ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আটক সৌদি শাহজাদাদের দুর্নীতির সঙ্গে খালেদা তারেকের নাম?

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

আটক সৌদি শাহজাদাদের দুর্নীতির সঙ্গে খালেদা তারেকের নাম?

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সৌদি আরবে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকজন শাহজাদা ও দায়িত্বপাপ্ত মন্ত্রীকে আটক করা হয়। এদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাদের দুর্নীতির সঙ্গে বিশ্বের আরও অনেক দেশের রাজনীতিক জড়িত। এদের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নামও এসেছে। জিয়া পরিবারের সদস্যরা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সেদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জিয়া পরিবার সৌদি আরবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এই অর্থ বিনিয়োগ করেছে। খালেদার পাশাপাশি তার বড় ছেলে তারেক জিয়া, খালেদার ভাই শামীম ইস্কান্দার, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, পিপিপি নেতা বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারি, নওয়াজ শরিফ ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি সৌদি আরবে বিনিয়োগের জন্য অর্থ দিয়েছেন। খবর দ্য ন্যাশনাল টিভি ও বাংলাদেশ প্রেস অনলাইনের। দুবাই ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল দ্য ন্যাশনালের খবরে অভিযোগ করা হয়, সৌদি আরবসহ বিশ্বের কমপক্ষে ১২ দেশে জিয়া পরিবারের ১২শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর এসব ব্যবসা থেকে জিয়া পরিবারের সদস্যরা লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মূলত এসব ব্যবসা দেখভাল করতেন। সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী কমিটির বরাত দিয়ে ওই খবরে আরও বলা হয়, সৌদি আরবের আল আরাফা শপিং কমপ্লেক্স ও ইকরা কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এবং কাতারের টিপরা কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে জিয়া পরিবারের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। ‘বাংলাদেশ প্রেসের খবরে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক ১১ শাহজাদাসহ কমপক্ষে ২০১ জনের মধ্যে ক’জন তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে বিদেশী রাষ্ট্র থেকে আসা অর্থের কথা বলেছেন। এসব অর্থ অবৈধ উপায়ে তাদের হাতে এসেছে। তবে বিদেশী অন্য কোন সূত্র থেকে এই রিপোর্টের সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভব নয়নি। আটক শাহজাদাকে জিজ্ঞাসাবাদ কালে নাকি বলেছেন, সৌদি আরবে বিনিয়োগ নিরাপদ ভেবে অনেক বিদেশী রাজনীতিক সৌদি শাহজাদা ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেন। বিভিন্ন দেশের এসব রাজনীতিকরা মূলত তাদের অবৈধ অর্থ সৌদি প্রভাবশালীদের কাছে বিনিয়োগের জন্যই গচ্ছিত রাখতেন। ওই অর্থ সৌদি প্রভাবশালীরা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেন। যারা তাদের কালো টাকা শাহজাদাদের দিতেন, তারা মাসিক ভিত্তিতে লভ্যাংশ পেতেন। শাহজাদাসহ এসব সৌদি প্রভাবশালীদের আয়ের উৎস সম্পর্কে এতকাল প্রশ্ন ওঠেনি। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। ৪ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ১১ সৌদি শাহজাদাসহ অন্তত ২০১ জন প্রভাবশালীকে আটক করা হয়। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এক হাজার ৭শ’ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এখন আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে অন্তত দু’জন নাকি বলেছেন, তাদের ব্যবসায় বাংলাদেশের জিয়া পরিবারের বাংলাদেশী টাকায় ২৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী, সৌদি শাহজাদা আল-ওয়ালিদ বিন তালাল বলেছেন, তার সম্পদের অর্ধেকই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের অবৈধ অর্থ। নিরাপদ ভেবে তারা তার কাছে বিনিয়োগের জন্য দিয়েছেন। তালাল বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তালাল নাকি আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার ছেলে তারেক জিয়া, খালেদার ভাই শামীম ইস্কান্দার, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, পিপিপি নেতা বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারি ও নওয়াজ শরিফ তার কাছে বিনিয়োগের জন্য অর্থ দিয়েছেন। তিন মাস অন্তর অন্তর তাদের বিনিয়োগের লভ্যাংশের টাকা দেয়া হয়। আল-ওয়ালিদ বিন তালাল ছাড়াও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া লতিফের কাছেও জিয়া পরিবারের বিনিয়োগ ১০ কোটি রিয়াল বা ২৩০ কোটি টাকা রয়েছে। এই টাকারও লভ্যাংশ বেগম জিয়া প্রতি ৩ মাস অন্তর সৌদি আরব থেকেই তারা গ্রহণ করেন। এছাড়া সদ্য পদচ্যুত সৌদিমন্ত্রী আদেল বিন ফিকাহর কাছে জিয়া পরিবারের সদস্যরা বিনিয়োগের জন্য অর্থ দিয়েছেন। সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ জন্যই দেশটিতে বেগম জিয়া আলাদা মর্যাদা পান। সৌদি আরবের সিকিউরিটি এ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিশ্লেষক আব্দুল্লাহ খালিদ বলেন, এ ধরনের মানি লন্ডারিং তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার। সৌদি আরবের প্রধান কৌঁসুলি শেখ সৌদ আল মোজেব বলেন, এসব দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হবে। তবে এ ধরনের দুর্নীতি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ আপাতত বেশি তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
×