ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্লু-ইকোনমি : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

পৃথিবী থেকে রিজাল ব্যাংককেই বিদায় করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

পৃথিবী থেকে রিজাল ব্যাংককেই বিদায় করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, অর্থ চুরির পর থেকে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংককে টাকা ফেরতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। প্রথমদিকে তারা আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তারা এ ব্যাপারে গড়িমসি শুরু করে। তাই এখন শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। সম্ভব হলে রিজাল ব্যাংককে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে চাই। শনিবার রাজধানীর শিশু একাডেমিতে জুলোজিক্যাল সোসাইটি আয়োজিত ‘ব্লু-ইকোনমি ঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে পৃথিবী থেকে রিজাল ব্যাংকটাকেই বিদায় করতে হবে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চুরি হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে সব ধরনের আইনী সহায়তা দিচ্ছে ফিলিপিন্সের সরকার। একটি নির্দিষ্ট সময় পর যদি চুরি হওয়া সম্পূর্ণ অর্থ উদ্ধার না হয়, তবে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে। প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের আরসিবিসি’র চারটি এ্যাকাউন্টে আর বাকি ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায়। ব্যাংকটির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ফিলিপিন্সের ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার জায়গা) চলে যায় বেশির ভাগ অর্থ। তবে হ্যাকারদের একটি বানান ভুলে ২ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে ফিলিপিন্সের সিনেট শুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত আনতে সক্ষম হয়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার হামলার এই ঘটনার এক মাস পর ফিলিপিন্সের গণমাধ্যমের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকাশ পায়। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ও আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটের সঙ্গে আলোচনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু তাই নয়, অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপিন্সের আরসিবিসি’র বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিউইয়র্ক ফেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ওই কনফারেন্স কলে সুইফটের দুজন প্রতিনিধিও ছিলেন আলোচনায়। বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনী পরামর্শ দিচ্ছেন এ রকম একজন ওই কনফারেন্স কলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি তোলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কোন লিখিত প্রস্তাব পাঠালে তা বিবেচনা করে দেখা হবে বলে ওই বৈঠকে আশ্বাস দেন ফেডের কর্মকর্তারা। তবে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, অর্থ উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ওই দেওয়ানি মামলাটি করা হবে নিউইয়র্কে। ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষ এই মামলায় বাদী হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি ॥ নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যে সাগর ভরে যাচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে সাগর। যেভাবে প্লাস্টিক বোতল ফেলা হচ্ছে তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে ‘ব্লু-ইকোনমি ঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিভাগের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়াল এ্যাডমিরাল খোরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নদী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমরা সাগরের ব্যবহার করতে পারিনি। অথচ খাল-বিলের পরিমাণ মাত্র ১৮ হাজার কিলোমিটার। যেখানে সাগরে পরিমাণ ১ লাখ ১৮ কিলোমিটার। তাই এখনও সময় আছে সাগরের যথাযথ ব্যবহার করার। খোরশেদ আলম বলেন, উপকূল থেকে সমুদ্রসীমার দৈর্ঘ্য ৬৬০ কিলোমিটার, গভীরতা প্রায় আড়াইহাজার কিলোমিটার। এখানে প্রায় ২৬টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলো ব্লু-ইকোনমির অন্তর্ভুক্ত। যেখানে সাগরের সাহায্য নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্পাদিত হয়। সমুদ্র অর্থনীতি থেকে বছরে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় হয়। এর মধ্যে খাবার, এনার্জি, পরিবহন, মিনারেল ওয়াটার, পর্যটনসহ আরও বেশ কয়েকটি খাত থেকে এ আয় আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রলারগুলো উপকূল থেকে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরে। ৬৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ৬০-৭০ কিলোমিটার। বাকি ৬শ’ কিলোমিটারে মাছ ধরতে প্রণোদনার মাধ্যমে গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গত বছর বঙ্গোপসাগর থেকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ মিলে ৮০ লাখ টন মাছ ধরেছে। সেখানে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ৯৫ হাজার টন। তিনি বলেন, বিশ্বে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে ২০৫০ সালে তা ৯ বিলিয়ন হবে। এ বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য আরও প্রায় ১শ’ মিলিয়ন টন মাছ লাগবে। বর্তমান বিশ্বে ১৬০ মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়।
×