ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুরে বিদ্যুত সংযোগের নামে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২১ অক্টোবর ২০১৭

চাঁদপুরে বিদ্যুত সংযোগের নামে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর, ২০ অক্টোবর ॥ জেলা সদর, ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় বিদ্যুত সংযোগের নামে বিভিন্ন অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিদ্যুত সংযোগ আবেদনকারীরা। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুত জোনাল অফিসগুলোতে অভিযোগ করলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ ও ২ সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিদ্যুত সংযোগের লাইন সরকারের নিজস্ব অর্থে নির্মিত হচ্ছে। নতুন বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে কোন ধরনের অর্থ লেনদেন না করার জন্য বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে। আবেদনকারী পল্লী বিদ্যুত সমিতির নিয়মানুযায়ী ১শ’ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে বিদ্যুত সংযোগের জন্য আবেদন করবেন। সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আনুসাঙ্গিক কাজ সম্পাদন হলে সংযোগ প্রদান করা হয়। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত সংযোগ প্রদানে যে অঙ্গীকার করেছেন, সে আলোকে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার কাজ এগিয়ে চলছে। পর্যায়ক্রমে পল্লী বিদ্যুতের ডিজাইন অনুসারে বিদ্যুতের খুঁটিও বসানো হচ্ছে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন দালাল চক্র। ওই টাকা বিদ্যুত অফিসে দেয়া হবে বলে জানান দালাল হারিস। তার সঙ্গে রয়েছে আরও কয়েকজন। গ্রাহক কামরুন্নাহার ও আফসানা রহমান জানান, তাদের স্বামী বিদেশে থাকার কারণে দালাল চক্র এসে নতুন সংযোগ দেয়ার নামে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু এখনও সংযোগের নামে কোন কিছু হয়নি। পরে ওই দুই গ্রাহক বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং রুপসা (উত্তর) ইউনিয়নের কমলকান্দি গ্রামের জনগণ বিদ্যুত সংযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। ২০১৫ সালে ওই গ্রামে দেড় কিলোমিটার বিদ্যুত লাইনের অনুমোদন দেয়া হয়। আর এই লাইন নির্মাণের ঠিকাদারিত্ব পায় দুলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। ঠিকাদার প্রথমে গ্রামে কয়েকটি খুঁটি ফেলে রাখে। যাতে এলাকার বিদ্যুত বিহীন লোকজন বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার জন্য আকৃষ্ট হয়। এ সুযোগে স্থানীয় দালাল আবদুল কুদ্দুস আনোয়ার, ইমরান, মোঃ সবুজ, বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। পরে তারা বিদ্যুত গ্রাহকদের জানান, টাকা না দিলে বিদ্যুত লাইন হবে না। পরে ওই গ্রামের ১০৬ গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে গড়ে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২১ লাখ টাকা তুলে নেয় ওই দালাল ও ঠিকাদার। গ্রাহক রফিকুল ইসলাম ও তাজুল জানান, বিদ্যুত দেয়ার কথা বলে আমাদের বাড়ির ঘরপ্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে টাকা তুলেছেন আবদুল কুদ্দুস, আনোয়ার হোসেন, এমরান হোসেন ও সবুজ। অভিযুক্ত এমরান হোসেন জানান, গ্রাহকরা আমাদের সামান্য টাকা দিয়েছে। তা আমরা ঠিকাদারকে দিয়ে দিয়েছি কাজ দ্রুত হওয়ার জন্য। টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে এমরান জানায়, কত টাকা উঠানো হয়েছে এবং কত টাকা ঠিকাদারকে দিয়েছি তা আপনাদের বলা যাবে না। ঠিকাদার দুলাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, গ্রাহকরা শুধু আমাকে খুঁটি নেয়ার ভাড়াটা দিয়েছে, আর কোন টাকা পয়সা আমি নেইনি। শাহরাস্তি উপজেলার সংহাই উত্তর খালপাড় থেকে বরুয়া গ্রাম পর্যন্ত নতুন বিদ্যুত সংযোগের নামে টাকা উত্তোলন করেছে গ্রামপরিচালক সেলিম ও ইলেকট্রিশিয়ান মোঃ শামছুর হক ভুট্টো। তারা প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। শাহরাস্তি সূচীপাড়া ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম জানান, নতুন সংযোগ দেবেন বলে গত ৫ মাস পূর্বে তার কাছ থেকে ভুট্টো ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। পাশর্^বর্তী দক্ষিণ হাজীবাড়ির জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন গ্রামপরিচালক সেলিমের সহকারী ভুট্টো। বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত গ্রামপরিচালক সেলিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় জেনে লাইন কেটে দেন। এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার আবু তাহের জানান, দালাল চক্রের কাছে টাকা না দেয়ার জন্য আমরা মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করেছি। গ্রাহকরা দালালদের টাকা দেয় কেন? আর যারা বিদ্যুত সংযোগের জন্য টাকা চাইবে তাদের পুলিশে দেবেন। তারা আমাদের অফিসে এসে দালাল চক্রে নাম বলুক। আমাদের কোন কর্মকর্তার নামে যদি টাকা উত্তোলন করে, তাহলে গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
×