ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গানে কবিতায় শামসুর রাহমানকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

গানে কবিতায় শামসুর রাহমানকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আধুনিক বাংলা কবিতার অনন্য এক কবি শামসুর রাহমান। কবিতার চরণে চরণে বলেছেন দেশ, মাটি ও মানুষের কথা। স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ এ কবির ৮৯তম জন্মদিন ছিল গত ২৩ অক্টোবর। এ উপলক্ষে শনিবার স্মরণ করা হলো কবিকে। বিকেলে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে গান, কথন ও কবিতায় জন্মদিনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয় কবিকে। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ। প্রথম পর্বে ছিল কবিকে নিবেদিত আলোচনা ও স্মৃতিচারণ। কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে এ পর্বে অংশ নেন কবি রবিউল হুসাইন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও কবি কাজী রোজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। রবিউল হুসাইন বলেন, শামসুর রাহমান ছিলেন আমাদের কবিতার শিক্ষক। তিনি আমাদের কবিতা লিখতে, পড়তে শিখিয়েছেন। তিনি ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা। না থেকেও তিনি যেন কবিতার মশাল নিয়ে ছুটেছেন। সেই মশাল নিয়ে আমাদের আগামী পথে চলতে হবে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জন্মাচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষের জন্ম পৃথিবীতে পাল্টাতে আসে। বাংলাদেশের তেমনি একজন মানুষ কবি শামসুর রাহমান। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী, অসম্ভব রকমের বিনয়ী ও সাহসী মানুষ। শামসুর রাহমানের কবিতা কীর্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, আসাদকে নিয়ে যে কবিতা লিখেছিলেন, তা রাতারাতি গণমানুষের কবি হিসেবে তাকে পরিচিত করে তোলে। অনেকে তাকে স্বাধীনতার কবি, নাগরিক কবি বলেন। কিন্তু আমি তাকে মানুষের কবি বলি। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, শামসুর রাহমানকে পূর্ণাঙ্গ পরিচয় মেলে তার প্রথম পাঁচটি কাব্যগ্রন্থে। তাকে জানতে প্রথমের এই গ্রন্থ পড়া উচিত। কাজী রোজী বলেন, শামসুর রাহমান সারা জীবন কবিতার আশ্রয়ে সত্যকে তুলে ধরেছেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে কবির লেখা গান পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম ও বুলবুল মহলানবীশ। শামসুর রাহমানের রচনাবলী থেকে পাঠ করেনÑ লায়লা আফরোজ, মাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, তামান্না সরোয়ার নিপা প্রমুখ। ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজনের নাফিরা ও রূপন। কবিকে নিবেদিত কবিতাপাঠ করেন আজিজুর রহমান আজিজ, রবীন্দ্র গোপ, আমিনুল রহমান সুলতান, নাহার ফরিদ খান, বদরুল হায়দার, হানিফ খান, ফণিন্দ্রনাথ রায়, এম আর মনজু, গিয়াস উদ্দিন চাষা, শরাফত হোসেন, আনিস মুহম্মদ, ডি কে সৈকত, কাব্য কবির, জেবউন নেছা মিনা, ইমন শাহ, জব্বার আল নাইন। দর্শকসারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবির পুত্রবধূ টিয়া রহমান, দুই নাতনি ন্যায়না রহমান ও দ্বীপিতা রহমানসহ কবির সুহৃদ ও ভক্ত-অনুরাগীরা। ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ মুক্তি পাচ্ছে ২২ ডিসেম্বর আগামী ২২ ডিসেম্বর মুক্তি আচ্ছে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত সরকারী অনুদানের শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আঁখি এবং আমরা ক’জন’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। চলচ্চিত্রটির প্রচারণা অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে ছবিটির পোস্টার উন্মোচনের পাশাপাশি ছবির গান ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাহিনীকার ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রযোজক প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান লাভেলো আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাতো ইঞ্জিনিয়ার একরামুল হক, কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, অভিনেতা আল মনসুর, চলচ্চিত্রটির মুখ্য চরিত্র শিশুশিল্পী জাহিন নওয়ার হক ইশা ও মোরশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী। ‘আঁখি’ নামে অদম্য এক ছোট মেয়েকে ঘিরে এই চলচ্চিত্রের কাহিনী। মেয়েটি অন্ধ। সে প্রতিবন্ধী স্কুলে না পড়ে সাধারণ স্কুলে পড়তে আসে। কিন্তু শিক্ষকরা দুর্ব্যবহারে আঁখি যখন চলে যেতে চায়, তখন তিতু আর তার বন্ধুরা এগিয়ে আসে। তারা আঁখিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে চায়। আঁখি জানায় সে অন্ধ হিসেবে বিবেচিত হতে চায় না। সে আর ১০ জনের মতো একজন হতে চায়। বন্ধুরা এই চ্যালেঞ্জ নেয়। তারা আঁখিকে অন্ধ হিসেবে কোন করুণা করে না। স্রেফ বন্ধু মনে করে। এরপর নানা ঘটনা-রটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে কাহিনীর শেষ পরিণতির দিকে। কাহিনীর একটি অংশে ক্রিকেট খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সেলিব্রেট করতে আঁখি বন্ধুদের নিয়ে বান্দরবান বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা এক ডাকাত দলের খপ্পরে পড়ে যায়। আঁখিসহ মোট ছয়জনকে ডাকাত দল রেঙ্গুনে বিক্রি করে দেবার জন্য আটকে রাখে। কিন্তু আঁখি ও তার বন্ধুরা অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও সাহস দেখিয়ে ডাকাত দলের হাত থেকে ছাড়া পায়। ডাকাতদের পাকড়াও করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করে তার। আঁখির এই উন্নতি দেখে অন্য প্রতিবন্ধীরাও তাদের স্কুলে সাধারণ ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়। চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা, তারিক আনাম খান, আল মনসুন, সুস্মিতা সিনহা, মুনিরা ইউসুফ মেমি, এসএম মহসিন, আফসানা মাহমুদ, জাহিন নাওয়ার হক ইশা, অনন্য সামায়েল, জুয়াররিয়া আহমেদ প্রত্যাশা, কমল সিদ্দিকীসহ এক ঝাঁক নতুন মুখ। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, দেশে অনেকেই অনেক সিনেমা করেছেন। কিন্তু বাচ্চাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র হচ্ছে না। মোরশেদুল ইসলাম এর আগে কয়েকটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র আমাদের উপহার দিয়েছেন। সেগুলো শিশুদের ছাড়াও সব বয়সীদের কাছে বেশ সাড়া ফেলেছিল। আশা করি এই চলচ্চিত্রও সাফল্যের মুখ দেখবে ও বেশ সাড়া পাবে। তবে সবচেয়ে বড় হলো একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে কিভাবে আর ১০টা সাধারণ-স্বাভাবিক ছেলে-মেয়ের সঙ্গে থেকে সমানভাবে সবকিছুতে অংশ নেয়। অন্য শিশুরাও তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। আর এটাই হচ্ছে চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। ইচ্ছেশক্তি আর সবার সহযোগিতা পেলে একটা অন্ধ মেয়েও সবার মন জয় করে নিতে পারে তারই প্রমাণ আঁখি চরিত্রটি। মোরশেদুল ইসলাম বলেন, শিশুদের নিয়ে চলচ্চিত্র করা খুব একটা সহজ নয়। এই চলচ্চিত্রে যে কজন শিশু অভিনয় করে, তারা সবাই নতুন মুখ। তাদের গ্রুমিং করে নিতে হয়েছে। যখন ছবির দৃশ্য শুট করা শুরু করেছি, তখন দেখলাম এসব শিশু শিল্পীরা একেক জন দক্ষ শিল্পীর মতো অভিনয় করেছে। তাদের অভিনয় ছিল সাবলীল। এই চলচ্চিত্রে কয়েকটি বিশেষ শিশুকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। তারাও সুন্দরভাবে অভিনয় করেছেন। এক কথায় বলতে পারি শিশুদের জন্য এ ধরনের চলচ্চিত্র বাংলাদেশে আর হয়নি। এখন শুধু অপেক্ষা পালা। আসছে ২২ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে। আরণ্যকের নাট্যোৎসবের সমাপ্তি নাট্যদল আরণ্যক আয়োজিত পুষ্প ও মঙ্গল আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন হংকংয়ের নাট্যশিল্পীদের পরিবেশনায় মুগ্ধতার রেশ নিয়ে সমাপ্ত হলো এ আয়োজন। ভিন্নধর্মী এ নাট্য প্রযোজনাটির শিরোনাম ছিলো ‘দ্য থার্ড টাওয়ার অব বাবেল’। উৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এই প্রযোজনাটি মঞ্চায়ন করে হংকংয়ের নাট্যদল এশিয়ান পিপলস থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল সোসাইটি। ভিন্নধর্মী এই প্রযোজনা গতানুগতিক অভিনয়ের বাইরে নৃত্য ও সঙ্গীতের অনন্য মিশেলে ব্যতিক্রমী ভিন্নধর্মী এক নাটকের মঞ্চায়ন দেখলো ঢাকার দর্শকরা। নাচের সঙ্গে অভিনয় এবং সুরের ভিন্নতায় দর্শকদের দ্বারা ব্যাপক সমাৃদত হয় হংকংয়ের এই প্রযোজনাটি। পুরনো হংকংয়ের সাম সুই পো এলাকার পরিবেশ ও মানুষকে নিয়েই এই প্রযোজনাটি আবতির্তত হয়েছে। যাদের অধিকাংশই ইন্দোনেশিয়া থেকে হংকংয়ে এসেছিল। ভাগ্য অন্বেষণে আসা হতদরিদ্র এসব মানুষ এবং তাদের প্রাণশক্তির বিষয়ে সারা বিশ্বের মানুষকে জানানোই এই নাটকটির মূল লক্ষ্য বলে জানালেন নাটকটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। গ্রাদ লিউং ওয়াই কিট ও কাই ইশিমোতার যৌথ নির্দেশনায় মনোজ্ঞ এই প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রের নৃত্য ও গীতে অংশ নেন : আইডি লাম, ওয়ং ইউক মিং, গ্রাদ লিউং, কাই ইশিমোতা, মেই ইউ সুক মেই প্রমুখ। প্রকাশক দীপনের স্মরণসভা মুক্তচিন্তার চর্চার কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছিল প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে। বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের কারণে এই তরুণ প্রকাশককে খুন করে মৌলবাদীরা। দীপনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার এলিফ্যান্ট রোডের দীপনপুরে স্মরণসভার আযোজন করে দীপন স্মৃতি সংসদ। বন্ধু, শুভার্থী ও পরিবারের সদস্যরা মিলে স্মরণ করলেন প্রাণপ্রিয় দীপনকে। স্মরণানুষ্ঠানের দীপনের হত্যার বিচারসহ তার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা উচ্চারিত হয়। স্মরণ অনুষ্ঠানে দীপনকে নিয়ে কথা বলেন তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি, কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক, দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান নাদিম কাদির, দীপনের বন্ধু ডা. কাজী শাহেদুল আলম, মর্তুজা শরিফুল ইসলাম, রুশো; ফরিদী, অরুণ কুমার বিশ^াস, প্রকাশক খান মোহাম্মদ মাহবুব, প্রকাশক হুমায়ূন কবির, রাখাল রাহা, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদি অধ্যাপক আবুল বারকাত। দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি বলেন, হত্যার দুই বছরে দীপনের জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। তার হত্যার বিচার হয়নি। এখন আর সেসব নিয়ে ভাবি না। দীপনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যেতে চাই। আগামি প্রজন্ম দীপনের হত্যা কেন হয়েছিল সেই অন্ধকার পরিবেশ কাটিয়ে যেন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে যেতে পারে তার জন্য কাজ করে যেতে চাই’ - বলছিলেন ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ এক জটিল সময়ের মধ্যে যাচ্ছে। রাজনীতির জটিল কারণে হঠাৎ করেই দীপনের পরিবার পুরোপুরি একেবারে একা হয়ে গিয়েছিল। দীপনের স্ত্রী জলি সব দুঃখকে দরে রেখে দীপনকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সন্তানদের মানুষ করছে। মন খারাপ করা কথা বলতে আমার ভাল লাগে না। আমি শুধু বলি, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ইয়াসমিন হক বলেন, লেখক কী লিখবে আর লিখবে না -এটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে এটা হবে না। ভয় দেখিয়ে লেখকদের লেখা বন্ধ করা যাবে না। প্রকাশকরা দীপনের হত্যার জন্য প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বইমেলায় দীপনকে কেউ স্মরণ করেনি শুধু তার পরিবার ছাড়া।
×