ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সৌম্য সালেক

ছোট কাগজ ॥ ঘুংঘুর

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ নভেম্বর ২০১৭

ছোট কাগজ ॥ ঘুংঘুর

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহর থেকে রালফ ওয়ালডো এমারসন ও মারগারেট ফুলারের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘দি ডায়াল’ নামের একটি ম্যাগাজিন। সাহিত্যের ইতিহাস ১৮৪০-৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এ কাগজটিকেই লিটল ম্যাগাজিনের প্রথম স্মারক বলে বিবেচনা করে। ছোট কাগজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- নতুনের উদ্ভাবন। এই নতুনত্ব কেবল চিন্তার ক্ষেত্রে নয় ভাষার আঙ্গিক এবং নতুন লেখকের অভ্যর্থনায় সমৃদ্ধ। আমরা সেই কাগজগুলোকেই কেবল সাহিত্যেই ইতিহাসে পাই সেগুলো নতুন চিন্তা ও ভাষা-ভাবনায় সমৃদ্ধ ছিল। বাংলা ছোট কাগজের দিকে তাকালে সহজেই আমরা দুটি কাগজের কথা ভাবতে পারি; একটি প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’-১৯১৪ এবং অন্যটি দীনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদিত ‘কল্লোল-১৯২৩’। এ কাগজ দুটোর প্রথমটির বাংলা গদ্যের ভাষিক বিবর্তনের অন্যতম কারিগর এবং দ্বিতীয়টি তারুণ্যের দুর্বার মন্ত্রে একটি নির্দিষ্ট গ-ি থেকে বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতার নতুন পথে অগ্রবর্তী করেছে ঘুংঘুর হুমায়ুন কবির- এর সম্পাদনায় ২০১৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথম প্রকাশ পায়। চারবছরে ঘুংঘুরের মোট দশটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। তবে কাগজটির নতুনত্বের যে দিকটি বোদ্ধা মহলের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে তা হলো- এটি পৃথিবীর বিখ্যাত সহ বইমেলা উপলক্ষে এর সংখ্যা প্রকাশ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কাগজটি নিউইয়র্ক, লন্ডন, কলকাতা, ফ্রাঙ্কফুট এবং অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। পৃথিবীর বড় বইমেলাগুলোতে প্রকাশিত হয়ে ঘুংঘুর বাংলা ভাষাকে ভিনভাষীদের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ঘুংঘুরের প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদক হুমায়ুন কবির একজন অতিথি সম্পাদকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানরত বাংলাভাষীদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ ও সঙ্কলন করেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি প্রক্রিয়া। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে ঘুংঘুরের সংখ্যা ল্যাটিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশ থেকেও প্রকাশিত হবে। ঘুংঘুরের চলতি সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ-ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা থেকে। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, অনুবাদ, ছড়া ও ভ্রমণ বিষয়ক গদ্য রচনার সমন্বয়ে ১৯০ পৃষ্ঠার এটি একটি চমৎকার সংখ্যা। ‘বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন’ শীর্ষ নামে ঝরঝরে গদ্যে এ সংখ্যার প্রথম প্রবন্ধটি লিখেছেন; আবু দায়েন। রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে দারুণ বিশ্লেষণে প্রবন্ধ লিখেছেন আবু সায়ীদ ফিরোজ। পত্রভুক্ত কবিতা বিষয়ক দুটি প্রবন্ধ লিখেছেন যথাক্রমে- খায়রুল আনাম এবং উদয় শংকর দুর্জয়। চলতি সংখ্যায় মোট ত্রিশজনের কবিতা ঠাঁই পেয়েছে- তাদের মধ্যে: তমিজ উদদীন লোদী, জাহিদুর রহিম, মোখলেসুর রহমান, গিরীশ গৈরিক, পলিয়ার ওয়াহিদ, শঙ্খচূড় ইমাম, আলী রিয়াজ, সুজিত মান্না, মেমিন মেহেদী, তৈমুর খান, সাফিনা আক্তার, অঞ্জন আচার্য, সাকার মুস্তাফা, কায়সার হেলাল এবং সুমন মাহমুদ উল্লেখযোগ্য। এ সংখ্যায় মোট এগার জনের গল্পে ছাপা হয়েছে তাদের মধ্যে - গোলাম মোস্তফা অভি, মেহেদী ধ্রুব, কাজী লাবণ্য, টিপু সুলতান, লতিফ জোয়ার্দার, রহিমা আক্তার মৌ এবং মুনতাহিনা মুন উল্লেখযোগ্য। একজোড়া গল্প অনুবাদ করেছেন ফজল হাসান এবং গুচ্ছ কবিতা অনুবাদ করেছে মাইনুল ইসলাম মানিক ও রওশন হাসান। সংখ্যাটিতে ছড়া লিখেছেন- শামীম খান যবরাজ এবং শাহানারা ঝরনা। একমাত্র ভ্রমণ গদ্যটি লিখেছেন সঞ্জয় দে। ঘুংঘুরের প্রতিটি সংখ্যা সযত্নে প্রকাশের ব্যাপারে সম্পাদক খুবই আন্তরিত আর এ বিষয়ে তার সঙ্গে সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন কবি চৌধুরী। চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন ভারতীয় শিল্পী মৌমিতা ভট্টাচার্য। আমরা আশা করি, বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী জানান দেবার মহান ব্রতে ছোট কাগজ ঘুংঘুর আরও বেগবান হবে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ কাগজটিকে বাংলাভাষার একটি আন্তর্জাতিক মুখপত্র রূপে প্রতিষ্ঠা করতে আপ্রাণ লেগে থাকবেন।
×