ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন

জাপার কোন্দলের সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

জাপার কোন্দলের সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৯ নবেম্বর ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একজন, বিএনপির একজন এবং একজন বিদ্রোহী প্রার্থীসহ জাতীয় পার্টির দু’জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে আছে। জাপার দুই প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জন্য একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জাপার দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু দলের চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে জাপায় চলছে অন্তঃকোন্দল। জাপার এ অন্তঃকোন্দল কাজে লাগাতে পারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কারণ জাপার দলীয় কোন্দলের কারণে ভোটাররা জাপা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে, এ রকম ভাবছেন সাধারণ ভোটাররা। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে এখনও জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীদের মাঠে জোরালো প্রচারে দেখা যায়নি। কাওসার জামান বাবলার পক্ষেও বিএনপি কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে ততটা ততপর নয়। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার ৬ মাস আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রসিক মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করেন। এরপর দলের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই হুঁশিয়ারি অমান্য করে এরশাদের ভাতিজা হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই দলের দুই প্রার্থীর কারণে ভোটও ভাগ হবে বলে জাপা কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার কয়েকজন কর্মী জানান, আমরা দ্বিধায় পড়ে গেছি। জাপার মেয়র প্রার্থী দু’জন। আমরা এখন কাকে ছেড়ে কাকে ভোট দেব? তাছাড়া সাধারণ ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন। কারণ মনোনয়ন কে পেল সেটা তারা নাও চিন্তা করতে পারে। এরশাদের ভাতিজা হিসেবে তারা আসিফকেই এরশাদের প্রতিনিধি ভাবতে পারে। দুই প্রার্থীর কারণে কর্মী-সমর্থক ও ভক্তদের ভোট ভাগ হয়ে গেলে বিপক্ষের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। জাপা মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘নির্বাচনে দল থেকে আমাকে মেয়র পদে মনোনীত করা হয়েছে। জাপা নেতাকর্মী সমর্থক ও এরশাদ ভক্তরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। তারা জোরেশোরে আমার পক্ষে প্রচারে নেমে গেছে। ইনশাল্লাহ ভোটাররা লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।’ জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ বলেন, আমার বিরুদ্ধে দলের চেয়ারম্যানকে ভুল বোঝানো হয়েছে। কিন্তু মনোনয়ন আমারই প্রাপ্য ছিল। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি এরশাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এতে আমার সদস্য পদ যেতে পারে সেটা মেনে নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। তিনি বলেন, এরশাদভক্তরা তার সঙ্গে রয়েছেন। নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে এখনও মাঠে জোরালোভাবে নামেননি জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের ১৪ প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে মেয়র পদে নিজের জন্য প্রচার চালিয়েছেন। পোস্টার, ফেস্টুন টাঙ্গিয়েছেন, মিছিল মিটিং করেছেন। জোরালো জনসংযোগও করেছেন। কিন্তু সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে তাদের আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু বলেন, দল যাকেই মনোনীত করুক তার পক্ষেই আমরা কাজ করব। তবে, সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে দলীয় প্রার্থী করায় দলের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। তিনি মেয়র হওয়ার পর গত ৫ বছর দলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখেননি। দলীয় কর্মসূচীগুলোতে তেমন যাননি। দলের নেতাকর্মীদের খবর রাখেননি। তাই তার বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত উৎসাহ উদ্দীপনা নেই। মুখে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত অধিকাংশ নেতাকর্মী এবারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান সফি এবং সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই দলের সব নেতাকর্মী কাজ করছে। এখানে ব্যক্তি কোন বিষয় নয়। দলের সিদ্ধান্ত সবাই মানতে বাধ্য। এ বিষয়ে মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, দলের ভেতরের মনোমালিন্য ও ভুল বুঝাবুঝি কেটে গেছে। এখনও অনেক সময় আছে। যথাসময়ে সবাই আমার সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগ কর্মী মোয়জ্জেম হোসেন লাবলু এবং ফরহাদ হোসেন রিপন বলেন, জাপার কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ী হওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু মেয়র পদে এবারে ঝন্টুকে দলের অনেকেই মন থেকে গ্রহণ করেননি। বিশেষ করে মনোনয়ন বঞ্চিতদের কাছ থেকে সে রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কেউ মাঠে নেই। ফলে নৌকার বিজয় নিয়ে আমরা শঙ্কিত। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করেছি। নৌকাকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি নেতা সালেকুজ্জামান সালেক, আব্দুস সালাম এবং হারুনর রশীদ বলেন, বিএনপি দলীয় একক মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা। জাপার কোন্দল কাজে লাগিয়ে একটি অংশের ভোট বিএনপির পক্ষে টানা যেত। কিন্তু বাবলার পক্ষে এখনও জোরালোভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নামেনি। এর কারণ, নেতাকর্মীদের অনেকেই জেলে আছে। অনেকেই আতঙ্কে মাঠে থাকতে উৎসাহী নন। কারণ বর্তমান জালিম সরকার যে কোন অজুহাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা বলেন, জাপার দুর্গ ভেঙে এবার আমরাই জয়ী হব। নেতাকর্মীরা দুই-একদিনের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করবে। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সবাই আমার পাশে থেকে কাজ করবে। এদিকে, কাউন্সিলর পদে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তাদের আপীল শুনানি বুধবার শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ। বৃহস্পতিবার মেয়র প্রার্থীদের আপীল শুনানি শেষে রায় প্রদান করা হবে।
×