ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলায় ২ ফিলিস্তিনী নিহত;###; দেশে দেশে বিক্ষোভ

জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘে একঘরে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

জেরুজালেম ইস্যুতে জাতিসংঘে একঘরে যুক্তরাষ্ট্র

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘটনায় জাতিসংঘে একঘরে হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মত দেয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বৈঠক শেষে নিরাপত্তা পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই জেরুজালেমের অবস্থান ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি রাশিয়া দুই জাতির জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনের উপায় খুঁজতে জরুরী ভিত্তিতে একটি ‘অর্থবহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’ পুনরায় শুরুর আহ্বান জানায়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রশাসনের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামূলক বলে আখ্যা দেয়। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা ক্ষতি করছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে আরও চাঙ্গা করে তুলবে। ট্রাম্পের ঘোষণা এদের জন্য অক্সিজেনের মতো কাজ করবে। শনিবার বাহরাইনে মানামা ডায়ালগ ইভেন্ট নামে এক বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে সৌদি প্রিন্স তুরকি আল ফয়সাল এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ঘোষণা জঙ্গী গ্রুপগুলোর জন্য অক্সিজেনের মতো কাজ করবে এবং তা মোকাবেলা করা কঠিন হবে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার গাজার হামাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলী বাহিনী। এতে দুই ফিলিস্তিনী নিহত ও শিশুসহ অন্তত ২৫জন আহত হয়। ইসরাইলী সেনা সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, হামাসের ছোড়া রকেট হামলার প্রতিউত্তরে এই হামলা করা হয়। গাজা হাসপাতালের চিকিৎকরা জানিয়েছেন, বিমান হামলা ও বন্দুকযুদ্ধে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। একদল মুসলিম ওই দিন জুমার নামাজের পর হোয়াইট হাউজের সামনে জড়ো হয়। এছাড়া গাজা, মিসর, জর্ডান, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিসিয়া, ইরান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভে ট্রাম্প ও ইসরাইল বিরোধী নানা সেøাগান দেয়া হয়। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডক্টর আশরাফ আল কাদির বলেন, গাজা শহরের দক্ষিণ থেকে দুজন হামাস যোদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই দুই যোদ্ধা হামাসের কসম ব্রিগেডের সদস্য ছিলেন। নিহতদের নাম মোহাম্মাদ আল আতাল (২৮) ও মোহাম্মাদ সাফাদি (৩০) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মধ্যে আলোচনার প্রতি জোর দেন। ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনছে। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরাইলের দমন, পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরও উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নাবেনজিয়া বলেন, আমরা দুই জাতির জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে জরুরী ভিত্তিতে একটি ‘অর্থবহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’ পুনরায় শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি। নাবেনজিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং এমনকি এটি পুরো অঞ্চলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ওই রুশ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বিরাষ্ট্র সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের চূড়ান্ত ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার উপায় হিসেবে একটি অর্থবহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জরুরীভাবে আবারও শুরু করার বিষয়টি একেবারে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ওদিকে জেরুজালেম ইস্যুতে একপেশে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো অনিশ্চিত হওয়ায় এতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে চান তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। ট্রাম্পের এই ঘোষণার আগ পর্যন্ত এরদোগান ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দাবি করেন। এরদোগান বলেন, ফিলিস্তিন নাগরিকরা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত পূর্বাঞ্চলের শহর জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যত রাজধানী হিসেবে মনে করে। ট্রাম্পের সতর্কতা উপেক্ষা করে এরদোগান ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে প্যান ইসলামিক গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার জন্য তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
×