ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রণদা প্রসাদ সাহা হত্যার অভিযোগে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ নভেম্বর ২০১৭

রণদা প্রসাদ সাহা হত্যার অভিযোগে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহার হত্যাকা-ের অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মোঃ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। মাহবুবুরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যাসহ তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছে। এটি হলো তদন্ত সংস্থার ৫৪তম প্রতিবেদন। বৃহস্পতিবার ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। মামলাটি তদন্ত করেছেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এ তদন্ত কর্মকর্তা জানান। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, তদন্তকালে ৬০ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে এবং মোট ১০০ পাতার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চার ভলিউমে ৩৮০ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তীিন হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি। মাহবুবুর রহমান এক সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি নির্দলীয়ভাবে তিন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন। গত বছরের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে গত নবেম্বরে মাহবুবুরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় অপরাধ সংঘটন করে। মানবহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। তিনি আরপি সাহা নামেও সমধিক পরিচিত। রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। ওই বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।
×