘরে ঘরে এমন সাপ বাসা বেঁধেছে বা জন্ম নিচ্ছে তার হিসাব কি রাখি আমরা? ভাববেন না ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে আমি বা আমাদের মতো মানুষেরা ছাড় পাব। বিদেশীরা এগুলো বোঝে না, জানেও না। তাদের কাছে আমাদের পরিচয় আমি কোন দেশে জন্মেছি বা আমার শেকড় কোথায়। ফলে আমি হাজার বার বললেও কাজ হবে না। এই যে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশীদের বিপদে ফেলা এর ভেতর কি বাহাদুরী বা কিসের ইঙ্গিত? কি লাভ এতে? মূলত এসব সমস্যার বীজ আমাদের জীবন আচরণ আর সমাজ থেকেই বড় হয়ে উঠছে। যেসব তরুণ-তরুণীরা স্বপ্নবাজ হওয়ার কথা যাদের মনে তরুণী-তরুণ বা দেশপ্রেম থাকার কথা তারা ঝুঁকে পড়ছে অন্যদিকে। এই প্রলোভন বা ডাক আমরা মেনে নিচ্ছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুক্তির পথ কি? একটা সময় সংস্কৃতি আমাদের পথ দেখাত। বাংলাদেশের মূল প্রাণভোমরা বাংলা সংস্কৃতি। সে থেকে যত দূরে যাব তত অমঙ্গল ঘিরে ধরবে আমাদের। আগে আমরা দেখতাম পাড়া-মহল্লায় দেশের সব জায়গায় সংস্কৃতিই ছিল মূল বিষয়। আনন্দ ও জিয়নের এক মোহনীয় সংযোগ। সেটা পাল্টে গেছে এখন। জোর করে সংস্কৃতি হয় না। যে স্বতঃস্ফূর্ততা একসময় গান-বাজনা, নাটক-থিয়েটারকে এগিয়ে নিত সেটা থেমে আছে। এখন চলছে একদিকে বাণিজ্য, আরেকদিকে না করলেই না জাতীয় কিছু কাজ। অভিভাবক থেকে সমাজ নেতা সবার মনে সংশয় আর সন্দেহ। কোন্টা করলে লাভ আর কোন্টায় লোকসান এ চিন্তায় যখন সমাজ আচ্ছন্ন তখন স্বাভাবিকতা মাথা কুটে মরবে বৈকি। যারা শেখাতেন বা শেখাতে পারবেন তাদের দিকে তাকালেই ভয় হয়। এরা এত গম্ভীর আর এত বিষাদগ্রস্ত দেখলে মনে হয় জীবনেও হাসেন না। এই গম্ভীরমুখো মানুষগুলো তারুণ্যকে জাগাবেন কিভাবে? ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগের কুফলও মিলছে হাতে হাতে। মানুষের আকাশ বাতাস প্রকৃতি কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর ফুরসত নেই। সারাদিন সারারাত নির্ঘুম ফেসবুক জাতিকে একদিকে যেমন দুর্বল করছে আরেকদিকে তার সৃজন বা মেধাকে শুষে নিচ্ছে। এর ফলে কারও প্রতি কারও টানও থাকে না। মেলামেশাহীন মানুষ অপরাধী হয় এটাই স্বাভাবিক। আপনি যত সামাজিক আর যত খোলামেলা মিশুক হবেন তত আপনার বন্ধু বাড়বে। আপনার মন থেকে পাপ বা বাজে চিন্তাও দূর হবে। আমাদের তারুণ্য কি তা করে? এই যে মনরোগে ভোগা ছেলেমেয়ে, এরাই একসময় আততায়ী হয়ে ওঠে। এই বিপদ এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পা ফেলেছে। এরা এতটাই পেছনে এবং এতটাই বেপরোয়া এদের মাথায় মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র বা কারও কথা কাজ করে না। একসময় আমরা অতিবামদের বেলায় এমন দেখতাম। তবে তারা ছিল সংখ্যায় কম আর পড়াশোনা জানা। তাই ভেবেই কাজ করত তারা। এখন ভাববার টাইম নেই। করলেই হলো। বিদেশে অতিকষ্টে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত মানুষদের শ্রমফল এভাবে নষ্ট করার অধিকার নেই কারও। আগেই লিখেছি বাংলাদেশ এখন ধাবমান একটি দেশ। তরতর করে এগুচ্ছে তার অর্থনীতি। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় নিজেও বিদেশে থাকেন। তিনি জানেন কিভাবে আধুনিকতা ধারণ করতে হয়। তাকে দেখলে ভরসা জাগে একসময় আমাদের স্মার্ট তারুণ্য সামনে এসে আগের যত হীনম্মন্যতা দূর করে দেবে বলে। সে দিন খুব বেশি দূরেও নয় হয়ত। কিন্তু এমন আপদ যে আমাদের সর্বনাশ করে ছাড়বে। আমেরিকা আমাদের আপাত মিত্র হলেও তাকে বিশ্বাস করা কঠিন অথচ তাকে চটানো চলে না। দেশে এক ধরনের সুশীলদের দেখি সুযোগ পেলেই আমেরিকা বিরোধিতায় সোচ্চার। এরা এত ভ- খবর নিলেই দেখবেন তাদের জীবনের আখেরি খায়েশ আমেরিকায় গিয়ে জীবন পার করা। সুযোগ পায় না বলে ট্রাম্পবিরোধী কথা বলে পপুলার হতে চায়। আমাদের চেয়ে বয়সে এক কবিকে দেখি রোজ দু-এক পশলা আমেরিকা বিরোধিতা করে নিজের ঝাল মেটান। অথচ তলে তলে মেয়েকে সে দেশে পাঠানোর ফিকির করছেন। এদের থেকে সাবধান হতে হবে। কোমলমতি তারুণ্য বলে এখন আর পার পাওয়া যাবে না। ঘরে বাইরে আমাদের সন্তানদের আসল বিষয় জানাতে হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা বাইরে এলেও দেশকে ভোলে না। দেশের সবকিছু তাদের জীবনে ছায়া ফেলে রাখে। তাই দেশে শান্তি আর ভালবাসা থাকলে দেশের বাইরেও তার প্রভাব পড়বে। আমেরিকা এমনিতেই অশান্ত। তার আগের প্রতাপ বা ভয় দেখানোর শক্তি নেই। তবু এখনও সে এক নম্বরে। এই জায়গাটা না হারানোর জন্য সবকিছু করবে তারা। সে দেশে বসবাসরত লাখ লাখ বাংলাদেশীর কথা ভাবতে হবে। সবাই জানেন বিদেশের রেমিটেন্স আর প্রবাসীদের সহায়তা দেশের উন্নয়নে রাখে ব্যাপক ভূমিকা। ছোটখাটো ব্যাপারে সেটা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সাবধান করছেন। তাঁর এই সাবধান বাণী শুনলে দেশের লাভ। জনগণের লাভ। ঘরে বাইরে উস্কানি না থাকলে কেউ ইচ্ছায় জান দিতে যায় না। আজ দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি দরকার শান্তি। আমাদের সন্তানরা যেন সে কাজে ব্যাঘাত না ঘটায়। তাদের কাছে জিম্মি আছে দেশ ও জনগণের ভাবমূর্তি। সে কারণেই সাবধানতার বিকল্প নেই। রাজনীতি সমাজ আর মানুষ মিলে তা করতে চাইলে তবেই এমন ঘটনা বন্ধ হতে পারে। আমাদের শান্তিপ্রিয় ইমেজ উন্নয়ন ও দেশের জন্য ভীষণ জরুরী।
×