ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

কার্তিক শেষ হয়ে এলো, মানে ফুরালো হেমন্তের অর্ধেকটা। কিন্তু গরম যেন ফুরোতে চাইছে না। এবারের হেমন্তে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই নবেম্বরের এই সময়টায় এত বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। শীতের দেশ সাইবেরিয়া থেকে অবশ্য ইতোমধ্যে ঢাকার জাহাঙ্গীরনগরে পাখি আসতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার দুপুরে যখন সেই সবুজশোভিত উদার-নিবিড় প্রাঙ্গণে পৌঁছই, রোদঝলসিত গাছগাছালি দেখে মনে হচ্ছিল এখন গরমকাল চলছে। যা হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে প্রচুর পাখির আনাগোনা। এর বেশিরভাগই পরিযায়ী পাখি। সে এক মনোহর দৃশ্য। কিছু দিন যাক, ঢাকা থেকে দলে দলে লোক যাবে সেখানে পাখি দেখতে। শুরুতে একটা সুসংবাদ দেয়া যাক। ঢাকার রাস্তায় মোটর বাইক চালানো নারী তেমন একটা দেখা যায় না। এবার থেকে, মানে সামনের মাস থেকে বেশি বেশি দেখা যাবে। কারণ এবার মোটরসাইকেল চালানো পেশা হিসেবে গ্রহণ করছেন ঢাকার অনেক নারী, তারা রেজিস্ট্রেশন করছেন। জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন লেখেন জান্নাতুল মাওয়া সুইটি। আরও বেশি নারী-চালক ও নারীযাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই কলামে তার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। নারীই বাইকার, নারীই রাইডার। দেশে এই প্রথম নারীদের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হলো। যার নাম ‘পিংক স্যাম’। ঢাকার রাস্তায় ‘পাঠাও’, ‘উবার’, ‘আমার রাইড’, ‘বাহন’সহ ইত্যাদি এ্যাপসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রীসেবা অর্থাৎ রাইড শেয়ারিং সেবা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে এসব এ্যাপসের রাইড শেয়ারিং রাজধানীর পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অস্বস্তির কথা ভেবে অনেক সময় নারীরা এ সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে নানা দ্বিধায় ভোগেন। আর ঢাকা শহরের পরিবহন সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। প্রতিদিনই গণপরিবহনে নানা ভোগান্তির শিকার হন শহরের নারীরা। নারীদের সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে স্বতন্ত্র একটি রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে এসেছে শেয়ার এ মোটরসাইকেল (এসএএম বা স্যাম) নামের একটি কোম্পানি। এ এ্যাপের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত লেডি বাইকাররা সহজেই প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ‘স্যাম’ কর্তৃপক্ষ। নারীরা স্কুটি দিয়ে রাইড শেয়ার করে মাসে এ টাকা আয় ও সঙ্গে বোনাস ও ইনসেনটিভ সুবিধা পাবেন। এ আকর্ষণ রেখে নারী বাইকার রেজিস্ট্রেশন চালাচ্ছে স্যাম এ্যাপ। ফোক ফেস্ট বা লোকসঙ্গীত উৎসব বিগত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশের লোকসঙ্গীত শিল্পী স্ব স্ব দেশের লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর আগের বছর দুটিতে উৎসবে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানÑমূলত তিন দেশের লোকসঙ্গীত শিল্পীরা অংশ নেন। এবার তার বাইরে ইরান ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশের শিল্পীরা গান শোনান। বিস্তারিত সংবাদ বেরিয়েছে সংবাদপত্রে। তাই এ নিয়ে বিশদ বলার কিছু নেই। শুধু বলব, এবারও এমন কিছু দৃশ্য দেখলাম তাতে তারুণ্যের প্রাণস্পন্দন কিছুটা হলেও অনুভব করতে সমর্থ হলাম। সেটি হলো শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘাসের ওপর গোল হয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে গান উপভোগ করেছেন। আবার দল বেঁধে তারা গানের তালে তালে নেচেছেনও। কোথাও কোন বিরূপতা বিড়ম্বনা নেই। সবাই স্বাভাবিক, সংযত, উৎসবমুখর। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যে-কয়টি দলবদ্ধ পরিবেশনা ঢাকা মাতিয়েছে তার ভেতর সবার আগে নাম আসবে ইরানের ‘রাস্তাক’ ট্রুপের। ঐতিহ্যবাহী রকমারি বাদ্য সহযোগে তাদের ফোক ফিউশন এমন স্ফূর্তিসঞ্চারি যে আসনে বসা দর্শকরাও দুলেছেন তাতে। এক পর্যায়ে এক বাদক তার বাজনা থামিয়ে মঞ্চে নাচতে শুরু করেন। সত্যিই উপভোগ্য! ভাবছিলাম, সর্বসাম্প্রতিক আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান এবং তারুণ্যের পছন্দের ব্যান্ড গান নিয়েও এ ধরনের আন্তর্জাতিক উৎসব হতে পারে। মহানগরীর লাখ লাখ তরুণের সুস্থ বিনোদনের বড়ই অভাব। এ ধরনের উৎসব সেইসব তরুণকে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। তারা নিজ সংস্কৃতির সমান্তরালে ভিন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত এবং সেসব নিয়ে মাতোয়ারা হওয়ার সুযোগ পায়। উৎসবের এই আনন্দসন্ধানী ও প্রাণময়তার প্রকাশটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই চাই বিচিত্র গানের বর্ণাঢ্য আরও উৎসব। এবারের উৎসবে পরিবেশিত শতভাগ গানই কি ফোক? উৎসবটিকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করতে হলে আয়োজকদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে। তাছাড়া ব্যবস্থাপনায়, অনলাইন রেজিস্ট্রেশনসহ সার্বিক ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। শিল্পে নিবেদিত একজন আর্ট প্রমোট ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত নানা ধরনের কাজে পারদর্শিতা দেখিয়ে আসছে ‘আর্টকন’। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ‘লোকারণ্য’ শীর্ষক শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম-এর দুই-সপ্তাহব্যাপী একক শিল্প-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি দুটো কারণে। এক, ঢাকার বাইরের একজন গুণী শিল্পীর কাজ বৃহত্তর দর্শকদের সামনে নিয়ে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত এই চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর সমকালীন শিল্পকলাচর্চায় এমন কিছু অভিনবত্ব এনেছেন যা আলাদাভাবে নজর কাড়ে। মাহবুব জামাল শামীম খোলাখুলি বলেছেন, ‘শৈশবে শিল্পী এস.এম. সুলতানের শিক্ষানবিস ছিলাম। চিত্রকরই হওয়ার কথা ছিল, সে ভাবনায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্য বিভাগ আমাকে আকর্ষণ করল। চিত্রকর নয় ভাস্কর হবো বলে মন স্থির করে ফেলি, তাদের আদর যতেœ এ বিষয়েই বিকশিত হয়ে উঠি। আমি যখন চারুকলায় পড়ছিলাম তখন রাতের আঁধারে অপরাজেয় বাংলাকে আঘাত হানা হয়েছিল। গুলিস্থানে ভাস্কর আনোয়ার জাহানের সদ্যসমাপ্ত স্বাধীনতা স্মৃতি ভাস্কর্য রাতের আঁধারেই উপড়ে নেয়া হয়েছিল। তখন বাঙালীর স্বাধীনতাকেই উপড়ে ফেলার প্রচেষ্টা হয়েছিল। আমি যখন ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র হলাম খোলা আকাশের নিচে মানব রূপের ভাস্কর্য নির্মাণের কল্পনায় বিভোর থাকতাম। ভাস্কর্যের মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে সহজলভ্য পোড়া ইট ও সিমেন্ট পছন্দ করি। এই মাধ্যমে ভাস্কর্য গঠন ও নির্মাণের গবেষণায় যখন ব্যস্ত তখন শিল্পকলা ও স্বাধীনতার সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হবে এমন হুংকার ভেসে আসছিল। অবেচতনে আমার শৈশবের শিল্পগুরু এস. এম. সুলতান ও হেনরি মুর কাজ করেছে কিনা জানি না। তবে সচেতনে পিকাসোর ড্রইং আমাকে প্রভাবিত করল। মিসরীয় ভাস্কর্যের গঠন ডিটেইল আর ভারতীয় ভাস্কর্যের স্থির সমাহিত অন্তঃপ্রাণময়তায় আমার ভাস্কর্য স্টাইল গঠন হতে থাকল।’ বর্তমানে শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম শিল্পচর্চার পাশাপাশি যশোরের শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান ’চারুপীঠে’-এর অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। মৎস্য-হত্যা! এক ধরনের এ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ ধরা হয়ে থাকে কোন কোন স্থানে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ট্যাবলেট পানিতে ফেললে মাটির নিচের মাছসহ সব মাছ মারা যায়, এরপর তা পানিতে ভেসে ওঠে। আর জেলেরা তা ধরে বাজারে বিক্রি করে। অর্থাৎ জেলেদের আর পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। এরকম একটি খবর পড়েছিলাম বেশ আগে। এদেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় মাছ শুরুর দিকেই রয়েছে। সেই মাছ জল থেকেই আহরণ করে নিয়ে আসতে হয়। তবু মাছ হত্যার ব্যাপারটি, তা মৎস্য শিকারের জন্য হলেও, মানুষ সহজভাবে নিতে পারে না। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে মৎস্য হত্যার ঘটনাটি ঘটানো হয় ইচ্ছাকৃতভাবে, শত্রুতার জের হিসেবে। গ্রামে পুকুরে বিষ মিশিয়ে মাছ মারার বিষয়টি সংবাদপত্রে আসে মাঝেমধ্যে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলার সংবাদটি কিছুকাল আগে সংবেদনশীল মানুষের মন খারাপ করে দিয়েছিল শুধু মৎস্য-হত্যার কারণে নয়। ওই ঘটনায় মাছ চাষকারী সমবায় সমিতির শতাধিক দরিদ্র সদস্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। যাহোক, শহরেও যে গ্রাম্য শত্রুতার প্রতিক্রিয়ার মতো নির্মম ঘটনা ঘটে তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল গত সপ্তাহে। যে লেকের পাশ দিয়ে প্রতিদিন ঘরে ফিরি সেই লেকে দেখলাম এক মর্মান্তিক দৃশ্য। উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন লেকে চাষ করা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল শনিবার। মাছ চাষের জন্য লেকের সাবেক ইজারাদারের অভিযোগ, পানিতে বিষ ছড়িয়ে তাঁর চাষ করা মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতা জড়িত বলেও তিনি অভিযোগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, আগের দিন সন্ধ্যা থেকে লেকের পানিতে মাছের অস্বাভাবিক লাফালাফি শুরু হয়। কিছু মাছ লাফিয়ে ডাঙায় উঠে পড়ে। লেকের পাড়ে বেড়াতে আসা মানুষ সেগুলো ধরে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার প্রচুর মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। এই দৃশ্য মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কথা। রং জানাবে যানজটের ধরন ঠিক তাই। গুগল ম্যাপসে ঢাকা শহরের ম্যাপের অংশে রং দেখে বোঝা যাবে কোথায় কেমন যানজট চলছে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের ওপর নির্ভর করে ম্যাপের রং পরিবর্তন হবে। যে রাস্তায় সবুজ রং দেখাবে, সেখানে জ্যাম নেই। কমলা রঙের অর্থ হালকা জ্যাম রয়েছে। লাল রঙের অর্থ জ্যাম লেগে রয়েছে আর গাঢ় লাল রং দেখালে বোঝা যাবে ট্রাফিক গ্রিডলক হয়ে রয়েছে। গুগল ম্যাপসে গুগল ট্রাফিক ফিচারটি এখন পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয়েছে। গত শুক্রবার থেকেই ফিচারটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ফিচারের সাহায্যে ঢাকার রাস্তাগুলোর ট্রাফিকের অবস্থা রিয়েল টাইমে, অর্থাৎ যখনকার যানজট তখুনিই জানা যাচ্ছে। গুগল ম্যাপসে অনেক দিন আগেই ট্রাফিক অপশনটি যুক্ত ছিল। তবে বাংলাদেশের জন্য এ ফিচার আগে পুরোপুরি চালু হয়নি।এ ফিচার ব্যবহার করে রাজধানীর মূল রাস্তাগুলোর অবস্থা জানতে ম্যাপের মেন্যু থেকে ট্রাফিক অপশনটি চালু করতে হবে। এরপর রাস্তাগুলোর ওপরে সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রঙের কিছু রেখা দেখতে পাওয়া যাবে। অপশনটি চালু থাকা অবস্থায় ডিভাইসের নোটিফিকেশনেও কিছুক্ষণ পরপর রাস্তার গাড়ি চলাচলের আপডেট দেখা যাবে। তবে অলিগলি রাস্তার অবস্থা দেখার জন্য সেবাটি এখনও চালু করা হয়নি। যারা গুগল ম্যাপসে বাসা, কর্মস্থল ও অন্যান্য দৈনিক যাতায়াতের স্থান সংরক্ষণ করে রেখেছেন, তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে কতক্ষণ দেরি হতে পারে, তা-ও দেখাবে গুগল। এ সেবার ফলে হঠাৎ ট্রাফিক জ্যামে আটকে যাওয়ার আগেই পূর্বসতর্কতা পাওয়া যাবে। গুগলকে ধন্যবাদ। ১২ নবেম্বর ২০১৭ [email protected]
×