ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সময় গেলে সাধন হবে না!

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সময় গেলে সাধন হবে না!

সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সময়কে আপনি যদি দাম না দেন সময় ও আপনাকে দাম দিবে না। পৃথিবীতে একটা বাস্তবতা রয়েছে আর তা হলো, দেয়া এবং নেয়া। এ কথা শুধু বাঙালীই বিশ্বাস করে না বোধহয়। এর ও একটা চমকপ্রদ জবাব আছে। বেশিরভাগ সময় লক্ষ্য করলে দেখবেন, বাঙালীরা সময়ের কাজ সময়ে করেন না। হোক সেটা চাকরি, ব্যবসা, সেবা কিংবা নিজের ঘরের কর্ম। এমন কী অনেকে সময়তো নিজের খাবারটাও খান না। এসবই সময়ের প্রতি উদাসীন ভাব। আবার কেউ কেউ তো আলালের ঘরের দুলাল। ইচ্ছা হলে ওনারা আসেন অফিসে, আবার ইচ্ছা হলে অফিস ত্যাগ করেন। কেউ কেউ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে সময়ের সেবা সময়ে না দিয়ে নানা টালবাহানা জুড়ে বসেন। বিশেষ করে গুটিকয়েক অসাধু অফিসের কর্মকর্তারা সময়কে মূল্যয়ণই করেন না। ইচ্ছা হলে অফিসে আসেন; আবার সেই সময়টা ও সঠিক সময় নয়! হাসপাতালের ডাক্তাররা ও মাঝে মাঝে সময় দিতে ভুলে যান রোগীদের। এই তো সেদিন আমার এক বন্ধু ফোন করে বলছে, ‘দোস্ত অনেক কিছু লইয়াই তো লেখো, এই যে চিকিৎসকরা আমাদের একটু সময় নিয়া দেইখা চিকিৎসা দেয় না; সে বিষয়ে লিখতে পারো না!’ চমৎকার প্রশ্ন, উত্তর ও চমৎকার হওয়াই উচিত। উনি সময়কে মূল্যায়ণ করেছেন তাই সময় নিয়া দেখেন নাই। তবে ওনার এই সময়টা সেই সময় নয়। সেটা অন্য সময়। সময়জ্ঞান নেই ইদানং বাস,ট্রেন সার্ভিসেও। সময়ের ট্রেন সময়ে আসে না। যাত্রীরা পায় না খুঁজে বাস। তবে এমনটা বেশিরভাগ সময় দেখা যায় বড় কোন জাতীয় কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা পোহায় অসহ্য অপেক্ষার যন্ত্রণা। সময় যাচ্ছে অথচ অনেকে তার আজকের কর্ম কালকের জন্য ফেলে রাখছে। অফিস যাই-যাচ্ছি করে ঠিক মতো যাওয়া হয় না। পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীরা বসতে চায় না। অনেকে ভাবেন কাল না হয় কাজটা করে নেব। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, কাল আর কাজটি করা হয় না। সময়ের কাজ সময়ে না করলে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। যেমন অনেকে আজকের পড়া কালকের জন্য রেখে দেয়। যা কিনা আলস্য দোষের কারণে শেষ করা হয় না ঠিকমতো। সঠিক সময়ে, সঠিক বীজ বপন না করতে পারার কারণে ফলনও ভাল হয় না। গ্রামের বেশিরভাগ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সময়জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। বিশেষ করে যারা প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করেন তারা সময়ের মূল্য দেয় না বলেই দেশের সাধারণ জনতা ভোগান্তী পোহাচ্ছে। এ দেশে অনেক মেধাবীর মেধা বিকাশ হয় না, শুধু সময়কে অবমূল্যায়ন করার জন্য। বাঙালীর এই সময়ের উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন, ‘সময়ের মূল্য’ সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা। সময়ে সময়কে প্রাধান্য দিলে সময় ও আপনাকে প্রাধান্য দেবে নির্ঘাত। সময়ের অপচয় এ দেশে এতটা প্রখর হয়েছে যে, শিশু থেকে বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী এমনকি কুলি-মজুর সকলেই সময়কে প্রতিনিয়ত হেলা করে চলেছে। সময়কে সঠিক সময় ব্যবহার না করে উল্টো সময়কে হুমকির মুখে সম্মুখীন করছি। আমরা যদি বিদেশের দিকে তাকাই তবে বুঝব সময়ের মূল্য দেয়া কতটা জরুরী। এই তো ক’দিন আগের কথা, মাত্র বিশ সেকেন্ড আগে জাপানে একটি রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেন। অমনি ওই দেশের রেল কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়েছেন সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের জন্য। এমনটা ঘটেছে শুধু সময়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকার কারণেই। অথচ দেখুন বাংলাদেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিডিউল বিপর্যয় লেগেই থাকে বাস, ট্রেন চলাচলে। এ থেকে মুক্তির একটাই পথ, আর তা হলো আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে, দেশ হবে উন্নত, জাতির বাড়বে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা। প্রয়োজন সময় সচেতনতা। চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ থেকে
×