ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেবেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেবেন আজ

শরীফুল ইসলাম/এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ ব্যাপক যানজট ও নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ১৫০ কি.মিটার পথ অতিক্রম করতে প্রায় আট ঘণ্টা সময় লেগে যায়। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কক্সবাজার সার্কিট হাউসে পৌঁছা পর্যন্ত পথে পথে দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন বহন করে স্লোগানসহ নেত্রীকে স্বাগত জানায়। এ সময় খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। খালেদা জিয়ার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা অতিক্রম করার সময় দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক শোডাউন করে নিজেদের অবস্থান জানান দেন। বিশেষ করে যে সব এলাকায় একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে, তারা পাল্টাপাল্টি শোডাউন করে খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। আজ সোমবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। দলীয় চেয়ারপার্সনের কক্সবাজারের উখিয়ায় আগমনে উখিয়ার বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দলীয় প্রধানকে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মিয়ানমার সরকারের দমন পীড়নে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে আজ সোমবার কক্সবজারের উখিয়া আসছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী-১ ও ২, ময়নাঘোনা হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে প্যাকেটজাত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করার কথা রয়েছে। উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি কক্সবাজার সার্কিট হাউসে ফিরে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রামের পর সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবেন। রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করবেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ফেনী সার্কিট হাউসে যাত্রা বিরতি শেষে রাতে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে। রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। তার গাড়িবহর সার্কিট হাউস থেকে বের হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রামের বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী নানান সেøাগান দিয়ে তাকে বিদায় জানান। তার গাড়ি বহর লালদীঘি-ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তর পাশ দিয়ে যাবার সময় অসংখ্য নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হয়। এসময় নেতাকর্মীরা রাস্তা দখল করে মিছিল করার কারণে তার গাড়িবহর সামনে এগিয়ে যেতে বাধাগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে তার গাড়ি বহর নির্বিঘেœ সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পটিয়া উপজেলা অতিক্রমকালে রাস্তার দুই ধারে ধানের শীষ হাতে নিয়ে ঢোলের তালে তালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানায়। এরপর তার গাড়িবহর চন্দনাইশ, দোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু হয়ে রাত ৮টায় কক্সবাজার সার্কিট হাউসে পৌঁছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়ার আগে চট্টগ্রামের মোটেল সৈকতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শনিবার দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম আসার পথে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাস্তায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে। পুলিশ সহায়তা করলেও সরকার দলের সন্ত্রাসীরা তার সফরকে প- করার চেষ্টা করেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সত্যকে অস্বীকার করে সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মীর্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে ভাল কাজ করেছে। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারে নয়। সাংবাদিকদের ওপর যখন আক্রমণ করল-তখনতো তারা দাঁড়িয়েছিল। তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফেনীর এসপি ও থানার ওসিকে বারবার বলা সত্ত্বেও ওসি বলেছেন আমরা দেখছি। তবে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকা- জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ থেকে গণমাধ্যম কর্মীরাও রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না, সেই রকম একটি সরকারের কাছে নিরাপত্তা প্রত্যাশা করা যায় না। কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ত্যাগ করার আগে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মকা- চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পথে পথে ব্যাপক সংবর্ধনা-অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সীমানায় ঢুকেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার বিকেল ৫টার দিকে তাকে চকরিয়া বাস স্টেশন এলাকায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে চকরিয়া স্টেশন পার হয় বেগম জিয়ার গাড়িবহর। খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, চকরিয়ার রাস্তার দুই পাশে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড প্রদর্শন করে সংবর্ধনা জানায় দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও বেশ লক্ষ্য করার মতো। তিনি বলেন, সড়কে শুধু মানুষ আর মানুষ। কক্সবাজারবাসী বেগম জিয়াকে কি পরিমাণ ভালবাসে এটি তার প্রমাণ। তবে এই ভিড় ছাপিয়ে কিছু কিছু এলাকায় পথচারীদের দুর্ভোগও সৃষ্টি হয়েছে। অগণিত মানুষের ভিড়ে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। সড়কে বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক যান চলাচল। খালেদা জিয়ার আগমনে একদিকে যেমন হাজার হাজার নেতাকর্মীর কণ্ঠে উচ্ছ্বসিত সেøাগান উঠেছে, অন্যদিকে কিছু মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। পাঁচ বছর পর কক্সবাজারে বিএনপি প্রধানের এ সফরকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার তিনি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন। এ সময় তিনি প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে ত্রাণ দেবেন। সোমবার বেলা ১১টায় উখিয়ায় বালুখালী পানবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বালুখালী-২, হাকিমপাড়া ও শফি উল্টাকাটা ঢালা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন খালেদা জিয়া। ওই দিন বিকেলে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তার রাত যাপন করার কথা রয়েছে। ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনে কক্সবাজার আসেন বেগম জিয়া। দীর্ঘ ৫ বছর পর তার আগমনে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। এদিকে তার সফরসূচী সফল ও তদারকি করতে শুক্রবারই কক্সবাজারে এসেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও জাতীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন মির্জা ফখরুলসহ এক ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান কক্সবাজারে এসে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিংয়ে বসে সবকিছু তদারকি করছেন। শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল লংবীচয়ের লবিতে প্রেসব্রিফিংয়ে মুখোমুখি হন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি রোহিঙ্গাদের মাঝে আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে ও ত্রাণ সহায়তা দিতে এসেছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন কক্সবাজারে পৌঁছবেন। সকালে সড়কপথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করতে যাবেন। তিনি বেগম জিয়ার সফরসূচী সফল করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আশ^াস দিয়েছেন সর্বাত্মক সহযোগিতার। আশাকরি সবাই এগিয়ে আসবেন। জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে ১১০ টন চাল, প্রসূতি মা ও শিশুদের মাঝে খাদ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করবেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের পরিদর্শনস্থল ও ত্রাণ বিতরণের সম্ভাব্য এলাকা দেখে বলেন, আগের চেয়ে অনেক শৃঙ্খলা ও সীমাবদ্ধতা ফিরে এসেছে। এজন্য তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আওয়ামী লীগের সামলোচনা করে বলেন, বিএনপি শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় ও সহযোগিতা করে আসছে। আর আওয়ামী লীগ লুটপাট ছাড়া কিছুই করেনি।
×