ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ধরাছোঁয়ার বাইরে মাদক বিক্রেতারা

পাচারের কৌশল পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

পাচারের কৌশল পরিবর্তন

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে শহরের ওপর দিয়ে নানা কৌশলে ইয়াবা পাচারের ঘটনা ঘটছে। সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা পাচারকারীদের পাকড়াও করলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযানে পাচারকারীদের গ্রেফতার করার পর থানার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করেই কর্ম শেষ। পরে মামলার তদন্তকরী কর্মকর্তা আর বেশি দূর যেতে না চাওয়ার কারণে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে আইনের বাইরে থাকা মাদক বিক্রেতারা। আরও অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সোর্সের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারায় সমন্বয় না হলেই পাচারকারী বা বহনকারীরা আইনের আওতায় চলে আসে। তদন্তকারী কর্মকর্তার দুর্বল রিপোর্টের কারণে মাত্র মাস কয়েকের ব্যবধানে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু হয় ইয়াবা পাচারের ঘটনা। সিএমপির গোয়েন্দা শাখার তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজ পুলিশ বক্সের সামনে চেকপোস্ট চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি কাভার্ড ভ্যানকে থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করেই কাভার্ড ভ্যানটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ নতুন ফিশারিঘাট বাজারের কাছে কাভার্ড ভ্যানটিকে ধরতে সক্ষম হয়। পুরো কাভার্ড ভ্যান প্রথম পর্যায়ে তল্লাশি করেও কোন মাদকের অস্তিত্ব না পাওয়ায় পরে বিশেষ কৌশলে মাছের কার্টনে রাখা অবস্থা থেকে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ককসিটের বরফযুক্ত মাছ ভর্তি ১৩০টি কার্টন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলো কাভার্ড ভ্যানের চালক মাদারীপুরের সদর থানা এলাকার বেপারীবাড়ির সরোয়ার বেপারীর ছেলে মামুন বেপারী। হেলপার পরিচয়ে গাড়ির সঙ্গে থাকা ইয়াবা পাচারকারী কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা বাজার এলাকার মৃত আব্দুস সালামের দুই ছেলে মোঃ শাহাজাহান ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আরও জানা গেছে, রবিবার রাত সোয়া একটার দিকে মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) এম হুমায়ুন কবির ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) এর নেতৃত্বে¡ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ মহসীনসহ সঙ্গীয় ফোর্স কক্সবাজারের টেকনাফ হতে আসা ১টি মাছভর্তি কাভার্ড ভ্যানে অভিযান চালায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জব্দকৃত কাভার্ড ভ্যানের মালিক মামুন বেপারী জানিয়েছে, সু-কৌশলে অভিনব কায়দায় (মাদকদ্রব্য) ইয়াবা পাচারের জন্য কাভার্ড ভ্যানের ভিতরে গোপনীয় স্থান তৈরি করা হয়েছে। সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারী সদস্যরা ইয়াবা পাচারের কৌশল পরিবর্তন করে নিজেরা ২/১টি কাভার্ড ভ্যান ক্রয় করে ট্রান্সপোর্টের মালিক হিসেবে পরিচয় প্রদান করে। কাভার্ড ভ্যানগুলোর বডি তৈরি করার সময় ইয়াবা পাচার করার জন্য মিস্ত্রি দ্বারা গোপন চেম্বার তৈরি করা হয়। টেকনাফ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে কৌশলে ইয়াবা ট্যাবলেট পরিবহনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য পচনশীল দ্রব্য মাছ বহন করে। র‌্যাব সেভেনের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত ১৬ নবেম্বর কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী যাত্রীবাহী বাসযোগে ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে কক্সবাজার হতে চট্টগ্রামের দিকে আসছিল। কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জার ট্যাক এলাকার কর্ণফুলী সিএনজি ফিলিং স্টেশনের পূর্ব পাশে অভিযান চালায় র‌্যাবের সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ সময় কক্সবাজার হতে আসা একটি দেশ ট্রাভেলস এর ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ সময় ২ যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে র‌্যাব সদস্যরা রাজশাহীর পুটিয়া এলাকার দিঘলকান্দি গ্রামের সেলিম রেজার স্ত্রী ময়না বিবি ও তার সঙ্গে থাকা একই এলাকার কাজীর পাড়া গ্রামের এজাজুল হকের ছেলে বুলবুল আহম্মদের দেহ তল্লাশি করে। উদ্ধার হয় ১২ হাজার ইয়াবা। এরপর তাদের সঙ্গে থাকা একটি চেয়ারে তল্লাশি করে সুকৌলে তৈরি বক্স থেকে আরও ১৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত ১৫ নবেম্বর র‌্যাব সেভেনের স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেক এলাকায় অভিযান চালায়। চর পাথরঘাটার তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর (নতুন ব্রিজ) টোল প্লাজা এলাকায় একটি বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করে গাড়ি তল্লাশির সময় চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহন এর একটি বাসে তল্লাশি চালায়। এ সময় বাসের সুপারভাইজার ঢাকার সাভার থানা এলাকার আনন্দপুর গ্রামের মৃত হাবিব উল্লার ছেলে সহিদ মজুমদার প্রকাশ শান্তকে গ্রেফতার করে। বাসের হেলপার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এলাকার দেলুয়া গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে মোঃ আব্দুল আওয়াল প্রামানিকের দেহ তল্লাশি করে। তাদের জিন্স প্যান্টের পকেট থেকে ১ হাজার ৬শ’ ইয়াবা উদ্ধার করে। এ ছাড়াও ওই বাসের ভিতরে সুকৌশলে লুকানো অবস্থায় আরও ৭ হাজার ৪০০ ইয়াবাসহ মোট ১০ হাজার ইয়াবা ওই বাস থেকে উদ্ধার করা হয়। এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। বাসটিকেও আটক করে থানায় দেয়া হয়েছে।
×