ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ সঠিক হয়নি ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ সঠিক হয়নি ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিডিআর (বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জাগপার বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সেনাবাহিনীর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। দেশের জনগণের জানার অধিকার আছে কেন সেই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি? আরও জানার অধিকার আছে ঘটনার দিন কেন গোয়েন্দা বাহিনী ব্যর্থ হলো, কেন সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেল, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করা উচিত। ফখরুল বলেন, যারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে তারাই লাভবান হয়েছে। তাই মামলার রায় নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণ সঠিক হয়নি। মির্জা ফখরুল বলেন, আজ কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেন অথচ সংবিধান প্রণয়ন হয় যেখানে সেই জাতীয় সংসদের ১৫৪ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের প্রক্রিয়াটিও গুরুতর সাংবিধানিক সঙ্কট। দাম্ভিকতা ছেড়ে সরকারকে জনগণ ও সংবিধান মেনে আলাপ-আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংসদ ভেঙ্গে এমন একটি সহায়ক সরকার দিন যারা নির্বাচনকালীন ইসিকে সহায়তা করবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবাই দল ও ব্যক্তি স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছি। অথচ বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পরিকল্পিত ও সচেতনভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা যদি সে ষড়যন্ত্র বুঝতে না পারি, তাহলে দেশকে রক্ষা করতে পারব না। জাগপার প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে আপোস করেননি। আজ যখন গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে তার মতো নেতার উপস্থিতি খুব দরকার ছিল। জাগপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক রেহেনা প্রধানের সভাপতিত্বে কাউন্সিলে আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ষড়যন্ত্র আরও জোরদার হচ্ছে। তিনি বলেন, সহায়ক কিংবা তত্ত্বাবধায়ক যে নামেই হোক আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচন আর হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করা হলে গণতান্ত্রিক সঙ্কট সমাধান হবে না। বিএনপির জনপ্রিয়তায় সরকার বেসামাল- ড. মোশাররফ ॥ বিএনপি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেক্লাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ড. মোশাররফ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যথাসময়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। তাই যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, আগামী দিনে সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি নির্বাচনে যাবে এবং জনগণ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিজয়ী করে দেখিয়ে দেবে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কৌশল করে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রেখেছিল অভিযোগ করে ড. মোশাররফ বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ২০১৪ সালের নির্বাচন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক নয়। খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করলে জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। ড. মোশাররফ বলেন, সরকার বড় গলায় ঘোষণা করেছিল, রাজনীতিতে বিএনপির অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তারা দেখেছে, খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে আসার পর রাস্তায় গণজোয়ার উঠেছিল। কক্সবাজার যাওয়ার পথে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২ নবেম্বরের সমাবেশে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ, রাজধানীতে সব গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও জনস্রোত বয়ে গিয়েছিল। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সংগঠনের নেতা জেবা খান, হেলেন জেরিন খান, রাজীয়া আলীম, পেয়ারা মোস্তফা, মতিয়া চৌধুরী বেবী, নাজমা বেগম ও মর্জিনা আখতার প্রমুখ।
×