ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যার পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি ॥ আদালতে ঘাতকদের স্বীকারোক্তি

কুমিল্লায় ৩ সহপাঠীর হাতে স্কুলছাত্র খুন, পাঁচদিন পর লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০১৭

কুমিল্লায় ৩ সহপাঠীর হাতে স্কুলছাত্র খুন, পাঁচদিন পর লাশ উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৯ নবেম্বর ॥ সহপাঠীদের হাতে খুন হয়েছে জাহিদ হাসান নামের কুমিল্লার এক স্কুলছাত্র। পুলিশ ৫ দিন পর বুধবার রাতে জেলার হোমনা উপজেলার দুলালপুর চন্দ্রমনি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। নিহত জাহিদ ওই দুলালপুর চন্দ্রমনি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং হোমনা উপজেলার সাফলেজী গ্রামের ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নিহত জিহাদের স্কুলের ২ ছাত্রসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত খাইরুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন ও জিদাদসহ ৩ ঘাতক জাহিদ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় হোমনা উপজেলার দুলালপুর বাজার থেকে মায়ের জন্য ওষুধ আনতে জাহিদ বাড়ি থেকে বের হলে তাকে কৌশলে বাজারের একটি ঘরে ডেকে নিয়ে যায় ওই ৩ ঘাতক। পরে তাকে সেখানেই শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ তারই স্কুলের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়। রাতে সে বাড়ি না ফেরায় তার বাবা হোমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে একটি মোবাইল ফোনের নম্বর থেকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জাহিদকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তার চাচা মাসুদ রানার কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ঘাতকরা। খবর পেয়ে মোবাইল ফোনের নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামে। পুলিশ বুধবার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে হোমনা উপজেলার ভিটিকালমিনা গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমানের ছেলে স্থানীয় মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মোঃ জিহাদ হোসেন (১৫), একই গ্রামের মোঃ হাফেজ মিয়ার ছেলে ও দুলালপুর চন্দ্রমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ এমদাদ হোসেন (১৬) ও মুরাদনগর উপজেলার মটকিরচর ও বর্তমান হোমনা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাঘা বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ শাহজালাল মিয়ার ছেলে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র খাইরুল ইসলামকে (১৫) গ্রেফতার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জাহিদ হাসানকে হত্যা করে লাশ স্কুলের সেপ্টিক ট্যাঙ্কে গুম করার বিষয়টি স্বীকার করে। ঘাতকদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ বুধবার রাত ১১টার দিকে ওই স্কুলের সেপ্টিক ট্যাঙ্ক থেকে জাহিদ হাসানের লাশ উদ্ধার করে। এদিকে হোমনা থানার ওসি গোলাম রসুল আহমেদ নিজামী জানান, গ্রেফত্রকৃত ৩ ঘাতক খাইরুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন ও জিদাদ পরস্পর বন্ধু। তারা অপর একজন থেকে ১০ হাজার টাকা হাওলাত করে বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ায়। পাওনাদার তাদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তারা জাহিদ হাসানকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশে অপহরণ করে। অপহরণের পর ঘটনাটি প্রকাশের ভয়ে জাহিদকে তারা তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করে। এরপর জাহিদের চাচা মাসুদ রানার কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তিনি আরও জানান, ওই খুনের নেপথ্যে মুক্তিপণ ছাড়া অন্য কোন বিষয় আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
×