ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে ৭৬ হাজীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

কেশবপুরে ৭৬ হাজীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ৩০ অক্টোবর ॥ এবারের হজে কেশবপুরের ৭৬ জন হাজীর সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ করা হয়েছে। দফায় দফায় হাজীদের কাছ থেকে থাকা, খাওয়া ও চলাচলের জন্য আলাদা টাকা নিয়েও হাজীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। কেশবপুরের ৭৬ জন হাজী প্রতারক মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে প্রথমে সৌদিতে বাংলাদেশ হজ কাউন্সিলর এবং দেশে ফিরে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী হাজীরা কেশবপুরের মোয়াল্লেম বা হজপ্রতিনিধি মান্নানের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭ লাখ টাকা আত্মসাত ও হাজীদের নানাভাবে হয়রানির বিচার দাবি করেছেন। গত বছর উক্ত হাজীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও ভুয়া হজপ্রতিনিধি মান্নান হাজীদের নিয়ে যায়নি। এবার নিয়ে গেলেও হাজীদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে হাজীরা অভিযোগে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ৭৬ হাজী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে হাজীরা অভিযোগ করেছেন, কেশবপুর উপজেলার কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত পাচু গাজীর পুত্র আব্দুল মান্নান ভুয়া মোয়াল্লেম সেজে ২০১৬ সালে পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য চুক্তি মোতাবেক তাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু তার গাফিলাতিতে গত বছর তাদের হজব্রত পালন করাতে নিয়ে যায়নি। এ বছর (১৭ সালে) হজ এজেন্সির চুক্তি মোতাবেক প্রথমে ২ লাখ ৩৫ হাজার, তারপর ২ লাখ ৪০ হাজার, তারপর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর কেশবপুর শাহী মসজিদে এক হজ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সৌদি আরবে (মক্কায়) ফেতরা বাসার পরিবর্তে স্থায়ী এক বাসায় সকলকে রাখা হবে এবং হেরেম শরীফ থেকে ওই বাসার দূরত্ব হবে ৭শ’ থেকে ৮শ’ মিটারের মধ্যে বলে কথা দেয় মান্নান। আর এই ভাল বাসার জন্য হাজীদের আরও ২০ হাজার করে অর্থাৎ মোট ২ লাখ ৭০ হাজার করে টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রত্যেক হাজী উক্ত টাকা পরিশোধ করেন। এরপর ১০ আগস্ট আরবিতে লেখা একটি চিঠি দেখিয়ে মান্নান জানায় সৌদি মোয়াল্লেম ফিস বেড়েছে তাই প্রত্যেক হাজীর কাছ থেকে আরও ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করে। হাজীরা জানান, আমারা পরবর্তীতে জানতে পারি সৌদি মোয়াল্লেম ফিস বা বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। তাছাড়া চুক্তি মোতাবেক স্থায়ী বাসার পরিবর্তে আমাদের মক্কা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আজিজিয়া জুনুবিয়াতে নি¤œমানের অস্বাস্থ্যকর এক বাসাতে থাকতে দেয়া হয়। ফলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য কাবা শরীফে ইবাদাত করায় ব্যাহত হয়। এছাড়া মদিনা শরীফে ৮দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নিয়ম থাকলেও সেখানে ফেতরা ও বাসাসহ ৬ দিন রাখা হয়েছে। অভিযোগে হাজীরা জানান, হজ পালনকালে আমরা ৭৬ জন হাজী স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি বাংলাদেশ হজ মিশনে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে। অভিযোগ নিয়ে আলোচনার সময় মক্কার মোয়াল্লেম হাফেজ বেলালি জানান, আঃ মান্নান হাজীপ্রতি তাকে ২ লাখ ৪৪ হাজার করে টাকা দিয়েছে। অথচ আব্দুল মান্নান আমাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। হাজীরা আব্দুল মান্নানকে দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক মোয়াল্লেম দাবি করে তাদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৮ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান হাজীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কেশবপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য একটি মহল হাজীদের ব্যবহার করছেন। আমি এখানকার প্রতিনিধি মাত্র। হজের যাবতীয় কার্যক্রম, থাকা, খাওয়া সবই করেন ঢাকা এজেন্সির পরিচালক মাওলানা আমিরুল ইসলাম বেলালি। তিনি আমাকে যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবে হাজীদের তদারকি করে হজ করিয়ে নিয়ে এসেছি। তার বিরুদ্ধে হাজীরা মক্কায় হজ কাউন্সিলে একটি অভিযোগ করেছেন যা এখনও বিচারাধীন। থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি তবে বিষয়টি জটিল। হাজীদের ডেকে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×