ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘ চাপ অব্যাহত রেখেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জাতিসংঘ চাপ অব্যাহত রেখেছে

জাতিসংঘ প্রতিনিধি ওয়াটকিন্স বললেন কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ আন্তরিক। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কট দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বারিধারায় হোটেল এসকট প্লেসে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি. ওয়াটকিন্স এসব কথা বলেন। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে তিন বছর জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ছিল তার শেষ কর্ম দিবস। এই দিন ডিক্যাব টক’য়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ওয়াটকিন্স। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র বুধবার অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক নয়। মিয়ানমারের এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশ আন্তরিক। বাংলাদেশ এই সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট বলে তিনি মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ কি ব্যর্থ হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এটি সত্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনবার আলোচনায় বসলেও একবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রেজ্যুলেশন দিতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ দিতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘের এই আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, বাংলাদেশ একটি চমৎকার ভাইব্রেন্ট সমাজ। সাধারণ মানুষজন নানা সঙ্কটে পড়লে জাতিসংঘ সামান্যই করতে পারে। কিন্তু তারা নিজের চেষ্টায় এদেশে দাঁড়িয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট রাতারাতি সমাধান হবে না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা শুধু রাখাইন নয়, গোটা মিয়ানমারের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে এ সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে। রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন. রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশ আলোচনা চালাচ্ছে। চার দশক ধরে মিয়ানমারে জাতিসংঘ কাজ করছে। কিন্তু ছয় মাস রাখাইনে জাতিসংঘ কাজ করতে পারেনি। আমরা সেখানে প্রবেশের দাবি জানিয়ে আসছি। রবার্ট ডি. ওয়াটকিন্স বলেন, জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িতে (মিয়ানমার) ফেরত যাক। শুধু মিয়ানমারের যে কোন এলাকায় ফিরলে হবে না। তাদের বাড়িঘর তৈরি করে দিতে হবে। তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলা জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। দুই মাসে ৭ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে এসেছে। তাদের মানবিক আশ্রয় দিয়ে সরকার ভাল কাজ করছে। তবে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী স্বীকৃতি দেবে কিনা সেটা বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। এছাড়া বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে বাধ্য নয় বলেও জানান। কেননা বাংলাদেশ জাতিসংঘ শরণার্থী অনুচ্ছেদে স্বাক্ষর করেনি। এক প্রশ্নের জবাবে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে এই আশা করি। সব কিছুই ইতিবাচক চলছে। জাতিসংঘ বিশ্বাস করে সম্পূর্ণ কার্যকরী গণতন্ত্রই বিশ্বের জন্য ভাল। এক প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় লোকদের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এত বিপুল সংখ্যক লোকের আগমনের কারণে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। সে কারণে সকলের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের পাঁচ ভেটো সদস্যদের কারণে সংস্থাটির মধ্যেই গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। বাকি প্রায় দুইশ সদস্যের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। সে কারণে জাতিসংঘকে সংস্কার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, জাতিসংঘ তার নিজস্ব চার্টার মেনে চলে। সংস্থাটির নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। তার ভিত্তিতেই জাতিসংঘ পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই সংস্কার করতে হলে সকলের মতামত নিয়েই তো করতে হবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমার তিনবছরের দায়িত্ব পালনে আমি দেখেছি নিরাপত্তা বাহিনী উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল তারা সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছে।
×