ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরে সংবর্ধনার প্রস্তুতি

খালেদার দেশে ফেরার খবরে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

খালেদার দেশে ফেরার খবরে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি। ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা দলে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বুধবার বিমানবন্দরে ব্যাপক শোডাউন করে খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরতে চায় বিএনপি। সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আরও কিছুদিন লন্ডনে অবস্থান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার বিরুদ্ধে পরপর তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। বিশেষ করে তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজপথ উত্তপ্ত করতে পারেননি তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তার এ সিদ্ধান্তের পর শনিবারই প্রথমে লন্ডন থেকে তার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার এবং পরে বিএনপি নেতাকর্মীরাও বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় খালেদা জিয়া এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসবেন বলে জানান। এদিকে শনিবার রাতেই কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের বুধবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দিতে নিজ নিজ এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। রবিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন স্তরে বৈঠক করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়। এছাড়া ইতোমধ্যেই ঢাকার পাশের গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা নেতাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে আসতে বলা হয়েছে। সূত্রমতে, রবিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলের পক্ষ থেকে ২০ দফা প্রস্তাবনা দেয়া এবং এসব প্রস্তাবনাকে নির্বাচন কমিশন ইতিবাচক হিসেবে নেয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা গতির সঞ্চার হয়। আর বুধবার খালেদা জিয়া দেশে ফিরে এলে দলে আরও গতি সঞ্চার হবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। জানা যায়, খালেদা জিয়া দেশে ফিরে প্রথমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবেলা করে জামিন নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর জামিন পাওয়ার পর এ মাসের শেষের দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরে এলে তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এরপর তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব চূড়ান্ত করবেন এবং সুবিধাজনক সময়ে তিনি তা ঘোষণা করবেন। আর সহায়ক সরকারের প্রস্তাব ঘোষণা করার পর তিনি এ নিয়ে জনমত তৈরি করতে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করবেন। খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দিতে বিএনপি প্রস্তুত দুদু বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দিতে বিএনপি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বুধবার দেশে ফিরবেন। তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতিবাদে ‘জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। দুদু বলেন, খালেদা জিয়া দেশে এসে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিরোধী দলের রাজনীতিতে যা যা করা দরকার তাই করবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডনে গেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বারবার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি দেশে ফিরবেন কি-না? ছোট মনেরও একটা সীমা থাকে, এ সরকােের সেটাও নেই। দুদু বলেন, এ সরকার খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং ধানের শীষের সঙ্গে নির্বাচন করতে ভয় পায়। তারা আইনের শাসনের নামে আইনকে ধ্বংস করেছে, যার কারণে দেশে রাজনৈতিক দলের হাজারও নেতাকর্মী জেলখানায় বন্দী। দুদু বলেন, সহায়ক সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্র্বাচনের জন্য আমরা লড়াই করছি। সে নির্বাচনের জন্য আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যাদের দুর্নীতির প্রশ্নে বিচার করা হচ্ছে তাদের নামে কোন দুর্নীতির মামলা নেই। অথচ যারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসরকারী ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট ধ্বংস করে ফেলেছে, লুটপাট করেছে তাদের নামে একটিও মামলা হয়নি। তারা একজনও কারাগারে নেই, বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা গাজীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, আয়োজক সংগঠনের নেতা কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন, এস আল মামুন প্রমুখ।
×