ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের রুল

৭ মার্চ কেন জাতীয় দিবস ঘোষণা হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ নভেম্বর ২০১৭

৭ মার্চ কেন জাতীয় দিবস ঘোষণা হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক সেই দিনটিকে কেন জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে কেন বঙ্গবন্ধুর ‘তর্জনি উঁচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি ’ ভাস্কর্য নির্মাণ এবং ভাষণের স্থান চিহ্নিত করে মঞ্চ পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দেয়া হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে। এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেছে আদালত। আইনজীবী ড. বশীর আহমেদ আজই এ রিট দায়ের করেছিলেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. বশীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত ১২ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছে। সুপীমকোর্টের আইনজীবী ড. বশীর আহমেদের দায়ের করা রিটে ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি রুলে আরও দুটি বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। এর একটিতে বলা হয়: একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল যে স্থানে সে স্থানে মঞ্চ পুনঃনির্মাণ কেন করা হবে না। এছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনি উঁচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না; সেই প্রশ্নও রুলে রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, গণপূর্ত সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদেশের পর ড. বশীর আহমেদ বলেন: শুধু যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন তা নয়, এখানে পাকিস্তানবাহিনীর আত্মসমর্পণ হয়েছে, ইন্ধিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সেখানে যাতে ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকতে না পারে, সেজন্য শিশুপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করেছে। বশীর আহমেদ বলেন, ১৯৫ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউনেসকো এ ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপ্রীমকোর্টও দেশের ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছে। এ কারণে আমি রিট দায়ের করি। আদালত রুল জারি করেছে। তিনি বলেন, স্থানটি যদি শিশুপার্কেও হয়, সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। শুনানিতে বশীর আহমেদ বলেন, ১৯৫ দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপ্রীমকোর্ট দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছে। এ কারণে আমি রিট দায়ের করি। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে স্থানটিতে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। তখন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি কাজী রেজাউল হক বলেন, বললে তো অনেক কথা চলে আসে: যে মঞ্চটায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন কিংবা যে জায়গাটায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, বা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন, যেখানে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো যেন না থাকতে পারে সেজন্য সেখানে করা হলো শিশুপার্ক। এ সময় বশীর আহমেদ বলেন, আগ্রার তাজমহল সংরক্ষণে বিষয়ে তদারকি করতে ছুটির দিনে ফুলকোর্ট বসে আদেশ দিয়েছিল ভারতের আদালত। আমাদের বিষয়েও আদেশ হতে পারে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। এরপর বিচারপতি রেজাউল বলেন, ভারতে তো অফিসিয়াল সম্বোধন আছে ‘জয় হিন্দ’। আমাদের এখানে কোন সম্বোধনই তো নেই। আমাদের এখানে ছিল ‘জয় বাংলা’। এখন ‘জয় বাংলা’ বললে মনে করে রাজনৈতিক। ওয়ান পার্টি স্লোগান।
×