ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া অরফানেজ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি ১৯ থেকে ২১ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

জিয়া অরফানেজ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি ১৯ থেকে ২১ ডিসেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার জামিন পাওয়ার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পেয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হওয়ার পর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। এর মধ্য দিয়ে জিয়া অরফানেজের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৯ বছর আগে দুদকের দায়ের করা এ মামলা বিচারের শেষ পর্যায়ে উপনীত হল। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে। মঙ্গলবার এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শেষ দিন প্রায় তিন ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার সময় ক্ষমতার কোন অপব্যবহার তিনি করেননি, অন্যায় প্রভাবও খাটাননি। খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি এই মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি এবং আপনার আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমি বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য। খালেদা জিয়া বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ নিরপেক্ষতার বিধান লঙ্ঘন করে কোন রূপ দালিলিক প্রমাণ ছাড়া ১৫ দিনের মাথায় আমার বিরুদ্ধে একটি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা রিপোর্ট দাখিল করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি নিরপেক্ষ থাকলে এ রূপ অনুমান নির্ভর সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ থাকতো না। খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস হিসেবে অনুমান নির্ভর ও কাল্পনিক অভিযোগে এই মামলায় মিথ্যা বর্ণনায় আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমাকে, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হয়রানি করার প্রয়াস হিসেবে এ মামলাটি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজের সঙ্গে আমি কোনভাবে জড়িত নই। খালেদা বলেন, বাদী আমার বিরুদ্ধে জবানবন্দীতে বলেছেন আমার দুই ছেলে এবং আত্মীয় মুমিনুর রহমানকে দিয়ে আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করিয়েছি। এ কথা আমার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য বলে থাকেন। এগুলো সব ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মনগড়া। বেলা সোয়া ১১টার দিকে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত খালেদার জামিন এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তি উপস্থাপন উত্তোলনপূর্বক আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য দিতে আবেদন করলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিরোধিতা করেন। আদালতে তিনি আবেদন করেন, সাত-সাতদিন তিনি (খালেদা জিয়া) বক্তব্য দিয়েছেন, আর কত? তার লিখিত বক্তব্য নেয়া হোক। আদালত বলেন, আজকেই তাকে (খালেদা জিয়া) শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আজকেই তাকে বক্তব্য শেষ করতে হবে। শেষ করতে না পারলে লিখিত আকারে দিতে হবে। পরে আদালতে খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
×