ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে কর্মসংস্থা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দানের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

বিদেশে কর্মসংস্থা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দানের উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে। এ জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে ‘এক্টিভিটি প্লান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে এই দুই প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল পর্যন্ত এক সঙ্গে কাজ করবে। দক্ষ জনশক্তি রফতানি হলে প্রবাসী আয় বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। তাই কর্মীদের গুণগতমানের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ওপর কার্যকর পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর দেশ থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষতার অভাবে তারা অনেক কম বেতনে চাকরি করছেন। অথচ অন্য দেশের কর্মীরা দক্ষতার কারণে বেশি বেতন পাচ্ছেন। দেশের প্রায় এক কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করলেও রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে না। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে সাড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অদক্ষ জনশক্তি রফতানির কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ দিন দিন নেমে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে বিদেশী ৫ থেকে ৬ লাখ দক্ষ জনশক্তি কাজ করছেন। তারা প্রায় সমপরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু সংখ্যা বাড়ছে। কিন্ত টাকা বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যসত্ত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। তারা বিদেশে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না। এর মধ্যে ওই কর্মীর কাজ করার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। পরে বাড়তি কিছু টাকা আয়ের আশায় তারা অবৈধ হয়ে লুকিয়ে কাজ করে। পুলিশী ভয় সারাক্ষণ মাথায় নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। কেউ আবার পুলিশের হাতে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দালালদের লোভনীয় প্রস্তাবে অনেক বাংলাদেশী কোন প্রকার কাজ ছাড়াই এভাবে বিদেশ গিয়ে বিপদে পড়ছেন। আন্তর্জাতিক মানদ-ে বাংলাদেশের কর্মীদের মান অনেক নিচে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে লাখ লাখ কর্মী বিদেশ গেলেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে না। গুণগতমান ঠিক করতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারগুলো হারাতে হতে পারে। বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, একজন দক্ষ কর্মীকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে। কিন্তু সেই কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বিদেশে গিয়ে তারা ভালমানের কাজ করতে পারবে না। বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের কর্মদক্ষতা যাচাই করতে হবে। দক্ষতার বিচারে তখন অনেক অদক্ষ কর্মী বিদেশে যেতে পারতনা। একই সঙ্গে দক্ষ কর্মী বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা বাড়লে রেমিটেন্সও বাড়বে।
×