ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বরেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

বিশ্বরেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু রবিবার কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম ওয়ানডেতেই ১০ উইকেটে বিধ্বস্ত হয়েছে তারা। সর্বাধিক রান তাড়া করে ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয়ের নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজে এগিয়ে গেছে তারা ১-০ ব্যবধানে। টস জিতে আগে ব্যাট করে মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ১১০ রানে ৭ উইকেটে ২৭৮ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। জবাব দিতে নেমে কুইন্টন ডি ককের অপরাজিত ১৬৮ ও হাশিম আমলার হার না মানা ১১০ রানে ৪২.৫ ওভারে বিনা উইকেটে ২৮২ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা। লিটন দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু তাকে নবম ওভারে ২১ রানে সাজঘরে ফেরান রাবাদা। পরের ওভারেই লেগস্পিনার ইমরান তাহিরের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ইমরুল কায়েস। এরপরও নিজের ইনিংসটাকে খুব লম্বা করতে পারেননি তিনি। অভিষেক হওয়া পেসার ডেন প্যাটারসনের শর্ট বলে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৪৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করে। তিন নম্বরে নেমে সাকিব আল হাসান তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তিনি ওয়ানডে ইতিহাসের পঞ্চম অলরাউন্ডার হিসেবে বল হাতে ২ শতাধিক উইকেট ও ব্যাট হাতে ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজার রান করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। কিন্তু ধীরস্থির ভঙ্গিতে খেলেও ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি, তাহিরের বলে সাজঘরে ফেরেন। তবে মুশফিক ছিলেন শুরু থেকেই বেশ সাবলীল এবং দ্রুতগতিতে রানও তুলছিলেন। সাকিবের বিদায়ের পর নতুন সঙ্গী হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে পান তিনি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ হয় ৬৯ রান। এতে করে বিপন্মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ দল এগিয়ে যেতে থাকে ভাল একটি সংগ্রহের দিকে। টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের দুর্দশায় ফেলা রাবাদা বেশ আঁটসাঁট বোলিংয়ে চেপে ধরলেও তেমন সফল হতে পারেননি। ৬ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়েছিলেন তিনি এবং লিটনের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। সেই রাবাদাই বাংলাদেশের ইনিংসকে বেশি বড় হতে দেননি স্লগ ওভারে আরও ৩ উইকেট শিকার করে। মুশফিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এবং ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি হাঁকান। দুই বছর পর আবার শতকের দেখা পাওয়া মুশফিক মাত্র ৫২ বলেই হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন। তবে পরের দিকে কিছুটা ধীর হয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১৬ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রানে অপরাজিতই থাকেন তিনি। দীর্ঘ কোন ইনিংস খেলে তাঁকে অন্য কোন ব্যাটসম্যান সঙ্গ দিতে না পারায় বাংলাদেশের সংগ্রহ আরও বড় হয়নি। মাহমুদুল্লাহ ২৬, সাব্বির রহমান ১৯, নাসির হোসেন ১১ ও অভিষিক্ত তরুণ পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ৭ উইকেটে ২৭৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ৮ উইকেটে ২৫১ রানই ছিল প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে সেরা। রাবাদা ৪৩ রানে ৪টি এবং প্রিটোরিয়াস ৪৮ রানে ২টি উইকেট নেন। সংগ্রহটা সর্বাধিক হলেও ডায়মন্ড ওভালের উইকেট একেবারে ব্যাটিং স্বর্গ। সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নামার পর। দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক আর হাশিম আমলা শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করেন বাংলাদেশী বোলারদের ওপর। এ দু’জনকে ঠেকাতে হিমশিম খেয়েছে অন্যতম পেসস্তম্ভ মুস্তাফিজকে ছাড়াই বোলিং আক্রমণ সাজানো সফরকারীরা। মুস্তাফিজ অনুশীলনে গোঁড়ালি মচকে যাওয়ায় খেলতে পারেননি। মাশরাফি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও বাকিরা ছিলেন ব্যর্থ। রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ এবং সাইফউদ্দিনের পেসে কোন প্রকার সমস্যাই হয়নি কক-আমলার। উভয়েই সেঞ্চুরি হাঁকান এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। তারা ২৮২ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী জুটিতে ২২৫ রানের জুটিই ছিল সর্বোচ্চ। ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার দীপক চুদাসামা ও কেনেডি ওটিয়েনো নাইরোবিতে সেটি করেছিলেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেও এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি প্রথম উইকেটে। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গে আমলা ও রাইলি রুশো ২৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন। তবে ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বাধিক ২৮৬ রানের জুটি আছে সনাথ জয়াসুরিয়া ও উপুল থারাঙ্গার-২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিডসে। আমলা ১১২ বলে ৮ চারে ১১০ এবং কক ১৪৫ বলে ২১ চার ও ২ ছয়ে ১৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। সর্বাধিক রান তাড়া করে ১০ উইকেটে জেতার নতুন বিশ্বরেকর্ড এটি। এর আগে গত বছর জুনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৫৪ রান তাড়া করে ১০ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেটিই ছিল বিশ্বরেকর্ড। এবার সেটিকে ছাড়িয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা ৪৩ বল হাতে রেখেই বিনা উইকেটে ২৮২ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয়।
×