ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ ফুটবল, বসুন্ধরা কিংস ২-১ অগ্রণী ব্যাংক

এক ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ নভেম্বর ২০১৭

এক ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শনিবার বিকেলে ঢাকার কমলাপুরের শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ঢুকেই স্তম্ভিত হতে হলো। গ্যালারিতে কমপক্ষে দশ হাজার দর্শক। অথচ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এর অর্ধেকও হয় না। যাহোক ব্যান্ডপার্টির বাদ্য-বাজনা... ফুটবল অনুরাগীদের গগনবিদারী চিৎকার-স্লোগান... সবমিলিয়ে যেন মেলার মতো উৎসবমুখর এক পরিবেশ। এমন পরিবেশেই স্টেডিয়ামের টার্ফে মার্সেল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ ফুটবলের সপ্তদশ রাউন্ডের প্রথম ও প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল বসুন্ধরা কিংস বনাম অগ্রণী ব্যাংক স্পোর্টস ক্লাব লিমিটেড। কিছুক্ষণের মধ্যে বোঝা গেল গ্যালারির দর্শকদের প্রায় শতভাগই বসুন্ধরা কিংসের দর্শক। তাদের আনন্দ-উৎসবের হেতুও আছে বৈকি। এই ম্যাচে জিতলেই তারা শিরোপা জেতা নিশ্চিত করে ফেলবে। তাও আবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই। কাজেই শিরোপা জেতার ক্ষণটাকে স্মরণীয় করে রাখতেই তাদের মাঠে আগমন। তাদের উপস্থিতি ও প্রত্যাশা ব্যর্থ হতে দেয়নি বসুন্ধরা কিংস। এক গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত খেলে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। নিজেদের সপ্তদশ ম্যাচে এটা বসুন্ধরার দশম জয়। তাদের পয়েন্ট ৩৫। আগে থেকেই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নোফেল (নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুর) স্পোর্টিং ক্লাবের সংগ্রহ ১৬ ম্যাচে ২৮। পক্ষান্তরে ১৭ ম্যাচে এটা অগ্রণী ব্যাংকের অষ্টম হার। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে নবম স্থানে (১০ দলের মধ্যে)। অথচ লীগের প্রথম লেগে এই বসুন্ধরাকেই রুখে দেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল অগ্রণী ব্যাংক (০-০)। ম্যাচে বসুন্ধরা জিতলেও তারা আরও বেশি ব্যবধানে জিততে পারতো। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের উপর্যুপরি বিস্ময়কর ব্যর্থতায় গোল মিসের মহড়া দেয় তারা। প্রথমার্ধে অবশ্য উভয়দলই সমানতালে খেলে। তবে সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউই। বিরতির সময় দেখা গেল প্রিমিয়ার লীগের দল রহমতগঞ্জের তারকা কোচ কামাল বাবুকে মাঠে নেমে বসুন্ধরা কিংসের কিছু ফুটবলারকে কিছু দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। জানা গেল, তিনি বসুন্ধরা কিংসের উপদেষ্টা কোচ। বিরতির পর উভয়দলই আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তো দুই মিনিটের মধ্যেই তিনটি গোল প্রচেষ্টা মিস হয় বসুন্ধরার। তাদের এক ফরোয়ার্ড ওপেন নেট পেয়ে বল পোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। ডি-বক্সের ভেতর দলের প্রধান ও অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের বাঁ পায়ের গড়ানো প্লেসিং শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। গোল তো বসুন্ধরা পায়-ই নি বরং উল্টো কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ৬৩ মিনিটে গোল খেয়ে বসে। গোল করেন আমির হাকিম (১-০)। হতাশ হয়ে পড়ে বসুন্ধরার সমর্থকরা। থেমে যায় তাদের বাদ্য-বাজনা ও উল্লাস। কাঞ্চন গোল মিস করে অনুশোচনায় ভুগছিলেন। অবশেষে ৬৮ মিনিটে গোল করে গোল মিসের সেই ‘পাপে’র প্রায়শ্চিত্ত করেন। ফ্রি কিক পায় বসুন্ধরা। সেই ফ্রি কিকের চলতি বল ডান পায়ে লাগিয়েই গোলরক্ষক শামীম হোসেনকে হতভম্ব করে বল জালে পাঠান কাঞ্চন (১-১)। ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে পায় বসুন্ধরা ফ্যানরা। আবারও দ্বিগুণ উৎসাহে শুরু হয় তাদের বাজনা ও উল্লাস। তাদের উৎসাহকে কাজে লাগিয়েই আবারও বসুন্ধরার গোল। ম্যাচের ৮২ মিনিটে বাঁপ্রান্ত দিয়ে আরিফ হোসেন বল নিয়ে যে ক্রস করেন তা কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত ফিনিশ করেন আবারও সেই কাঞ্চন (২-১)। লীগে এটা তার ব্যক্তিগত একাদশ গোল যা সর্বোচ্চ। অগ্রণী ব্যাংক চেষ্টা করেও সমতায় ফিরতে পারেনি। খেলা শেষ হলে বসুন্ধরার সমর্থকরা মাঠে ঢুকে পড়ে বিশাল দলীয় পতাকা নিয়ে। এদিকে জয়ের নায়ক কাঞ্চনকে কাঁধে নিয়ে ল্যাপ অব অনার দিচ্ছে তার সতীর্থরা।
×