ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাজাগতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতা

শোলক বলার রাত উধাও চাঁদমামা ফিরেছে সুপারমুন হয়ে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

শোলক বলার রাত উধাও চাঁদমামা ফিরেছে সুপারমুন হয়ে

মোরসালিন মিজান আয় আয় চাঁদ মামা/টিপ দিয়ে যা/চাঁদের কপালে চাঁদ/টিপ দিয়ে যা...। না, শৈশবের চাঁদ মামাটি আর নেই। আসে না। বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ/মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই...। শোলক বলার চিরচেনা রাতগুলো উধাও! পরিবর্তনের ধারায় এসেছে সুপার মুন। আজকের প্রজন্ম চাঁদকে মামা বলে ডাকতে নারাজ। বিজ্ঞানের মোটা মোটা বই পড়ে তারা জেনে গেছে মায়ের ভাই সে নয়! বরং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ হিসেবেই চাঁদকে চেনে তারা। এই চাঁদ বছরের কোন কোন দিন পৃথিবীর খুব কাছে চলে আসে। তখন কয়েকগুণ বড় দেখায়। রবিবার ছিল সেই কাক্সিক্ষত রজনী। বিপুল কৌতূহল নিয়ে পূর্ণচন্দ্র দেখেছে খুদে বিজ্ঞানীরা। সাধারণ সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষেরাও ছিলেন মুগ্ধ। কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের আকাশে উঁকি দিচ্ছিল কোল্ড মুন বা শীতল চাঁদ। সাধারণ সময়ের চেয়ে বড় হওয়ায় এটি খুব চোখে পড়ছিল। সবাই কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছিলেন। তবে এই বড় যে শেষ কথা নয়, জানাজানি হয়ে গিয়েছিল আগেই। বহু মানুষ অপেক্ষা করে ছিলেন রবিবারের জন্য। আগামী দুই মাসে তিনটি সুপার মুন দেখা যাবে। এদিন দেখা হয় প্রথমটি। বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশের বেশিরভাগ দেশেই দেখা যায় সুপার মুন। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি এলাকা থেকেও দেখা গেছে বলে জানা যায়। রবিবার দুপুরে চাঁদ ছিল সূর্যের বিপরীতে। পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৭৬১ মাইল। এই দূরত্ব গড় দূরত্ব ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ মাইলের চেয়ে কম। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে উঁকি দেয় সুপার মুন। অবশ্য ‘উঁকি দেয়’ বললে ভুল বলা হবে। ইয়া বড় চাঁদ তার মেদভুড়ি সামনে ঠেলে দিয়ে সুন্দর দাঁড়িয়ে ছিল! পৃথিবীর প্রায় নাগালে চলে আসায় চাঁদকে যেমন বড় দেখাচ্ছিল, তেমনি ছড়িয়েছিল আলো। অত্যুজ্জ্বল চাঁদের আলোয় ম্লান হয়ে গিয়েছিল শহরের সব বাতি। অত্যাধুনিক এলইডি লাইট চাঁদের আলোকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। ¯িœগ্ধতার সবটুকু নিয়ে আকাশে অবস্থান করছিল সুপার মুন। অন্য সময়ের তুলনায় শতকরা প্রায় ৭ ভাগ বড় ও ১৫ ভাগ উজ্জ্বল দেখতে ছিল চাঁদ। খালি চোখে এই তারতম্য বোঝা মুশকিল। তাতে কী? চাঁদ দেখার যন্ত্রপাতি অনেক আছে। আছে আরও নানা উপকরণ। সব নিয়ে বলা চলে ওঁৎপেতে ছিলেন নক্ষত্রপ্রেমীরা। শহর ঢাকার খোলা জায়গায়, বাসার ছাদে চলে সুপার মুন উৎসব। যুক্তরাজ্যের রয়াল এ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির কর্মকর্তা রবার্ট ম্যাসের মতে, সবচেয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্যটি ছিল রবিবার চাঁদ ওঠার সময়। সোমবার ভোরে ডুবে যাওয়ার মুহূর্তটিও ছিল অনন্য অসাধারণ। তার ব্যাখ্যাÑ দিগন্তরেখার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে এ সময় চাঁদকে অস্বাভাবিক বড় দেখায়। সুপার মুনকে চোখের এক ধরনের বিভ্রান্তি মনে করলেও তিনি বলেন, এটি চমৎকার ঘটনা। সবসময়ই মানুষের দেখার মতো। দারুণ একটি দৃশ্য। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিকাল এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও সুপার মুন দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাশহুরুল আমিন মিলন জানান, আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন তারা। বেশ আয়োজন করেই দেখেছেন সুপার মুন। সারা দেশেই সুপার মুন দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী দুই চারদিন একই আকার ও সমপরিমাণ উজ্জ্বলতা নিয়ে আকাশে চাঁদ থাকবে বলে জানান তিনি। চলতি বছরের এটিই প্রথম ও শেষ সুপার মুন। গত বছর এটি দেখা গিয়েছিল ১২ ডিসেম্বর। রবিবারকে নাসা আগামী দুমাসের ‘সুপার মুন ট্রিলজি’র প্রথম পর্ব ঘোষণা করে। পরের দুটি দেখা যাবে ১ ও ৩১ জানুয়ারি। অবশ্য এসব তথ্য উপাত্তর বাইরে থেকে যে চাঁদ দেখা, তার কোন তুলনা হয় না। আবেগী নমরপ্রাণ বাঙালী বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে, বারান্দায় বসে সুপার মুন নয়, সেই চাঁদটিকেই দেখেছেন! এই দেখার শেষ নেই। হবে না।
×