ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে সৈয়দ রেজাউর রহমান

ম‍াওলানা তাজউদ্দিনকে বাদল নামে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

ম‍াওলানা তাজউদ্দিনকে বাদল নামে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সোমবার মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, মেজর জেনারেল (অব) এটিএম আমিনসহ অন্যদের যোগসাজশে মওলানা তাজউদ্দিনকে বাদল নামে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে পুলিশের আইজি খোদাবক্স চৌধুরীসহ সিআইডির অন্য কর্মকর্তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করলেও তাকে গ্রেনেড হামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। এসব কারণে মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবারও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। নাজিমউদ্দিন রোডে পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার-১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এ মামলা চীফ প্রসিকিউটকে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট মোঃ আকরামউদ্দিন শ্যামল ও এ্যাডভোকেট ফারজানা রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট সবুজ, এ্যাডভোকেট রশীদ মোল্লা, এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম তারা মিয়া। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আরও বলেন, মুফতি হান্নান গ্রেফতার হওয়ার পরও তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী না নিয়ে এ মামলায় না দেখিয়ে মূল আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করার পরও তাকে গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। সাবেক স্বরাষ্ট্র ú্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে পুলিশের সাবেক আইজিপি খোদাবক্স মৃধা সিআইডর সাবেক কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আব্দুর রশিদসহ অন্যরা এ কাজটি করেছিলেন। এছাড়া পুলিশের রুহুল আমিন, আব্দুর রশিদসহ তিন মিলে জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করেছেন। তাকে (জজ মিয়া) দিয়ে মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জবানবন্দী রেকর্ড করিয়ে আসামিদের বাঁচানোর জন্য তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর এ মামলায় ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলা তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
×