ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে অনন্য নজির

এক সপ্তাহে শিশুসহ ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে কলেরার টিকা প্রদান

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২০ অক্টোবর ২০১৭

এক সপ্তাহে শিশুসহ ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে কলেরার টিকা প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে (পূর্বের ও চলতি বছরে আসা) কলেরাসহ বিভিন্ন টিকা প্রদানে অনন্য সফলতার নজির সৃষ্টি করেছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ১০ অক্টোবর শিশুসহ সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে কলেরার টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওইদিন থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে প্রতিদিন শিশুসহ এক লাখেরও বেশি বিভিন্ন বয়সী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে কলেরার টিকা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুকে আগে থেকেই হাম-রুবেলা ও ওরাল পোলিও টিকা প্রদান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃতে বিশ স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআরবি, অন্যান্য দাতাসংস্থা ও এনজিওদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক শিশুকে কলেরার টিকা দেয়ার নজির আর কোথাও নেই। আবেদন জানানোর ৩২ ঘণ্টার মধ্যে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইমুনাইজেশন (জিএভিআই) ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা প্রদান করে যা দিয়ে ৯ লাখ ডোজ টিকা কেনা হয়। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন গ্রুপও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমোদন দেয়। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন গ্রুপের গ্লোবাল ভ্যাকসিন স্টক পাইল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে ৯ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনই বাংলাদেশকে দেয়া হয়। দ্রুত কলেরার টিকা বরাদ্দ পাওয়া, বিদেশ থেকে চার্টাড বিমানের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসা, একই দিন ফ্রিজার ভ্যানে কক্সবাজারে পরিবহন ও বিশেষ ব্যবস্থায় কোল্ড চেইন মেনে সংরক্ষণ করে ১২০ টিমের সহস্রাধিক টিকা প্রদানকারীকে নিয়োগ প্রশিক্ষণ টিকাদান, বিশাল অনুপরিকল্পনা প্রণয়ন ও চার স্তরবিশিষ্ট সুপারভিশন মনিটরিং এর মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকাদান বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতারই সাফল্যগাথা। আশ্রয় কেন্দ্রে অন্য দেশের বাস্তুচ্যুত এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্বল্প সময়ে কলেরার টিকাদানের নজির আর একটিও নেই বলে জানান মহাপরিচালক । গত ২৫ আগস্ট থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে মোট ৫ লাখ ৮২ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিতদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সরকারী ২৫টি, সেনাবাহিনীর ১০টি ও বেসরকারী ৩৯টিসহ মোট ৭৪টি স্থায়ী হেলথ সেন্টারে কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া ৪৩টি ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম, ২১টি এ্যাম্বুলেন্স ও ২৩১টি টিকা প্রদান দল কাজ করছে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কলেরার টিকা ছাড়াও এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৯ শিশুকে এমআর (মিজেলস-রুবেলা), পাঁচ বছরের কম বয়সী ৭২ হাজার ৩৩৪ জনকে ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন, ৭২ হাজার ৬৪ জন শিশুকে ভিটামিন এ টিকা খাওয়ানো হয়। এ সময়ে ৩১ হাজার ২৪ জন ডায়রিয়া, ৪৬ হাজার ৬১৭ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ৫ হাজার ৯০৯ জন আঘাতপ্রাপ্ত ও ২০ হাজার ২২২ জন চর্মরোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গা চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় বলে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ।
×