ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চারুশিল্প ভুবনের দুই পথিকৃৎ শিল্পীকে স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

চারুশিল্প ভুবনের দুই পথিকৃৎ শিল্পীকে স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চারুশিল্প ভুবনের দুই পথিকৃৎ শিল্পী তারা। ক্যানভাসে রং-তুলি আঁচড়ে রাঙিয়েছেন শিল্প-অনুরাগীর অন্তর। স্বদেশের শিল্পধারার পথরেখায় উজ্জ্বল এই শিল্পীদ্বয়ের চিত্রপট। শিল্পের কাছের সমর্পিত এই দুই চিত্রকর হলেন শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ ও বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান। সোমবার এক আয়োজনে স্মরণ করা হলো দুই শিল্পীকে। শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগ আয়োজিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক চার দিনের স্মরণানুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় উঠে এলো শিল্পীদ্বয়ের বর্ণিল শিল্প-জীবনের কথা। স্মরণানুষ্ঠানের শুরুতে সফিউদ্দীন আহমেদের শিল্পসাধনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনায় অংশ নেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং শিল্পীপুত্র চিত্রশিল্পী আহমেদ নজির। এস এম সুলতানের জীবন ও কর্ম নিয়ে বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্পী মোস্তফা জামান। আলোচনা করেন শিল্পী বলদেব অধিকারী। স্মরণের এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। ‘সফিউদ্দীন আহমেদের শিল্পসাধনা’ শিরোনামের প্রবন্ধে সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, সফিউদ্দীন আহমেদের শিল্পীসত্তার গভীরে লালিত ছিল এক সূক্ষ্ম অতৃপ্তির বোধ। এই অতৃপ্তি একজন মহৎ শিল্পীরই সহজাত বৈশিষ্ট্য। এ কারণেই ছবি এঁকে তার কখনও মনে হয়নি যে, তিনি ভাল কিছু এঁকে ফেলেছেন। এ রকম অপূর্ণতা নিয়েই সবসময় কাজ করার ফলে এক জায়গায় তিনি আবদ্ধ থাকেননি। পরিণামে রেখাচিত্র, ছাপচিত্র ও তেলচিত্রÑএই তিন মাধ্যমেই তিনি অর্জন করেছেন এক শিখরস্পর্শী কৃতিত্ব। ব্যক্তিজীবনের মহৎ ভাবনাও তার শিল্পীবোধকে সর্বদা সজীব ও সমৃদ্ধ করেছে। সফিউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে আলোচনায় আবুল হাসনাত বলেন, তিনি নিত্যনব উদ্ভাবনী কৌশল, সূক্ষ্ম বোধ ও বুদ্ধির সমন্বয়ে এদেশের চিত্রকলা-আন্দোলনকে প্রাণময় করে রেখেছিলেন। বিশেষত ছাপাই ছবির ভুবনটি তার হাতে শিল্পগুণসম্পন্ন হয়ে উঠেছিল। চল্লিশের দশকে তিনি যখন কলকাতা আর্ট স্কুলে অধ্যয়ন করেন, তখনই তিনি ছাপাই ছবিতে নবমাত্রা সঞ্চার করে শিল্পানুরাগী ও শিক্ষকম-লীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হন। বিশেষত উড এনগ্রেভিং, ড্রাই পয়েন্ট ও এচিংয়ের করণকৌশলে পারদর্শিতা এবং সৃষ্টিতে রসসঞ্চারের জন্য তিনি হয়ে উঠেন বিশিষ্ট। এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মবিষয়ক প্রবন্ধে মোস্তফা জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বিশাল পরিসরে আঁকা গ্রামীণ জীবনচিত্র, কৃষকের বিদ্রোহ, কৃষিজমি নির্ভর জনগোষ্ঠীর ভূমির দখল নেয়া, প্রকৃতিতে প্রাকৃত জীবনÑতার মনোজগতের পরিবর্তনের ফল হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এস এম সুলতান তার স্বভাবসুলভ জীবন-যাপনের অংশ হিসেবে যে দেশজ উপায়ে ক্যানভাসে প্রলেপ তৈরি করেছেন, তা তার ক্যানভাসগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে তার অনেক ছবি হারিয়ে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার স্মরণানুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে স্মরণ করা হবে শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে। শিল্প একাডেমির চারুকলা বিভাগের এ আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের। যাদের সৃজনে সমৃদ্ধ হয়েছে দেশের চিত্রকলা আঙিনা। সুকুমার রায়ের জন্মদিন উদযাপন ॥ আধুনিক বাংলা শিশুসাহিত্যের অনন্য এক লেখক সুকুমার রায়। আপন সৃষ্টিতে হাস্যরস আর বিচিত্র ভাবনার খোরাক যুগিয়েছেন সোনামনিদের মননে। ছোটদের জন্য লিখেছেন ছড়া, কবিতা থেকে শুরু ছোটগল্প কিংবা নাটক ও নিবন্ধ। সোমবার ছিল এই কিংবদন্তি সাহিত্যিকের ১৩০ জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তাঁকে নিবেদন করে শিশু শিল্পীরা পাঠ করল কবিতা। প্রদর্শিত হলো তাঁর জীবন আশ্রয়ী প্রামাণ্যচিত্র। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে বিশিষ্টজনদের আলাপচারিতায় উঠে এলো তাঁর সাহিত্যকীর্তির কথা। সোমবার বিকেলে সুকুমার রায়কে নিবেদিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। একাডেমির লেকচার থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা, আবৃত্তিসহ বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আয়োজনে আরও ছিল সুকুমার রায়ের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ছড়াকার আসলাম সানী, আশিক মুস্তাফা ও একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। শিশু বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখে মীম নোশীন নাওয়াল খান। সুকুমার রায়ের ছড়া ও কবিতা থেকে পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আরমান মুরাদ, তামান্না তিথি ও শিরিনা বিথী। শিশু শিল্পীদের মধ্যে আবৃত্তি পরিবেশন করে মোঃ শিহাব উদ্দিন, মিথিলা ফারজানা রিনি, মোঃ ফেরদৌস রানা ও সানজিদা আফরিন স্মৃতি।
×