ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৮ হাজার কোটি টাকার ফুড প্রসেসিং পণ্য রফতানি বাজার তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

৮ হাজার কোটি টাকার ফুড প্রসেসিং পণ্য রফতানি বাজার তৈরির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ কৃষিভিত্তিক ফুড প্রসেসিং শিল্পের মাধ্যমে দেশে ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাজার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ শিল্প খাত উন্নয়নে আসবে বিদেশী বিনিয়োগ। ‘রূপকল্প-২১’ সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে রোডম্যাপ। লক্ষ্য উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহার এবং রফতানি বাড়ানো। এ লক্ষ্যে চলতি মাসে ঢাকায় পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক খাদ্য মেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এবার ১০০টি দেশের বিনিয়োগকারী-শিল্পোদ্যোক্তা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নাম নিবন্ধন করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার আমদানির পাশাপাশি এ শিল্পে যৌথ অথবা একক বিনিয়োগের প্রস্তাব করবেন বিদেশী উদ্যোক্তারা। পোল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা কৃষিজাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শুধু ফুড প্রসেসিং শিল্পের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য জমি দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ঋতুভেদে উৎপাদিক কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহার করা গেলে দ্রুত এ শিল্পের রফতানি বাড়ানো সম্ভব। এজন্য ফুড প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ ঘটানোর কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, প্রসেসিং শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে শীতকালীন সবজি থেকে শুরু করে বৈশাখের আম-কাঁঠালের বিশ্ব বাজার তৈরি হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন নীতিগত সহায়তা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর। এছাড়া শুল্ক ও অশুল্কজনিত যেসব সমস্যা রয়েছে তাও দূর করা প্রয়োজন। বেসরকারী খাতে এ শিল্প উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যে রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফুড প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গত বছর সরকারী উদ্যোগে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্স মনে করছে, উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা প্রদান ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে অতি দ্রুত দেশের এই সম্ভাবনাময় খাত ফুড প্রসেসিং শিল্পের বিকাশ ঘটবে। ফুড প্রসেসিং শিল্পের আওতায় বাংলার ঐহিত্য কুমিল্লার রসমালাই থেকে বগুড়ার দই, টাঙ্গাইলের চমচম এমনকি নেত্রকোনার ঐহিত্য বালিশ মিষ্টি সবই রফতানি করা সম্ভব। এছাড়া এ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশনের মতে, (বাপা), ফুড প্রসেসিং শিল্প সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমান প্রতিবছর এ শিল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ফুড প্রসেসিংপণ্য রফতানি হচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানো গেলে রূপকল্প-২১ সামনে রেখে বছরে ৮ হাজার কোটি টাকার বিশ্ববাজার তৈরি হতে পারে। সংগঠনটির সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী জনকণ্ঠকে বলেন, ভিশন-২১ সামনে রেখে এ শিল্প খাত উন্নয়নে উদ্যোক্তারা কাজ করছেন। এক্ষেত্রে সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পঞ্চমবারের মতো দেশে আন্তর্জাতিক খাদ্যমেলা শুরু হবে। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিদেশী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেয়ার পাশাপাশি মেলায় তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী করবে। একই সঙ্গে যৌথ ও একক বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে বিদেশীদের। তিনি বলেন, বিদেশী উদ্যোক্তাদের আগ্রহের বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে এখন কৃষিভিত্তিক এই শিল্পে নজর দেয়া প্রয়োজন। কৃষিভিত্তিক এই সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়ানো হলে ফুড প্রসেসিং করে সব ধরনের খাদ্যপণ্য রফতানি করা সম্ভব। এসব খাদ্যপণ্যের কদর রয়েছে প্রবাসী বাঙালীদের কাছে। এছাড়া এসব খাবার বিদেশীদের কাছেও খুব পছন্দ। ইতোমধ্যে ফুড প্রসেসিং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আরএফএল শিল্পগোষ্ঠীর ‘প্রাণ’ সামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এদের পাশাপাশি এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে স্কয়ার শিল্প গ্রুপ ও আহমেদ ফুড প্রোডাক্টস। ফুড প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে আমের আচার থেকে শুরু করে এখন মুড়ির মোয়া পর্যন্ত বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। জানা গেছে, রফতানি নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাতের তালিকায় স্থান পেয়েছে এ্যাগ্রো-প্রোডাক্টস ও এ্যাগ্রো-প্রসেসড পণ্য। এ শিল্পের বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হ্রাসকৃত সুদ হারে প্রকল্প ঋণ প্রদান করা হবে। এছাড়া আয়কর রেয়াদ প্রদান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিমানে পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বন্ড সুবিধা, পণ্যের মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগারি সুবিধা সম্প্রসারণ করা, কমপ্লায়েন্ট শিল্প স্থাপনে বিনাশুল্কে ইক্যুপমেন্ট আমদানির ব্যবস্থা করা, পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতে সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যুত, পানি, গ্যাস প্রভৃতি ইউলিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ডব্লিউটিও’র এগ্রিমেন্ট অন এগ্রিকালচারাল এবং এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিজ এ্যান্ড কাউন্টার ভেইলিং মেজারসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা বা ভর্তুকি প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পোল্যান্ড বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ॥ ফুড প্রসেসিং শিল্পে পোল্যান্ড বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ইতোমধ্যে পোল্যান্ড সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক উপমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দেশীয় উদ্যোক্তারা ফুড প্রসেসিং শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন।
×