ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিন্ন ভিসা পদ্ধতি ও অবাধ বাণিজ্য চায় সিপিএ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৭ নভেম্বর ২০১৭

অভিন্ন ভিসা পদ্ধতি ও অবাধ বাণিজ্য চায় সিপিএ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো কমনওয়েলথ দেশগুলোতে অভিন্ন ভিসা পদ্ধতি ও অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা চায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)। সিপিএ’র ৬৩তম সম্মেলনের ষষ্ঠ দিন সোমবার অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় এই সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। অন্যদিকে সিপিএ চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই সম্মেলন থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএ সম্মেলন-২০১৭’র ষষ্ঠ দিনে ৪টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গ্রুপ-‘বি’ তে ‘কমনওয়েলথ দেশসমূহের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য সংসদ সদস্যদের ভূমিকা : বাণিজ্য, ভিসা সমস্যা, ভ্রমণ ও ট্যারিফ বিধিনিষেধ’ শীর্ষক কর্মশালায় ইইউর আদলে সিপিএভুক্ত দেশের মধ্যে ভিসা পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়। কানাডার প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রা মেন্ডেজের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মূল আলোচক ছিলেন নাইজিরিয়ান সিনেটর ইকে ই বেরেমাদু। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাজ্যের লর্ড ডেভিস ও গায়ানার জোসেফ এফ হারমান। আলোচনায় তারা সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির কাছে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। এসবের মধ্যে আছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশে ভিসা পদ্ধতি, ট্যারিফ বিধিনিষেধ সহজীকরণ, বাণিজ্য উন্নয়ন এবং আগ্রহী সবাই যাতে এক হয়ে কাজ করে সেজন্য প্রস্তাব পেশ করেন তারা। সেমিনারে তারা বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে এক হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। এজন্যই সিপিএভুক্ত দেশের মধ্যে ভাব এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে হবে। ভিসা পদ্ধতিও সহজ করতে হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশে এই সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ- স্পীকার ॥ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএ চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সম্মেলনে ‘শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজে অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে যুব সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। তারা সিপিএ’র ৯টি অঞ্চল থেকে আসা ৯ সংসদ সদস্যের কাছে প্রশ্ন ও বক্তব্য উত্থাপন করবেন। ওই বৈঠকের আলোচনার ওপর একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। যা সিপিএ’র নির্ধারিত কর্মশালায় উত্থাপন করা হবে। কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে সিপিএ। স্পীকার বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ, সম্মেলনে ইয়ুথ রাউন্ড টেবিল ছাড়াও ৮টি নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক কর্মশালা হবে। যেখানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, জলবায়ু পরিবর্তন, পার্লামেন্টারি প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রসিডিউর এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিটি কর্মশালা ও সভার সিদ্ধান্ত ও সুপারিশগুলো আজ মঙ্গলবার সাধারণ অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে। রাজধানী ঢাকায় গত ১ নবেম্বর থেকে এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে সিপিএ’র ৫২ সদস্য দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের ৫৬ স্পীকার, ২৩ ডেপুটি স্পীকারসহ ৬ শতাধিক সংসদ সদস্য অংশ নিচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তায় গড়ে তোলা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে বিমানবন্দর থেকে সংসদ ভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) ও তার আশপাশ এলাকা। করা হয়েছে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা। ৮ নবেম্বর এই সম্মেলন শেষ হবে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে রাজনীতিতে অধিক নারী নেতৃত্বের প্রয়োজন- এমিলি ॥ সিপিএ সম্মেলনের ষষ্ঠতম দিনে সাধারণ আলোচনাকালে কমনওয়েলথ ওম্যান পার্লামেন্টারিয়ান্সের সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি বলেন, যদি আমরা বিশ্বের সাধারণ পরিবর্তন দেখতে চাই তবে অবশ্যই অধিক নারী নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে রাজনীতিতে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে সারাবিশ্বে জনমত সৃষ্টি করতে পারি, এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতিতে নারীকে অধিক সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশও সম্মেলনে তুলে ধরেন জাতীয় সংসদের এই নারী সংসদ সদস্য। কর্মশালায় সিপিএ কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে নারী সংসদীয় দলকে ক্ষমতায়িত করার মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল বিল প্রণয়ন এবং জেন্ডার টেকসই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সংসদে উপস্থাপনসহ কমনওয়েলথভুক্ত সংসদগুলো একটি কাঠামো নিশ্চিত করবে যা ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা, প্রত্যেক অঞ্চলে তা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক সম্মেলনে সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার সুপারিশ করা হয়। কর্মশালায় সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি ছাড়াও দাতো ড. নারাইনি এমপি, মুতিমুরা জেনো এমপি, জেমস নরমেন এমএসপি, তানভির ইমাম এমপি, ডাঃ দিপু মনি এমপি, অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ এমপি, হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার এমপি, মঈন উদ্দীন খান বাদল এমপি, আলেকজান্দ্রা মেন্ডিস এমপি, ড্রেক থমাস এমএলসি এমপি ও লিম ব্লো চুয়ান এমপি অংশগ্রহণ করেন।
×