ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার অর্থ পাচার তদন্ত দাবি ১৪ দলের

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

খালেদার অর্থ পাচার তদন্ত দাবি ১৪ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কোন্ কোন্ দেশে অর্থপাচার করেছেন তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানানোর পাশাপাশি ১৪ দল আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের দেশ অস্থিতিশীল করার যেকোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক সভা শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, বিএনপি অবশ্যই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে, এটা লিখে রাখেন। নাসিম বলেন, বিএনপি দুর্নীতির মহাকাব্য রচনা করেছিল হাওয়া ভবন তৈরি করে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা অনুসন্ধান করতে ১৪ দল দাবি জানাচ্ছে। তদন্ত করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে; কোথায় কোথায় অর্থপাচার করা হয়েছে। এই অর্থপাচারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার পরিবার কীভাবে জড়িত আছে, তা সামনে আনতে হবে; বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে জবানবন্দীর নামে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারকে আক্রমণ করেছেন। প্রকারান্তরে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করেছেন। খালেদা জিয়া আজ ন্যায়বিচারের কথা বলেন, ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু এই খালেদা জিয়া যেদিন একাত্তর ঘাতক ও পঁচাত্তরের ঘাতকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলেন সেদিন কোথায় ছিল ন্যায়বিচার? স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। এ সময় মন্ত্রিসভার আকার ছোট থাকবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করছে তারা আসলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার দুরভিসন্ধি লালন করছে। এই নির্বাচনকে ভ-ুল করার নেত্রী হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ন্যায়বিচারকে ভূলুণ্ঠিত করা। গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মাঠে নেমেছেন। গণতন্ত্রকে ভ-ুল করতে তিনি প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন। আবারও নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। তবে সংবিধানের বাইরে যেকোন পদক্ষেপ ১৪ দল প্রতিহত করবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এবারের নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি বানানোর নির্বাচন নয়; এবারের নির্বাচন হলো জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার নির্বাচন। বাঙালী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে লক্ষ্য অর্জন করেছে সে লক্ষ্যকে ধরে রাখার নির্বাচন। তাই, এই নির্বাচনে জনগণ ভুল করতে পারে না। ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে টার্গেট রেখে বিভিন্ন মহল মাঠে নেমেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্যও মাঠে আছে ওই চক্র। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে সামনে নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সৌদি আরবে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পত্তি থাকার খবরের সত্যাসত্য প্রমাণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে আরাফাত রহমান কোকো ও তারেক রহমানের পাচার করা টাকা বাংলাদেশে ফেরত এসেছিল। আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি, মওদুদ আহমদসহ যারা কথা বলেন- আপনারা কালো টাকা সাদা করলেন কেন এবং কোকোর ২০ কোটি টাকা কোথা থেকে এলো?’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সারা দেশে দুর্নীতির সিন্ডিকেট করেছেন। খুনীদের আস্তানা হচ্ছে বিএনপি এবং এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। অবিলম্বে পুলিশী তদন্তের মাধ্যমে এটা প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে পুড়িয়ে মারার বিষয়টি তদন্ত করে জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এখন উর্ধগতিতে। এটা দ্রুত সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় দেশ টানা ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ওই সময় জিয়া পরিবার কোথায়-কিভাবে সম্পদ পাচার করেছে দুদককে তা তদন্ত করে খুঁজে বের করতে হবে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এমপি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। ১৪ দল বঙ্গবন্ধুর গৃহীত ফিলিস্তিন নীতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে জাসদ (একাংশ) নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক জানানো হয়।
×