ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্ক অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্ক অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় বর্বরোচিত ও বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলার মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্ক) অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ উপস্থাপন করেন। চীফ প্রসিকিউটর তার আর্গুমেন্টে বলেন, অভিযোগের আলোকে আসামিরা গ্রেনেড ছুড়ে ১৬ জনকে হত্যা করে। আসামিদের সঙ্গে তথাকথিত ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠী তারা আফগানিস্তানের মতো তালেবান স্টাইলে এদেশে ইসলামী শাসন কায়েম করার লক্ষ্যে নানাভাবে জঙ্গী তৎপরতা চালাতে থাকে। পাকিস্তানী অনুসারী বিএনপি- জামায়াত ক্ষমতার স্বার্থে অভিন্ন উদ্দেশ্যে জঙ্গীগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে। এরই ধারাবাহিকতায় একুশে আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। আজ বুধবারও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করা হবে। নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার-১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। যুক্তিতর্ক শুনানির দ্বিতীয় দিনে এ মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয় ‘তথাকথিত সাম্প্রদায়িক ও সমমনা রাজনৈতিক দল বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট’। ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন বিশেষ করে লস্কর-ই তৈয়েবা, তেহেরিক-ই জিহাদী ইসলামী এবং হিযবুল মুজাহিদিন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই একত্রিত হয়ে ২১ আগস্টে এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।’ আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া মুফতি হান্নানসহ অন্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে এই অপরাধ সংঘটন করে বলে দাবি করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়। এ মামলা চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহামনের টিমে অন্যদের মধ্যে ছিলেন এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল, এ্যাডভোকেট মোঃ আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও এ্যাডভোকেট ফারজানা রেজা। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার ও এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ওই সমাবেশে একটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এ হামলা চালানো হয়। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্য নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে একটি মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে দলীয় সভানেত্রীকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার (শেখ হাসিনা) শ্রবণ শক্তির ক্ষতি হয়। এ বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন : প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ২০ জন। মোট আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে কারাগারে আটক আছেন ২৩ জন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক ও জামিনে রয়েছেন ৮ জন।
×