ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপে অভিমত

চাকরির নিরাপত্তার জন্য বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

চাকরির নিরাপত্তার জন্য বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিকল্প নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশে কর্মীদের নিরাপদে কাজ করার সুযোগ তৈরি ও তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এখন বিদেশে কর্মীরা বিপদে পড়লে বা কোন সমস্যা তৈরি হলে আমাদের দূতাবাস ও হাইকমিশন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে দেশ থেকে দক্ষ কর্মী পাঠানোর কোন বিকল্প নেই। কারণ দক্ষ কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা রয়েছে। তাদের বেতনও ভাল। আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শতভাগ দক্ষ কর্মী বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানে শতকরা ৪১ ভাগ দক্ষ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার ডেউলি স্টার ভবনে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির আয়োজনে ‘অভিবাসন কূটনীতি, সাফল্য, সীমাবদ্ধতা ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এসব কথা বলেন। সংলাপে অংশ নেন মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, বিএমইটির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কে.এম মহসীন প্রমুখ। সংলাপের মূূল প্রতিপাদ্য বিষয় উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান ও শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। মূল প্রতিপাদ্যে বলা হয়, পরিবর্তিত বিশ^ব্যবস্থায় নিরাপদ শ্রম অভিবাসন আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি, দক্ষ কর্মীর অভাব, অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া প্রভৃতি কারণে শ্রমিক প্রেরণকারী দেশগুলোকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্রমিকদের ফিরিয়ে দেয়া, শর্ত ভেঙ্গে কম বেতন প্রদান, দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ না দেয়া, নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়াসহ বিবিধ সমস্যা মোকাবেলার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এ সকল সমস্যা সমাধানে অভিবাসন কূটনীতি জোরদারের বিকল্প নেই। অভিবাসন কূটনীতি জোরদার হলে জনশক্তি প্রেরণ যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অভিবাসীদের সার্বিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যাবে । ২০১১ সালে ঢাকায় কলম্বো প্রসেস, ডিএফএমডি শীর্ষক সম্মেলন আয়োজন, ২৯টি দেশে লেবার এটাশে নিয়োগ, কয়েকটি দেশের সঙ্গে স্বল্প ব্যয়ে বা বিনা খরচে জিটুজি পদ্ধতিতে শ্রমিক প্রেরণসহ বিভিন্ন দেশে আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশী কর্মীদের ডকুমেন্টেড করা অভিবাসন কূটনীতিতে বেশ বড় সাফল্য বয়ে এনেছে। কিন্ত তারপরও কর্মী প্রেরণে নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করাটাই সরকারের জন্য এখনও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কার্যকর অভিবাসন কূটনীতিই আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদেরকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে পারে। অভিবাসী কর্মী সুরক্ষা, শোভন কাজ, নিরাপদ আবাসন, কাজ শেষে দেশে ফিরে আসার সুব্যবস্থা, স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা জরুরী। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের অভিবাসন প্রকৃতি, অভিবাসীদের পেশাগত নিরাপত্তা, অভিবাসন ব্যয়, কর্মীদের মজুরি, অধিক সংখ্যক পেশাজীবী প্রেরণ, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে পাঁচ বছর মেয়াদী কূটনৈতিক প্লান করতে হবে। সংলাপে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বাংলাদেশের জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মানুষই দেশের সম্পদ। তারা বিশ্বের ১৬৫ টি দেশে শ্রম ঘাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। তাদের টাকায় দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হবার পর এদেশের নাগরিকদের অভিবাসনের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় আমরা অভিবাসন খাতকে দেশের অন্যতম প্রধান খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩ শত ৫৪ জন কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এ যাবত কালের মধ্যে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ গেলেন। ডিসেম্বরের বাকি সময়ে আরও প্রায় ১০ থেকে ২০ লাখ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যাবেন। নবেম্বরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সৌদিতে এ বছর ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮ শ’ ৬২ জনের কর্মীর কর্মসংস্থান হয়। এরপরেই ওমানের স্থান। দেশটিতে ৮৩ হাজার ১৬ জন, কাতারে ৭৭ হাজার এক শ’ ৪৫ জন এবং কুয়েতে ৪৬ হাজার ১শত ৭৪ জন চাকরি পেয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারে ৮৩ হাজার ১ শ’ ৬৯ জন এবং সিঙ্গাপুরে ৩৭ হাজার ৬ শ’ ৭০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এক লাখ ১৩ হাজার ৯ জন নারী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। নারী কর্মীর বেশির ভাগই সৌদিতে কর্মসংস্থান হয়। দেশটিতে এ বছর ৭৬ হাজার ৪ শ’ ১০ জন নারী কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। জর্দানে ১৯ হাজার ১২ জন ও ওমানে ৮ হাজার ৬ শ’ ৮৬ জন নারী চাকরি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা আমাদের নারী অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষার পাশাপাশি অভিবাসনকে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ জন্য নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ের ওপরে গুরুত্ব দিয়েছি। দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দেশের ৩৮ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দেড় লাখের বেশি দক্ষ কর্মী বের হচ্ছেন। দক্ষ কর্মী পাঠানোই আমাদের মূল টার্গেট। কারণ দক্ষ কর্মীরা কখনই বেকার থাকেন না। তাদের বেতন ভাতাও ভাল। বর্তমানে আমরা দক্ষ কর্মীর ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছি। তবে আদা দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদেরও বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, অনেক অদক্ষ কর্মী বিদেশ গিয়ে কয়েক মাসের মধ্যে দক্ষ কর্মীতে পরিণতি হয়েছে। সংলাপে ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, পরিবর্তিত বিশ্বে কর্মীদেরও আধুনিক ও দক্ষ হতে হবে। শ্রমবাজারে টিকে থাকতে হলে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। বিশ্বে দক্ষ কর্মীদের গুরুত্বই আলাদা। দক্ষ একজন ট্রাকচালক ৫ হাজার ডলার বেতন পান। আর অদক্ষ একজন কর্মী এক হাজার ডলারও বেতন পান না। এখান থেকেই আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত দক্ষ জনবল সৃষ্টি করার। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবির বলেন, আগের দিন এখন আর নেই। কারণ আগে আমরা এলডিসি যুগে ছিলাম। এখন আমরা এসডিজি যুগে এসে আমাদের একটা হাইট তৈরি হয়েছে। এই হাইটকে ধরে রাখতে হলে কর্মীদেরও দক্ষতার মান ওই জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বজুড়েই মানুষ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সেই তুলনায় আগাতে হবে। তার জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
×