ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুরাগ পরিবহন হলো সিটিং সার্ভিস

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুরাগ পরিবহন হলো সিটিং সার্ভিস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে সিটিং সার্ভিস হলো তুরাগ পরিবহন। লক্কড়ঝক্কড় সার্ভিস হিসেবে খ্যাত এই পরিবহনের বেশিরভাগ বাস বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিটিং সার্ভিস হয়ে চলতে দেখা গেছে। ভাড়া বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ। এ নিয়ে যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। বাসের স্টাফরা বলছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানির সব বাস সিটিং হয়ে চলবে! অথচ সিটিং সার্ভিসের বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের কোন জবাব মেলেনি তাদের পক্ষ থেকে। জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, তুরাগ পরিবহনের কিছু গাড়ি লোকাল, কিছু সিটিং চলার কথা। কিন্তু তা এখনই নয়; সরকারীভাবে সিটিং সার্ভিস নীতিমালা ও এর বৈধতা ঘোষণার পরই। তাই আমরা অপেক্ষায় আছি সিটিং সার্ভিস বৈধতা ঘোষণার। তিনি বলেন, এখন নীতিমালায় নেই সিটিং সার্ভিস হিসেবে বাস চালানোর। যারা চালাচ্ছেন তাদের কোন বৈধতা নেই বলে জানান তিনি। তুরাগ পরিবহনের যাত্রী মিনহাজ জানালেন, হঠাৎই সিটিং সার্ভিস হয়ে বাসগুলো চলাচল করতে শুরু করেছে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়ায় বাসে ওঠা ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি বলেন, লোকাল বাসে বাসাব থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত পাঁচ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। দুই কিলোমিটার দূরত্বে এত ভাড়া কেন নেয়া হচ্ছে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। একই পরিবহনের যাত্রী আলাল জানালেন, সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত আগে ১৫টাকা ভাড়া নেয়া হলেও এখন ২৫টাকা করা হয়েছে। পরিবহন মালিকদের এমন অরাজকতা আর কতদিন চলবে। তিনি জানান, সকাল থেকে বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় বাসের লোকজনের সঙ্গে যাত্রীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। অথচ পুলিশ কিংবা বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে যেন দেখার কেউ নেই। সরেজমিন মালিবাগ, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, তুরাগ পরিবহনের অনেক বাস সিটিং হয়ে চলাচল করছে। আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। অথচ যাত্রী সুবিধা বাড়েনি একভাগও। বাসের আসনগুলো অপরিচ্ছন্ন, ভাঙ্গা। গাড়ির ভেতরে দুর্গন্ধ। অনেক বাসের গ্লাস পর্যন্ত নেই। বেপরোয়া গতি। এক বাসের সঙ্গে অন্য বাসের সংঘর্ষ। তাছাড়া সব স্টপেজেই থামছে বাসগুলো। তবুও সিটিং! যাত্রীদের প্রশ্ন, এটি কেমন সিটিং সার্ভিস। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো এই কোম্পানির কিছু চালক দেখা গেছে একেবারেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অর্থাৎ এমন চালকও পাওয়া গেছে যাদের বয়স ১৮ হয়নি। অনেকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। তবুও তারা চালকের আসনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তুরাগ সার্ভিসের একাধিক চালক ও কন্ডাক্টর জানিয়েছেন, মালিক সমিতির নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সিটিং সার্ভিস চালু করেছি। মূলত সরকারের পক্ষ থেকে মহানগরীতে সিটিং সার্ভিসের বৈধতা দেয়া হচ্ছে এমন খবর রয়েছে। তাই মালিকরা বেশি মুনাফা লাভের আশায় লোকাল বাসগুলোর কোন রকম সুবিধা নিশ্চিত না করে রাতারাতি সিটিং সার্ভিস করছে। তারা জানান, তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির দেড় শতাধিক বাস রয়েছে। যা টঙ্গী থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে যাতায়াত করে। এর মধ্যে ৫০টির বেশি বাস সিটিং করা হয়েছে। প্রায় এক বছর আগেও মালিকরা তুরাগ বাস সিটিং করে চালানো শুরু করে। তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বন্ধ করা হয়েছিল। গত ২৫ অক্টোবর সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যাত্রী পরিবহনে সিটিং সার্ভিস বাসের বিষয়ে গঠিত কমিটি আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনের সুপারিশমালা পর্যালোচনা করে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। চলতি বছরের গত মে মাসের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর মালিক সমিতির উদ্যোগে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বাস বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ ও কর্মবিরতির প্রেক্ষিতে সিটিং সার্ভিসের নামে চলাচলকারী পরিবহনগুলোকে আরও তিন মাস সময় দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৮ সদস্যবিশিষ্ট সুপারিশ কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। জনস্বার্থে সিটিং সার্ভিস বহাল রাখা যাবে, নাকি বন্ধ করা হবে এসব বিষয় খতিয়ে দেখে তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। গত ১৫ অক্টোবর এ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে ২৬ দফা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে কমিটি। এসবের মধ্যে রয়েছে- সিটিং বাসের রং হবে লোকালের চেয়ে ভিন্ন, স্টপেজ সংখ্যা হবে লোকালের চেয়ে কম, কোন্ রুটে কতসংখ্যক ‘সিটিং বাস’ চলবে তা নির্ধারণ করবে সরকার, অনুমতি ছাড়া লোকাল বাসকে সিটিংয়ে রূপান্তর করা যাবে না, সিটিং বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না ইত্যাদি। এসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশের ভিত্তিতে এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানান সেতুমন্ত্রী। যদিও কমিটি ভাড়া নির্ধারণ করেনি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে মন্ত্রণালয়। এই সুযোগে রাতারাতি লোকাল বাস সিটিং করার প্রতিযোগিতা চলছে রাজধানীজুড়ে।
×