ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার ভোরে ঢুকেছে আড়াই শতাধিক

সীমান্তের জিরো লাইনে এখনও ২৫ হাজার রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

সীমান্তের জিরো লাইনে এখনও ২৫ হাজার রোহিঙ্গা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট শীঘ্র উত্তরণে এখন পর্যন্ত যথার্থ কোন পরিবেশ পরিস্থিতি দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রাণান্তকর প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের আগের অবস্থানেই রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সেদেশের সরকারী পর্যায়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা আলোচনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে কথাবার্তা হলেও সামগ্রিক ফল রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখনও অনুকূলে আসেনি। সেদেশের এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি, স্টেট কাউন্সিলর দফতর ও সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত যেসব বক্তব্য এসেছে তাতেও নানা শর্ত জুড়ে রাখা হয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। সারাবিশ্ব এ ইস্যুতে বলছে এক কথা। কিন্তু মিয়ানমারের সুর বরাবরই ভিন্ন। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমার তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থের বলি করতে গিয়ে সেনা অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের গণহত্যাসহ যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা তাদের বড় একটি ভুল তা সারাবিশ্বে আলোচিত হয়েছে এবং এখনও হয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সে দেশ থেকে বিতাড়িত যে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে তা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নয়, বরঞ্চ বিশ্ব পরিম-লে সাধুবাদ কুড়িয়েছে এবং এখনও কুড়াচ্ছে। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু এসব রোহিঙ্গারা সেদেশের একটি অনগ্রসর নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে বসবাস করে আসছিল। মূলত রোহিঙ্গা মিয়ানমারিজ (বার্মিজ মুসলমান)। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে বছর পর বছরজুড়ে তাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সমূলে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়ে মিয়ানমার যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে তা ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। মূলত এ কারণেই বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও তাদের সকল অধিকার বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে যা প্রকারান্তরে বড় ধরনের একটি চাপ বলেই স্বীকৃত। এদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঘটনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সোমবার ভোরেও এসেছে নতুন করে আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। এরা টেকনাফের শামলাপুর সাগরপথে ও নাফ নদী পার হয়ে লম্বরি পাড়া পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। অপরদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত সংলগ্ন জিরো লাইনের ৫ পয়েন্ট এবং মংডুর দংখালী এলাকায় ২৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে উভয় সঙ্কটে রয়েছে। তারা না পারছে নিজ নিজ বসতি এলাকায় ফিরে যেতে আর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রতিও রয়েছে তাদের এক ধরনের অনীহা। কিন্তু ইতোমধ্যে যারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের পক্ষ থেকে এসব রোহিঙ্গার মাঝে বিভিন্নভাবে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী সীমান্তের ওপারে পাচার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে উভয় দেশে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিপি ও বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত টহল ইতোমধ্যে কড়াকড়ি করেছে। উভয় সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ছে ॥ মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিপি ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত এলাকা কড়াকড়ি জোরদার করে চলেছে। এ বিষয়ে দু’দেশের কোন সংস্থার পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বিজিপি কড়াকড়ি আরোপ করতে শুরু করেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা যাতে কোন পথে পুনরায় রাখাইনে ফিরে যেতে না পারে। আর বিজিবি আর যাতে রোহিঙ্গা ঢল না আসে সে লক্ষ্যে তাদের এ তৎপরতা। শীতবস্ত্র সঙ্কট ॥ বর্তমানে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে শীতবস্ত্র সঙ্কট বাড়ছে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা যখন দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তখন বেসরকারী পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি শীতবস্ত্রও প্রদান করে অনেকে। কিন্তু রোহিঙ্গারা তখন শীতবস্ত্র তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে ফেলে দেয়। যা পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। রোহিঙ্গারা মূলত উন্নততম খাদ্য, ত্রাণ সহায়তা ও নগদ টাকার প্রতি আগ্রহী বেশি ছিল।
×