ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ দূত যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বিশেষ দূত যাচ্ছেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দেশ দুটিতে সফর যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীঘ্রই তাকে দেশ দুটিতে পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেজিং ও মস্কোর সমর্থন আদায়ে জোর প্রচেষ্টা চালাবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশ দুটির জোরালো সমর্থন নেই। রাখাইনে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে না। এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, রাশিয়া তৃতীয় কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। সে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেজিং ও মস্কোকে পাশে চাইছে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পুরোপুরি অবহিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সঙ্কট মোকাবেলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ দূত হিসেবে বেজিং ও মস্কো সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে এই দুই দেশের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করার নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রথমে মস্কো সফরে যাবেন। আগামী ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর তার রাশিয়া সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গে ইন্টার-পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে যোগ দিতে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদের বারো সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে রাশিয়া সফরে রয়েছে। তাদের সেখানে রুশ নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাশিয়া যাচ্ছেন। তিনি সেখানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে লেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে যাবেন। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বেজিং সফরের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উইয়ের সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচী নির্ধারণের পর চীন সফরের সময়সূচী জানা যাবে। সেখানে প্রতিমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি নিয়ে যেতে পারেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীন ও রাশিয়ার বিশেষ সহায়তা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। কেননা দুটি রাষ্ট্রই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। তবে মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাবের কারণেই দেশটির সহায়তা অনেক বেশি প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। আর বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে রাশিয়ার সমর্থন প্রত্যাশা করেছে সরকার। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিসংতার জের ধরে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশ করে। সেই অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশসীমাও লঙ্ঘন করে মিয়ানমার। এরপরেই ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াংকের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়। চীনের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বেজিংকে বিস্তারিত জানাবেন বলেও আশ্বাস দেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। তবে সরকারের কূটনৈতিক চেষ্টার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হলে, চীন এ বিষয়ে নীরব থেকে কোন পক্ষেই যায়নি। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য প্রভাবশালী দেশ রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে পুরোপুরি ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লেভরভের সঙ্গে এক বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাশিয়া যেন যুক্ত হয়, ঢাকা এই অনুরোধ করেছে। তবে রাশিয়া বলেছে, তারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখবে। তবে এই বৈঠকের আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কট একেবারেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছিল রাশিয়া। তারা বলেছিল, সার্বভৌম কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে তা বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে গোলযোগ ডেকে আনতে পারে। এটা বলে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছিল রাশিয়া। তবে এই ইস্যুতে মস্কোর সঙ্গে ঢাকা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সেই কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে মস্কো ও বেজিং সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
×