ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জরিপের ফল প্রভাবমুক্ত ও বাস্তবসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

জরিপের ফল প্রভাবমুক্ত ও বাস্তবসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়

যখন জাতীয় পর্যায়ে কোন জরিপভিত্তিক ফলাফল প্রদান করা হয়, তা যেন বাস্তবসম্মত হয় সে জন্য অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যানবিদ উভয়কে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি যারা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকেন তাদের সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। উপরন্তু ওই প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্বশীল পদে আছেন তারা যদি কোন অবাস্তব তথ্য-উপাত্ত গঠনে সেটি গ্রহণের পূর্বে ভাল করে যাচাই-বাছাই করতে হবে। প্রায় বিশ বছর আগে ভারতের বেসরকারী খাতে মোবাইল ফোন চালুর আগে একটি প্রতিষ্ঠানে বিদেশী টেকনিক্যাল পার্সনরা প্রায় এক বছর কাজ করে প্রতিষ্ঠানের সিইওএর কাছে যখন রিপোর্ট জমা দিলেন তখন সিইও তিনটি প্রশ্ন করলেন : ১. কত লোকের জন্য আপনারা মোবাইল ফোন চালুর ব্যবস্থা রেখেছেন? ২. কত টাকা প্রতি মিনিট কথা বলার জন্য ধরেছেন? এবং তা ট্রাঙ্কলের চেয়ে কম কিনা, ৩. তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট যদি ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে আসতে বিশ বছর লাগে তাহলে এ প্রকল্প গ্রহণের লাভ কি? পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওই বিদেশী টেকনিক্যালপার্সনদের বিদায় করেন। পরে স্বল্পদিনের মধ্যেই খেটে-খুটে সাফল্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক কর্মকা- বাস্তবায়ন এবং নর্মাল প্রফিট অর্জনের ব্যবস্থা করেন। আসলে তথ্য-উপাত্ত সব সময়ে সঠিক না হলে পলিসি লেভেলে কাজ করা কঠিন। ক’দিন আগে একটি জরিপের ফলাফলের দিকে আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এটি যেহেতু প্রাথমিকভাবে ফলাফলভিত্তিক জানানো হয়েছে বিস্তারিত রিপোর্ট যাতে রিসার্চ মেথেডোলজি থাকবে এবং কিসের ভিত্তিতে গবেষকরা এ ধরনের জরিপের কার্যক্রমে অংশ নিলেন তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা যেমন প্রশ্নযোগ্য, যারা এ জরিপের কর্মকা- দেখেছেন তারা কেন প্রশ্ন ছাড়াই জরিপের ফলটি কোন্ উদ্দেশ্যে মেনে নিলেন সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। আমরা যারা অর্থনীতির ছাত্র, তারা সব সময়ই দেখেছি- বাংলাদেশে ছদ্মবেশী বেকারত্বের হার বেশি এবং শস্য তোলার আগে কর্মসংস্থান প্রকট থাকে এ অবস্থাটি অবশ্য আশির দশকে যখন ৮০% ছিল কৃষিনির্ভর কর্মসংস্থান। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান গত সাড়ে আট বছর ধরে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার কার চলেছে- বেসরকারী খাতেরও অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে কৃষিখাতে এ দেশে কর্মসংস্থান ১৭% এর মতো যা মূলত নন-ফার্ম একটিভিটিজ বা অকৃতিম কর্মকা-ের ওপর নির্ভরশীল। যে জরিপটি আমাদের বিস্ময়কর ফলাফল উপহার দিয়েছে তা হলোÑ মৌসুমী বেকারত্ব শীতকালে বেড়ে যায় ফলে আর্থিক অসচ্ছলতা, কর্মসংস্থানের অভাব, জীবনযাত্রার মান হ্রাস পায়। যেহেতু বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও আমাদের মতো সাধারণ লোকের কাছে পৌঁছেনি। আমি মনে করি যারা এ রিপোর্ট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট তারা কতটুকু বাস্তবভিত্তিক রিপোর্ট করেছেন, গবেষক হিসেবে ঊঃযরপধষ ঈড়হংরফবৎধঃরড়হ বিবেচনায় নিয়েছেন কিনা সেটি আজ সর্বাগ্রে দেখার সময় এসেছে। আমরা সবাই জানি, যে কোন গবেষণা কর্মকা-ের পরিচালনার মূল উপায় হচ্ছে কোয়ানটেটিভ এবং কোয়ালিটিটিভ রিসার্চ। দুটো পদ্ধতিই কিন্তু একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। একটি পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর সাধারণ অবস্থায় প্রতীয়মান হয় শীতকালে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এ সময় নানা ধরনের মৎস্য, শাক-সবজি, তরিতরকারি বৃদ্ধি পায় আবার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় আগের মতো পিঠাপুলি বাড়িতে তৈরি না হওয়ায় বরং বিভিন্ন অলিগলিতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পিঠাপুলি তৈরির কাজে লেগে যায়। যেহেতু চাহিদা বাড়ে, ভোগ বাড়ে সরবরাহ বাড়ে সেহেতু কর্মসংস্থানও বাড়ে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রকৃতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য দেখা যায় বর্ষা মৌসুমে বরং দেশের প্রায় সিংহভাগ এলাকায় বন্যা, ফসলহানি, ছাড়াও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। ফলে সে সময়ে মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে না। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে। ফলে বিভিন্ন স্থানের জলাবদ্ধতা সরবরাহ সমস্যা বাড়িয়ে দেয় আর ডিস্ট্রিবিউশনারি চ্যানেলও ঠিকভাবে কাজ করে না। এ ধরনের অবস্থায় সরকারী কার্যক্রম ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সীমিত হয়ে যায়। আর বেসরকারী খাতও তখন ঠিকভাবে সহায়তা কিংবা কর্মক্ষম অনেকখানি থাকে না। ফলে বানভাসিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কর্মসংস্থানের জন্য যান। এতে যেমন ঝুঁকি থাকে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পায়। সরকারী সাহায্য অনেকখানি সহযোগিতা করে থাকে। বর্ষা মৌসুমে প্রকৃতপক্ষে কোয়ানটেটিভ এবং কোয়ালিটিটিভ গবেষণা পদ্ধতিতে মৌসুমী বেকারত্ব বাড়ে। গত সাড়ে আট বছরে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি পরিধি অনেকখানি বেড়েছে। সমস্যা হলো, যারা গবেষণার জন্য কনসালটেন্সি নেন তারা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা না করে অন্যকে দিয়ে করান। দেখা যাবে এদের সিংহভাগই হয়ত বিদেশী কোন মডেল অনুসরণ করে গবেষণা পদ্ধতি তৈরি করেছেন যা আমাদের গ্রামীণ কিংবা শহুরে অর্থনীতির চালচিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। এ ধরনের স্থূল গবেষণা যারা করেন তারা ভুলে যান যে সরকার এ সমস্ত রিপোর্ট যদি সঠিক মনে করে তবে প্রকৃতপক্ষে কর্মসংস্থানের দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন এবং দেশে কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধির হার আরও বেগবান হতে পারে। বর্তমানে যেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ৮৭% এর মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেখানে এ অপ্রতিষ্ঠানিক কাঠামোকে জরিপের আওতাভুক্ত করা হয়েছে কি-না তা জানা দরকার এবং সেটি কি কেবল ভাসাভাসিভাবে গবেষণা করা না কি গভীরভাবে অনুসন্ধানী ফলাফলের ভিত্তিতে। সমস্যা হলো এ ধরনের গবেষণা করার জন্য যারা কার্যক্রম নেন, তারা নিজেরা না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করান। আর এ সমাজ ব্যবস্থায় যেহেতু বিদেশী ডিগ্রীর সাংঘাতিক দাম সেহেতু এ ধরনের রিপোর্টে তাদের অন্তর্ভুক্তি করে বাস্তবতাবিহীন রিপোর্ট তৈরি করে সাড়ম্বরে ঘোষণা দেন। বলা হয়েছে রিপোর্টটি প্রতিটি জেলায় গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতির আকার গত সাড়ে আট বছরে অনেক বেড়েছে। সেই বৃদ্ধি পাওয়ার জেলার মধ্যেও গ্রাম, ইউনিয়ন এবং উপজেলায় সমহারে কিন্তু উন্নয়ন পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এটি মনে রাখতে হবে যে উন্নয়ন হচ্ছে একটি ধারাবাহিক প্রকৃতির অংশ বিশেষÑ গতিময়তা এবং সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কর্মকা- ঘটিয়ে থাকে। তারপরও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচীর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাস্তবত অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিতে নানা ধরনের অভ্যন্তরস্থ ও বহিঃস্থ কারণে ওঠানামা থাকবেই। বিজনেস সাইকেলে এই যে ওঠানামা তা যদি স্বল্প মাত্রার হয় মানুষের জীবনযাত্রার মানে তেমন প্রভাব না ফেলে তবে এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মাত্রাকে মোটামুটি টেকসইভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। দারিদ্র্যের পকেট হিসেবে জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে ময়মনসিংহ এবং রংপুরকে বলা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো লালমনিরহাট, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির অবস্থার সঠিক চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। নচেৎ এ ধরনের বিভ্রান্তিকর গবেষণা নীতি-নির্ধারকদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিরত রাখবে। সাউথ এশিয়ায় নারীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বহুমাত্রিক কর্মকা-ের জন্য বাংলাদেশ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। এ জন্য অবশ্যই বর্তমান সরকার প্রধান ধন্যবাদার্হ। তার অর্জন অনেক। নারীর শ্রম বৈষম্য যাতে বজায় না থাকে, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে সামনে থেকে নারীরা নেতৃত্ব দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করে জিডিপি গণনায় নারীর ক্ষমতায়নের প্রভাব যুক্ত হচ্ছে। তবে বেকারত্বের বর্তমান সংজ্ঞা পাল্টানোর বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে যে বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে সরকার বহুমুখী কর্মসূচী বহুস্তরের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিকেএসএফ পরিচালিত ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের ‘সমৃদ্ধি’ প্রকল্পটি। সারা বছর যাতে স্থায়ী কর্মসংস্থান বজায় থাকে তার জন্য এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও বেগবান করা দরকার। একজন সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমার প্রত্যাশা থাকবে সম্মানিত সংসদ সদস্যরা যাতে করে তৃণমূল পর্যায়ে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন উন্নয়ন কর্মকা-ে সংশ্লিষ্ট হন। ঘরে যারা বিভীষণ হিসেবে কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে আমাদের দেশে গিরগিটির মতো রং পাল্টানো লোকের অভাব নেই। মোশতাক-জিয়া তাদেরই পথিকৃৎ। এরা মীরজাফরÑ জাতি, সমাজ ও জনগণের শত্রু। বেসরকারী জরিপও যে সব সময়ে সঠিক তথ্য দেয় তা আসলে বিশাল প্রশ্নবোধক। সম্প্রতি বেসরকারীভাবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তারা দুটো ফ্যাক্টরকে মূল ভিত্তি ধরেই রিপোর্ট দিয়েছেন। অথচ যেটি দ্বিতীয় হয়েছে তাদের যে প্রোডাক্ট তার কোয়ালিটি এত নিচু সেটি নিজে যাচাই না করলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। সম্প্রতি দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দুজনের মৌখিক পরীক্ষায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। অর্থনীতিবিদ ড. ফরাস উদ্দীন যখন জানতে চাইলেন, এনপিভি, আইআরআর কাকে বলে বিবিএ-এমবিএএতে পড়ে এবং এমবিএএর সিজিপি ৩.৪১ তারা কিন্তু বলতে পারল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকের সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় নানা ধরনের আপত্তিকর ও দেশ স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মকা-ের খবর বের হয়। আবার এ জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কিন্তু সে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এখানে কি স্বার্থসংশ্লিষ্টতার হানি হয়নি। এ দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে স্বল্প খরচে উন্নতমানের শিক্ষা দেয়া হয়। তবে বর্তমান সরকারের বিশেষ ভূমিকার কারণেই কিন্তু অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জমিতে যাচ্ছে। ভারতে দেখেছি সাধারণ কলেজেও জমির পরিমাণ এ দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। অলিতে-গলিতে বিএনপি আমলে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলত সেটির কার্যক্রমে হ্রাস টেনে ধরা হয়েছে। আসলে জরিপটি দেখে মনে হলো ধরণী দ্বিধা হও। সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা কত সহজে কর্পোরেট কালচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে তাদের মুখপাত্র হতে পারেন। সরকারের দেশের উন্নয়নে আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু চতুর লোকেরা নানামুখী কর্মকা- পরিচালনা করে চলেছে। এ অবস্থায় জাতির সামনে অনেক শিক্ষকই নৈতিকতার মান উন্নত করতে পারছেন না। একটি বাস্তব ঘটনা বলি- একজন রিটায়ার্ড শিক্ষক একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করলেনÑ আপনার ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানের নামে অনেক টাকা খরচ করে থাকে। বহু প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ওই ভদ্রলোকের প্রশ্নের জবাবে, যিনি অভিযুক্ত তিনি মোট কত খরচ হয়েছে দেখতে দেননি। আসলে জরিপের অবস্থাও যদি এমন হয় তবে তা উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে থাকে। ইউজিসি স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরির কয়েক মাসে সরকারী একটি সংস্থা বিএনএফর ওপর গবেষণা করতে গিয়ে আশ্চর্য হতে হয়। যারা ১১২০টি পার্টনার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে সচেষ্ট তাদের কোন ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান নেই। অথচ একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সর্বাগ্রে ভিশন-মিশন, সুপারগোল, টার্গেট এবং টেকটিস প্রয়োজন। এদিকে ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে দেশের একটি বাংলা দৈনিকে জরিপের ফলাফল বিস্তারিতভাবে দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ওই জরিপের ফলাফলটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের জন্য রিয়াবেলিটি টেস্ট কার দেখা যায় যে, এটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয় কেননা ক্রোনাবেচ আলফার মান হচ্ছে ০.০১৩ যা ন্যূনতপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য হতে হলে প্রয়োজন হতো ০.৭০ বা তদুর্ধ। ওই বাংলা দৈনিক ও ইংরেজী দৈনিক-এ দেশে কর্পোরেট কালচারের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বর্তমান সরকার বিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করে যাচ্ছে। এটি কখনও দেশ-জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক সফল উদ্যোগ নিয়েছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তবে এক্ষেত্রে সুপারিশ থাকবে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য খড়পধষ ষবাবষ চষধহহরহম- এর মাধ্যমে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কর্মকা- পরিচালনা করা। স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ব্যাংকিং স্থাপন করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে এবং বর্তমানে আইটি সেক্টরে যে নীরব বিপ্লব সরকারের কারণে সাধিত হচ্ছে তাকে সংযুক্ত করে আলাদা তদারকি সংস্থার মাধ্যমে সামাজিক পুঁজি গঠন ও জনকল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে ইড়ঃঃড়স ঁঢ় অঢ়ঢ়ৎধড়পয-এর মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই দেশের উন্নয়নে নানামুখী কর্মকা- অব্যাহত রাখা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতার পরিচয় দেয়ার। তিনি প্রমাণ করে চলেছেন মানুষের উন্নয়নে তার অব্যাহত কর্মসূচী। কিন্তু এর জন্য সত্যিকার জরিপ দরকার রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ামনারের পাশবিক আচরণ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব নিয়ে। এ ব্যাপারে অবশ্যই একটি সত্যিকার নিরপেক্ষ সংস্থা দায়িত্ব নিতে পারে- চকঝঋ হতে পারে আবার হতে পারে ইওউঝ কিংবা ইটচও। এ জরিপের ফলাফল যদি প্রভাবমুক্ত হয় তবে দেশে-বিদেশে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সরকারের জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ বিশেষত প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান যুক্ত প্রকল্প অব্যাহত থাকুক। ‘সমৃদ্ধি’ কার্যক্রম বিভিন্ন ইউনিয়নে তৃণমূল পর্যায়ে নানা সংস্থার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক। বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি আর বেগবান হোক? লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট [email protected]
×