ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবুল খায়ের

সীমানা পেরিয়ে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

সীমানা পেরিয়ে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

৩০ অক্টোবর সোমবার বাংলাদেশের জন্য আনন্দ ও গৌরবের এক ঐতিহাসিক দিন। এইদিনে ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষ আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের (World’s Documentery Heritage) অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ভাষণটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে (World‘s Documentery Heritage) Memory of the World International Register-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ পরিতাপের বিষয় এই যে, ’৭৫-এর পর থেকে দীর্ঘকাল ধরে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক সনদ এই ভাষণটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত। স্বাধীনতাবিরোধী মহল থেকে ভাষণটিকে কটাক্ষ করে নানাবিধ অপপ্রচার অদ্যাবধি জারি আছে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের আলোকবর্তিকা হিসেবে চিহ্নিত ভাষণটিতে আদতে কী ব্যক্ত হয়েছিল? ‘রক্ত চোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া’ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সুদীর্ঘ বছরগুলো অতিক্রম করে জাতিগত নিপীড়ন থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায় বাঙালী জাতি বুক বেঁধে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ, রবিবার, রমনা-রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান)। এদিনে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ব্যক্ত করেছিলেন স্বাধীনতার অভিপ্রায়। এই ভাষণটিতে ঘনীভূত হয়ে আছে রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত বাঙালী জাতির কয়েকটি শতক। কী করে এমনটি হয়? ইতিহাসে সে প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর্যন্ত ভাষণটি লাখো-কোটিবার জনসাধারণ্যে শ্রুত হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিরাজ করছে। অথচ ‘ইতিহাস বিস্মৃত জাতি’ হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ ভাষণটির ঐতিহাসিক নিহিতার্থ বের করার জন্য যথাযথ মনোসংযোগ করেননি এবং এতদসংক্রান্ত বিষয়ে কোনরূপ গবেষণাকর্ম বা সাহিত্য সোপান গড়ে তুলবার কোনরূপ প্রচেষ্টাও অদ্যাবধি লক্ষণীয় নয়। মুদ্রিতরূপে কোন পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকেই ভাষণটির পূর্ণাঙ্গরূপ দৃশ্যমান নয়। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বই ‘সাহিত্য কণিকা’য় গদ্যাংশের ৯ নং বিষয়সূচীতে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শিরোনামে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত হলেও তা পূর্ণাঙ্গ নয়। তবে সংক্ষেপিত আকারে এবং কোন কোন জায়গায় বিকৃতভাবে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে যেটি প্রতিফলিত হয় তাতে কেবল আমাদের মননের দীনতা-নীচতাই ফুটে ওঠে। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধটি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অন্তর্নিহিত সত্য উদ্ঘাটনের প্রাথমিক প্রয়াস মাত্র। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৩ বছরে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের ধাপে ধাপে শত শহীদের রক্তস্নাত ’৫২-এর ‘ভাষার অধিকার’ থেকে ’৬৯-এর ‘সার্বজনীন ভোটাধিকার’ অর্জন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সূচিত সংগ্রামের প্রতিটি ধাপই ছিল নিয়মতান্ত্রিক তথা গণতান্ত্রিক। নিয়মতন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের আধেয়। নিয়মতন্ত্রকে উপজীব্য করে ’৬৬-তে ৬ দফা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নিয়মতন্ত্রের বাইরে একটি পদক্ষেপও নেননি। বরং বঙ্গবন্ধু ঘোষিত কর্মসূচীর মোকাবেলায় পাকিস্তানী স্বৈরশাসকগণ প্রতিবারই অগণতান্ত্রিক ষাড়যন্ত্রিক আচরণ করেছে। আর বাংলার নির্যাতিত জনসাধারণ পরিস্থিতির করুণার পাত্র হয়ে না থেকে এবংবিধ অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে আত্মদান করতে পিছপা হয়নি। ’৭০-এ ভোটাধিকার প্রয়োগের পর নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষাড়যন্ত্রিক প্রেক্ষাপটে, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের সর্বব্যাপী গণজাগরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। ভাষণটির শুরুতেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরু বাঙালী জাতির রাজনৈতিক অধিকার বারংবার ভূলুণ্ঠিত হওয়া এবং চরম নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতায় তা দমিয়ে দেয়ার পুঞ্জীভূত মনোবেদনা উপস্থাপন করে রক্তাক্ত হৃদয়ে জলদগম্ভীর স্বরে বঙ্গবন্ধু মুজিব বলেন, ‘ভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ নির্যাতিত-নিপীড়িত জনসাধারণের প্রতি সুউচ্চ আস্থা প্রকাশ করে বলছেন ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ জনসভায় আগত শ্রোতৃমন্ডলীর প্রত্যেকেই এসেছিলেন সমগ্র জাতির প্রতিনিধি হিসেবে। সভায় সমাগত মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ৬ ও ১১ দফা আন্দোলনের দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ কর্মী, সহযোদ্ধা এবং সমর্থক। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার দশ লক্ষাধিক মানুষের সমবেত সমাবেশের মূল চেতনাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। সমবেত শ্রোতৃমন্ডলীর আচরণ গণতান্ত্রিক আচরণের সর্বোচ্চ প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়। সমগ্র সমাবেশ এত নিয়মানুগ, সুশৃঙ্খল এবং সুসংগঠিত ছিল যে, মনে হয় একটি গণবিপ্লবী পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অধিবেশন চলছে। যে অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন সমগ্র জাতির এমন একজন প্রতিনিধি যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। সর্বশ্রেণীর বাঙালীর সর্বোচ্চ ভালবাসায় সিক্ত। আর তাই ভাষণের শুরুতে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন। অর্থাৎ একান্ত আপনজন। এ সম্বোধন একান্তই বাঙালীর। আপনজনের সম্মুখে ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হাজির হয়েছি’ বলার মধ্য দিয়ে সংগ্রামী জনতা এবং নেতা একসূত্রে সূত্রবদ্ধ হয়। অতঃপর ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ কী অবিশ্বাস্য আস্থা! শাসকচক্রের জটিল এক ষাড়যন্ত্রিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে জনসভায় উপস্থিত শ্রোতৃমন্ডলী পুরোপুরি জ্ঞাত এবং তারা তা সম্যক অবহিত। বক্তব্যের এ অংশটিতে নেতা এবং জনতা উভয়েই প্রতিনিয়ত সংঘটিত বাস্তবতায় সহমত পোষণ করেন। এরপর চলমান বাস্তবতায় উপনীত হওয়ার পূর্ব থেকে সংঘটিত দীর্ঘ ২৩ বছরের বাঙালীর করুণ ইতিহাসের সারাংশ উপস্থাপনে বলেন, ‘কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ২৩ বৎসরের করুণ ইতিহাস, বাংলায় অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’ এ করুণ ইতিহাসের তিনি কেবল একজন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী নন, কেবল একজন সংগঠক নন, বঙ্গবন্ধু মুজিব ছিলেন রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত মুমূর্ষু নর-নারীর অবিসংবাদিত নেতা। ফলে নেতার বীরত্বই পরিস্ফুট হয়েছে কণ্ঠে। সীমাহীন বঞ্চনা আর লাঞ্ছনার বেদনার্ত অনুভব তাঁর কণ্ঠকে বাষ্পরুদ্ধ করতে পারেনি, করেছে বজ্রের মতো কঠিন। অতঃপর দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করে ষড়যন্ত্রকারী ভুট্টো আর সেনাশাসক জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে কথোপকথন ও বিদ্যমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে স্বীয় রাজনৈতিক অবস্থান জনতার কাছে তুলে ধরে তীক্ষ্নস্বরে তির্যক কণ্ঠে বলেন, ‘কী পেলাম আমরা? আমার পয়সা দিয়ে আমরা অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী-নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে। তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু, আমরা বাঙালীরা যখনই ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’ নিদারুণ এই সত্যটি উল্লেখ করে জনতার প্রতি ৫টি নির্দেশ এবং পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের উদ্দেশে ৫টি শর্ত দিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে আসন্ন স্বাধীনতার ঘোষণাও প্রদান করেন। সংগ্রাম-বিক্ষুব্ধ জনগণের উদ্দেশে দেয়া তাঁর ৫টি নির্দেশ ছিল যথাক্রমে ১. ‘আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারি, আদালত-ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেইজন্য সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলো হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, সেমি-গবর্নমেন্ট দফতরগুলো ওয়াপদা, কোনকিছু চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এর পরে যদি বেতন দেয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর আমার অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।’ ২. ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সব কিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো। আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।’ ৩. ‘আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যতদূর পারি, তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করবো। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাতদিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছেন প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছিয়ে দেবেন। সরকারী কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হয়, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়া হলো। কেউ দেবে না।’ ৪. ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালী, নন-বেঙ্গলি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন, রেডিও-টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোন বাঙালী রেডিও স্টেশনে যাবেন না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোন বাঙালী টেলিভিশনে যাবেন না।’ ৫. ‘দুই ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নেবার পারে। কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে হলে আপনারা চালাবেন। কিন্তু যদি এদেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালীরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্।’ বাংলার মানুষের প্রতি কর্তৃত্বমূলক এই নির্দেশাবলী প্রদানের অমিতবিক্রম তেজ, আস্থা আর প্রগাঢ় আত্মবিশ্বাস তিনি অর্জন করেছিলেন দীর্ঘ সংগ্রামের অগ্নিপরীক্ষায়। গণশক্তির বলে বলীয়ান গণনায়ক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী সেনাশাসকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ১. ‘২৫ তারিখে এ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে, ওই শহীদের রক্তের উপর দিয়ে পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না।’ ২. ‘এ্যাসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম। সামরিক আইন মার্শাল’ল উইথড্র করতে হবে।’ ৩. ‘সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে।’ ৪. ‘আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ ৫. ‘তারপরে বিবেচনা করে দেখবো আমরা এ্যাসেম্বলিতে বসতে পারবো কি পারবো না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই।’ এদেশের মানুষের সে অধিকার ধারিত ছিল ৬ দফায়। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সংগ্রামী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যদি কেউ ৬ দফার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে বাংলার মানুষ তাকে জ্যান্ত সমাধিস্থ করবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও। কেননা ৬ দফা আজ আর আমার বা আওয়ামী লীগের নয়, এ আজ জাতির সম্পদে পরিণত হয়েছে।’ মুখ্যত ৩ জানুয়ারির পর থেকে ৬ মার্চের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার ধারাবাহিকতায় এটা স্বতঃস্পষ্ট যে, ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো ষড়যন্ত্র আর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বিরত রাখতে নানামুখী কলাকৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বস্তুত, ৬ দফা মানলে অখন্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকবে, অন্যথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালী জাতি ১ দফা তথা পরিপূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাবে। এটাই হয়ে উঠেছিল অনিবার্য বাস্তবতা। আমরা ভাষণটিতে লক্ষ্য করি সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ঔদার্য। যখন তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজন যদিও সে হয়, তার সে ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।’ মহান ফরাসী বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করে গিয়েছিলেন যে চিন্তাবিদ, সেই মহান চিন্তাবিদ ভলত্যেয়ারের বিখ্যাত উক্তি ‘তোমার কথা আমার বিরুদ্ধে যেতে পারে, কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষায় আমি জীবন দিতে প্রস্তুত।’ ভলত্যেয়ার কথিত ব্যক্তিক পর্যায়ের এবংবিধ কাব্যিক প্রবচনকে ছাপিয়ে আরও অনেক গভীর রাজনৈতিক-দার্শনিক প্রত্যয় ব্যক্ত হয় বঙ্গবন্ধুর উক্তিটিতে। এটি নিছক কথার ফুলঝুরি নয়, নয় শুধু প্রবচন মাত্র বক্তব্যটিতে রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃক একজন হলেও তার ‘ন্যায্য’ কথা মেনে নেয়ার অঙ্গীকার। সমগ্র ভাষণে একথাটি দার্শনিক প্রতিজ্ঞায় উন্নীত একটি প্রত্যয়। ন্যায্য ও অন্যায্যর প্রশ্ন যেখানে, সেখানে সংখ্যাগুরু কী সংখ্যালঘু তথা সংখ্যা বা পরিমাণের প্রশ্নটি মুখ্য নয়। প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে ন্যায্যতা বা বৈধতা। যা নিরুপিত বা পরিমাপিত হবে যৌক্তিকতা দিয়ে। সীমাহীন নির্যাতন, প্রবঞ্চনা আর ষড়যন্ত্রের মৃত্যু উপত্যকা থেকে বেরিয়ে এসে অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত নেতার মুখ নিঃসৃত এ উক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতান্ত্রিক ঔদার্য ও দার্শনিক মহানুভবতায় সিক্ত। নিঃসন্দেহে জাতির পিতার এ উক্তির জন্য বাঙালী হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। কেননা গণতান্ত্রিক চিন্তনের ইতিহাসে এ উক্তিটির গুরুত্ব সমধিক। ভাষণের শেষাংশ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ পুরো ভাষণটির উপসংহার। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের জাতির অবিসংবাদিত নেতার মুখ থেকে এমন উক্তি সম্ভব। আরও বহু নেতা ছিলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক শুধু নন, ছিলেন তার গুরুতুল্য অনেকেই। কিন্তু এমন মহৎ উক্তি ধারিত প্রত্যয়দীপ্ত একটি ভাষণে এরকমভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে স্বাধীনতার ঘোষণা অন্য কেউই দিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু পেরেছিলেন। কেননা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছিলেন ১৯৪৮ থেকে। এজন্যই তিনি বলেন, ‘২৩ বছরের করুণ ইতিহাস, বাংলায় অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস।’ আর এ ইতিহাসের নির্যাতিত নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিব স্বয়ং। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন আর স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস সমার্থক। শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু মুজিবই ছিলেন বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান সংগঠক। আইয়ুবের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন প্রধান নেতা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতারূপে জনমনে প্রতিষ্ঠিত হন। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৭৫% বাঙালীর সমর্থন অর্জন করে। এজন্যই জাতীয় মুক্তির আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত বাঙালী বিদ্যমান পরিস্থিতির রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, করণীয় বা স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিল কেবল বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই, অন্য কারও কাছ থেকে নয়। ’৭১-এর মার্চের শুরুর দিন থেকেই জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রতারণার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জনমনে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয় তা দমনে শাসকগোষ্ঠী চরম নিষ্ঠুরতা আর পৈশাচিকপন্থা অবলম্বন করে। ফলে শত শত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় প্রতিটি দিন। ’৭১-এর মার্চের ১ থেকে ৬ তারিখের মধ্যে সারাদেশে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় সহস্রাধিক। এমন অগ্নিগর্ভ বৈপ্লবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদীয়মান নবীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণঅধিবেশন যেন ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দান। আর সেদিনের ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত নেতার গণফরমান। সার্বিক দিক বিচারে ৭ মার্চের ভাষণটি বাঙালীর জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সারনির্যাস। ভাষণটিতে প্রতিফলিত হয়েছে অতীত এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় স্বৈরতান্ত্রিক কার্যকলাপ তথা ছলচাতুরি, হুমকি-ধমকি, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, জেল-জুলুম, হত্যা-নির্যাতন ইত্যাকার অবৈধ অগণতান্ত্রিক আচরণের বিপরীতে সুশৃঙ্খল নিয়মতান্ত্রিক বক্তব্য। পরিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকতা অক্ষুণ্ন রেখে গণতান্ত্রিক পন্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে অভিযুক্ত করার ষড়যন্ত্র ভেদ করে সুনিপুণ রাজনৈতিক কৌশলে পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের পথ কণ্টকমুক্ত করার রণনীতি এবং রণকৌশলের অপূর্ব মিথস্ক্রিয়ায় উদ্ভাসিত ভাষণটির প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য। যে স্থানে, যে সময়ে, যত মানুষের উপস্থিতিতে ভাষণটি প্রদান করা হয়েছে তার পুরো ক্যানভাসটি যেন দিগন্ত বিস্তৃত জনসমুদ্রের ঊর্মিমালা। আর এর প্রেক্ষাপটটি এক কথায় চরম উত্তেজনাকর। রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে তথা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে আসন্ন গণতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটনার্থে এরূপভাবে নিরস্ত্র মানুষের এত সুবিপুল মহাসমাবেশে এমন মহিমান্বিত মর্যাদাপূর্ণ গৌরবমন্ডিত ভাষণ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ইতিহাসে অদৃষ্টপূর্ব। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের মহান সনদ। প্রিয় মাতৃভূমির পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে স্থির-প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে প্রতিদিন স্বদেশবাসীর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ, বীর বাঙালীর মনোসংযোগে নিবেদিত ভাষণটির প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য। আর বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের উচ্চারণ যেন মেঘনাদসম। যেভাবে উৎস থেকে নদী বেরিয়ে আসে সেভাবে ভাষা বেরিয়েছে বঙ্গবন্ধুর চেতনার মর্মমূল থেকে। সুদীর্ঘ সংগ্রামের রক্ত-পিচ্ছিল পথে বঞ্চনার শিকার একটি জাতির শত-সহস্র মানব সন্তানের আত্মদানের মধ্য দিয়ে অর্জিত ৭ মার্চ। তবুও ভাষণটির ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই।’ আছে স্বজন হারানোর বেদনা ভারাক্রান্ত মন। দীর্ঘদিনের বিয়োগ-ব্যথা তৎসহ সংখ্যাগুরুর রাজনৈতিক অধিকারহীনতায় ঝলসে যাওয়া বছরগুলোর পুঞ্জিভূত শোক থেকে তৈরি হওয়া ইস্পাত-কঠিন সুদৃঢ় ঐক্য। আছে স্ফটিক-স্বচ্ছ সাবলীলতা, স্বতঃস্ফূর্ত শব্দ সঞ্চালন, সুচিন্তিত সংলাপ প্রক্ষেপণ, ইতিহাস বর্ণন, প্রবর্ধমান প্রবোধ, প্রবঞ্চিত ক্রোধ, গণচৈতন্যে প্রবিষ্ট প্রবুদ্ধ প্রবাহ, মহিমান্বিত কর্তৃত্ব, প্রমিত আত্মবিশ্বাস, প্রজ্ঞাচক্ষু, প্রজ্ঞাপক, দক্ষ কৌশলীর প্রজ্ঞানসহ আবেগের পরিমিতি ও প্রজ্বলন, প্রশান্ত সহিষ্ণুতা, জনকের অভিব্যক্তি, প্রতিজ্ঞাত প্রতিজ্ঞা, নিয়মানুগ বিনম্রতা, বজ্রকঠিন নির্দেশ, বীরভোগ্যা বসুন্ধরার সৌম্যকান্তি, সর্বংসহা ধরিত্রীর মমত্ব সর্বোপরি ব্যক্তিসত্তার অভ্যন্তরে ধূমায়িত গণসার্বভৌমত্বের জ্যোতির্ময় বহির্প্রকাশ। ইতিহাসে সমাজ বিপ্লবের যে পর্বে ‘এক সকলের তরে সকলে একের তরে’ তথা ‘নেতা জনতার তরে, জনতা নেতার তরে’ দ্বান্দ্বিকতার সূত্রে সূত্রবদ্ধ হয়,Ñ সাতই মার্চ দিবসটি বাঙালীর ইতিহাসে সেই পর্ব হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উদ্ভবের ইতিহাসে এ-এক বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত। জাতীয় আত্মবিশ্বাসে আস্থাশীল ভাষণটি বিক্ষুব্ধ জনতাকে যুদ্ধসাজে সজ্জিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলছে, ‘আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি, তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া, তুমি বাংলা ছাড়ো।’ ’৭১-এর সাতই মার্চের পর দীর্ঘ ৪৬টি বছর পেরিয়ে আজ ইউনেস্কো ঘোষিত আনন্দের সংবাদে আমরা উচ্ছ্বসিত। তবুও আমাদের দুঃখ ভারক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে, জাতির পিতার প্রতি স্বাধীন বাংলাদেশে যে অবিচার হয়েছে তা ভয়াবহ! শুধু এটুকু বলেই ইতি টানছি যে, ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষা সিলেবাসে আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ এ্যাড্রেস’ পাঠ্য ছিল। অথচ নিজ জাতির মুক্তিসংগ্রামের অমরগাথা বিধৃত রয়েছে সাতই মার্চের ঐতিহাসিক যে ভাষণটিতে তা পূর্ণাঙ্গতায়, সঠিকভাবে অদ্যাবধি স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদান নিয়ে কোনরূপ গবেষণা কর্ম পরিলক্ষিত হয় না। এটি জাতীয় ব্যর্থতা! আমাদের কোমলমতি শিশুরা মিথ্যা ইতিহাস শিখে এযাবতকাল যে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে তার অপনোদনে অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তকে মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস এবং ৭ মার্চের ভাষণের অবিকল অন্তর্ভুক্তকরণ জরুরী। অন্যথায় দেখা যাবে আমাদের আগে বহির্দেশের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে! পরিশেষে, বাঙালীর এবংবিধ পরশ্রীকাতরতাজনিত এহেন ব্যর্থতায় কেবলই মনে পড়ে সেই পুরাতন ক্ষেদোক্তি ‘বিদেশের কুকুর ধরি, স্বদেশের ঠাকুর ফেলিয়া।’ লেখক : গবেষক ও প্রকাশক [email protected]
×