ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন সেক্টর থেকে পাওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা শুরু ;###;সব দলকে সংলাপে আনতে পেরে সন্তোষ

আত্মবিশ্বাসী ইসি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

আত্মবিশ্বাসী ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে কমিশন। জানা গেছে, পর্যালোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাছাই করা হবে। পরে তা বিবেচনার জন্য কমিশনের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। কোন্ কোন্ প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিতে হবে তা কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সংলাপে তারা ৫শ’র বেশি প্রস্তাব পেয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা পর্যালোচনার মাধ্যমে কমিশন বৈঠকে বিবেচনার জন্য উপস্থান করা হবে। ইসি মনে করছে সংলাপের মাধ্যমে তাদের আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। এটি আগামী নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ইসির ধারাবাহিক সংলাপ। পর্যায়ক্রমে তারা গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে। প্রায় তিনমাসব্যাপী এই সংলাপ গত বুধবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংলাপ শেষে এখন বর্তমান ইসির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা নিয়ে। এ জন্য ইসিকে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থায় নেয়ার পরমর্শ দেন তারা। তবে তারা এও উল্লেখ করেছেন, এক্ষেত্রে বর্তমান ইসি অনেকটা সফল হয়েছে। বিশেষ করে আলোচনার টেবিলে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসাতে পেরে। তারা বলেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিষয়ে পরস্পর বিরোধী প্রস্তাব দিলেও বর্তমান ইসির উদ্যোগেই এবার প্রথম সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের পরামর্শ ব্যক্ত করেছে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপি সংলাপে আসছে এটাই তাদের বড় সফলতা। বিএনপির সংলাপে আসাকে রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা অর্জন হিসেবেও দেখছেন। তিনি বলেন সংলাপে অংশ নেয়া মানেই আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যারা কমিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে মতামত নেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সবাই এ বিষয়ে সফলতা পাননি। বিগত রকীব কমিশন কোন দল বা সংস্থার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সরকার এবং কমিশনের প্রতি অনাস্থা থেকেই বিএনপি গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপির কর্মকা- আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষেই মত রয়েছে। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে বর্তমান ইসির সমালোচনা করলেও সংলাপে অংশ থেকে শুরু করে ইসির বিভিন্ন কর্মকা-ে মতামত ব্যক্ত করছে। এদিকে ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, তিনমাস বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যম ইসির প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বেড়েছে। তেমনি ইসি তার কর্মকা- নিয়ে এখন আত্মবিশ্বাসী। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সফলভাবে এ সংলাপ শেষ করায় ইসির বড় ক্রেডিট হলো নিবন্ধিত ৪০টি দলের সংলাপে অংশগ্রহণ। দলসহ সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসির আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তিনি জানান, সব অংশীজনের মতবিনিময় নিয়ে প্রস্তাবগুলো একীভূত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সুপারিশগুলো গুছিয়ে পর্যলোচনা করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। নবেম্বরের মধ্যে সংলাপের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নিয়ে পুরো কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। ইসির এখতিয়ারের মধ্যে ও এখতিয়ারের বাইরে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হবে। তিনি জানান, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেই কোন বিষয়ই ইসির সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে না। বরং নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এদিকে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অনেক প্রস্তাব এসেছে যা ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত। যে বিষয়ে ইসির এখতিয়ার নেই সেই বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই। আর যে বিষয়ে ইসির করণীয় নেই, সেই সব প্রস্তাবনা নিয়ে তারা ভাবছে না। সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য থাকলেও কমিশনের করার কিছু নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোকেই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে ইসির এই সংলাপের ইতিবাচক দিক হলো সমস্যা সমাধানের একটি গ্রাউন্ড তৈরি করা। তারা মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় মনে হয়েছে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠৃু হোক সবাই চায়। এ কারণে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির ওপর তারা বেশি জোর দিয়েছেন। ৪০ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষ হলেও জনগণের নজর ছিল মূলত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সংলাপের দিকে। কিন্তু দুটি দলের সংলাপে কয়েকটি বিষয়ে মূলত পরস্পরবিরোধী মত এনেছে। সেনা মোতায়েন, সহায়ক সরকার এবং ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে তারা একে অপরের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপি বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরাসরি সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ ইভিএমে ভোট চায়। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সহায়ক সরকারের কথা বলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহায়ক সরকার নিয়ে ইসির কিছুই করার নেই। কারণ আইন মেনেই ইসির ভোটের আয়োজন করতে হবে। আওয়ামী লীগ বর্তমান সংসদীয় আসন সীমানা বহাল রাখার পক্ষে বললেও বিএনপি চায় ২০০৮ সালের আগের সীমানায় নির্বাচন। অবশ্যই সংলাপে অংশ নেয়া প্রায় সবার পক্ষ থেকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিপক্ষে প্রস্তাব করা হয়েছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপে এমন কিছু বিষয় এসেছে যেগুলো নিয়ে ইসির করার কিছুই নেই। কোন্টা ইসির এখতিয়ারে আর কোন্টা নয়, তা চিহ্নিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সংলাপ শেষে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আলোচিত বিষয় ছাড়াও আরও অনেক মতামত এসেছে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোকে কমিশনের অধীনে আনা, নির্বাচনের আগে ও পরে সন্ত্রাস দমনের ব্যবস্থা করা, একই মঞ্চে নির্বাচনী প্রচারের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, সকল আইন বাংলায় করা, সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে এর মধ্যে। তিনি জানান, সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো সঙ্কলন করা হবে। এর মধ্যে যেগুলো নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত সেগুলো ইসি বিবেচনা করতে পারে। বাকিগুলো কমিশন দেখবে কী করা যায়।
×