প্রিয় রোকোনালী
কবি সুজন হাজারী প্রীতিভাজন
মাকিদ হায়দার
পাইলেই লইয়া আসিব,
আগের ঠিকানায় গিয়া শুনিলাম, তিনি এখন
এই এলাকায় নাই
কোথায় যে গিয়াছেন
তাহা বলিতে পারিল না কেহই।
শুনিয়া কষ্ট পাইলাম।
আমার প্রিয় মাতুল প্রিয় রোকোনালী
এই ভাবে এ পাড়ায় সে পাড়ায়
নিয়মিত বাসা বদল করিবেন, তাই আমার
ভাবিতেই খুবই খারাপ লাগিতেছে
প্রিয় মাতুল,
মাঝখানে কয়েক মাস ছিলেন জয়পুরহাটে আলিম ভাইয়ের বাড়ি
তার আগে পাবনায় সুবহান ফুফার ভাড়া করা বাসায়Ñ,
এই মাত্র
শুনিলাম জয়পুরহাটে, পাবনায় প্রিয় রোকোনালী নাই
আমার বুকের মধ্যে মাতুলের শোকে আছারি বিছারি
শুরু হইতেই
ভাবিলাম পুলিশের কাছে যাই, তখুনি মনে হইল
মাতুলের নাম শুনিলেই
বদমাইশ পুলিশেরা তেলে বেগুনে
জ্বলিয়া উঠিবেন, আমি সেই ভয়ে
যাই নাই পুলিশের কাছে।
ঘুরিতেছি দিন রাত যদি পাই মাতুলের সাক্ষাৎ, ইতিমধ্যে
বাতাসে বাতাসে শুনিলাম মাতুল আমার গিয়াছেন সাতক্ষীরা
সারোয়ার খালুদের বাড়ি
সেখানে মাতুল একুশ বাইশ
পদের খাবার খাইতেছেন আপেল আঙ্গুরসহ।
আগে যদিও মাতুল খাইয়াছিলেন
মুক্তিযোদ্ধাদের তরুণ শরীর
হিন্দু মুসলিম নারীদের
শাড়ির আঁচল।
তাহার পরেও তিনি অবলীলায় খাইতেছেন
একুশ বাইশ পদের সুস্বাদু খাবার
কচি হরিণের মাংসসহ কাছিমের ডিম।
বাতাসে বাতাসে আরও শুনিলাম,
তিনি যাইবেন
সুন্দরবন হইতে পশ্চিম উপকূলে
হয়তো তিনি আর কোনদিন ফিরিবেন না
তার অপছন্দের বাংলাদেশে-বঙ্গভূমিতে।
জানি না প্রিয় মাতুল, প্রিয় রোকোনালী,
যদি ফিরিয়া নাই আসে কখনো কোনদিন;
তাহা হইলে আমি কাহার নির্দেশে
পুড়াইব ঘরবাড়ি;
হয়তো আর কোনদিন বলিতে পারিব না
জিন্দাবাদ।
** মেঘবাড়ি
সোহরাব পাশা
সন্ধ্যে ছুঁয়েছে রাত্রির ধুলো
ও পারেই সেই হলুদ বাড়িটা একা
সারারাত অন্ধকারে ভিজে
ছায়াদের ঠিকানা নিশ্চুপ চুরি হয়ে গেছে কোথাও
ছিন্নভিন্ন গোপন কুসুম অন্তর্গত কারুকাজ
শরীরের শিল্পকলা নিশ^াসের গাঢ়
শব্দ
মানুষ শেখেনি তার দাহ বিনাশের বৃষ্টিভাষা
ডাকঘর বিলি করছে মৃত জ্যোৎস্নার বিবর্ণ খাম
ভাঙা সেতুর ওপর তুমি
তোমার ওপর জল-নিচে ঘূর্ণি হাওয়া
পা থেকে উধাও পথ
কীভাবে ভালোবাসার মেঘবাড়ি যাবে
একা
একমাত্র অভিধান ছাড়া ভালোবাসা শব্দটির
সঠিক-নির্ভুল ব্যবহার কোথাও নেই
ভালোবাসা-ঝিনুকের মুক্তোর বদলে মেলে কাদা।
** রোদন বালিকা
শাহীন রেজা
শার্সিতে জলের নৃত্য
দূরে ছায়া ছায়া সীমাহীন অবুঝ সবুজ
এরই মাঝে ঘুমপথে হেঁটে এলে
মায়াবী রোদন
তোমাকে ছুঁতেই ভেঙ্গে পড়লো মেঘ
আর সেই স্রোতে সাঁতার কাঁটতে কাঁটতে
বাউল কবি খুঁজে পেলো শব্দঘুঙুর
কালিটিতে সেদিন বৃষ্টির সাথে সাথে
জমেছিল প্রেম চায়ের কাঁপে
মৃদু উষ্ণতায় ছন্দময় সুর হয়ে ফুটেছিল
মান্নাদে, ভূপেন এবং মীর হাসান
আর তুমি শ্রাবণ-প্রতিমা
আমারই বক্ষ জুড়ে জলপদ্ম হয়ে
কী নিপুণ রোদন বালিকা
বালিকারা বেঁচে থাকে
কুয়াশা চাদর হয়ে দূরগ্রামে মহুয়া মাতালে
কখনো বৃষ্টি হয় কখনো রোদ্দুর
কখনো টপ্পা কখনো খেয়াল
জেগে থাকে ছায়াকাশে
যেন স্বাতী, অরুন্ধতি
সুদূরের মায়াবতী শ্রাবণ সন্ধ্যায়।
** রক্তাক্ত আরাকান
মাহমুদা বেগম সিনথিয়া
শুনছো হে পৃথিবী,
আমি রক্তাক্ত আরাকান থেকে বলছিÑ
যেখানে নেই কোনো উদাত্তের দিক বা দিগন্ত
আছে শুধু আকাশ ঝড়া অগ্নিলীলা।
তুমি কি দেখো নাÑ
শাহ পরীর দ্বীপের জিন্দা লাশ
আর লোহিত নাফ নদী।
আমার সব স্বজনেরা তো এখানেই।
জ্বলন্ত আরাকান কি তোমার চোখে পড়ে না?
এক রাক্ষসী দাঁড়কাক তার বিষাক্ত থাবায়
গ্রাস করছে হাজারো রোহিঙ্গার প্রাণ।
আমার মাথার ঠাঁই পুড়িয়ে
মৃত্যুশিল্পের রক্তিম মানচিত্র গড়ছে।
কতোদিন হলো এক মুঠো জলভাত খাইনি,
ঝলমলে নীলাকাশ দেখেনি,
নরম রবির কিরণ এপারে পড়েনি।
আমি শুধু শুনেছি আর্তকগ্রস্তেরক্ষুধাকান্না
আর বাঁচার জন্য নিরন্তর করুণ আকুতি।
আমি তো ওপারের বঙ্গসীমানায় যেতেই
মাইনের বিষে ঝলসে গেছি।
উত্তপ্ত এই তটভূমিতে তবে তো আর নেই বেশিক্ষণ।
তাই শেষবেলায় আরাকানের বসন্ত আর দেখা হলো না।
ও নির্দয় নির্বাক পৃথিবী,
তুমি কি আমায় একটা চূড়ান্ত পরিচয় দিবে না?
তুমি কি আমার মুখের বাঁধন থেকে মুক্তি দিবে না?
আমি রোহিঙ্গা বলে কি আমায় বাঁচতে দিবে না?
তবে তুমি সব নিগ্রহের সাক্ষী হয়েই থেকো।
ভুলে যাও আমায় নিষ্ফল নিবেদন।
তোমার তরে ধন্য আমি
চিরবিদায় নিষ্ক্রিয় মানব ধরণী।
শীর্ষ সংবাদ: