ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজনীতি’ না করার আহ্বান

প্রধান বিচারপতিরইচ্ছা অনুযায়ীপ্রজ্ঞাপন প্রকাশহয়েছে ॥ মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

প্রধান বিচারপতিরইচ্ছা অনুযায়ীপ্রজ্ঞাপন প্রকাশহয়েছে ॥ মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছুটি নেয়া, তা বাড়ানো এবং বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ইচ্ছা অনুযায়ী সরকারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে এ নিয়ে ‘রাজনীতি’ না করার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায়ের পর ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে থাকা বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর এই আহ্বান জানান মন্ত্রী। হোটেল সোনারগাঁওয়ে লেজিসলেটিভ ইম্প্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, বিচারপতির সিনহার ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত কিছু বলা হয়নি, প্রধান বিচারপতি যা চেয়েছেন তাই প্রজ্ঞাপনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউয়ের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছি, গতকাল বা গত পরশু এই রায়ের কপি পেয়েছি। এটি ৭৯৯ পাতার জাজমেন্ট এবং প্রতিটি লাইন অত্যন্ত ইম্পর্টেন্ট, আমরা চেষ্টা করব ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করার।’ এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে উচ্চমানসম্পন্ন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে খবমরংষধঃরাব ওসঢ়ধপঃ অংংবংংসবহঃ (এলআইএ) নামক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি)। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের পক্ষে যুগ্মসচিব ছায়েদ আহাম্মদ এবং বাংলাদেশে আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার এহসানুল আজিম এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক, আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. মাসরুর রিয়াজ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপিকে উদ্দেশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এসব নিয়ে আন্দোলন করার চেষ্টা করবেন না, এগুলো আন্দোলনের কোন খোরাক না এবং এ ব্যাপারে কোন আন্দোলন হবে না।’ বিএনপি বলে আসছে, প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করার পর এখন চাপ দিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। বিচারপতি সিনহার গত ৩ অক্টোবর থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রী জানানোর পর বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়ানোর কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির আবেদনে এর আগে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নবেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বিচারপতি সিনহা যেহেতু আরও বেশি দিন বিদেশে থাকবেন, সেহেতু রাষ্ট্রপতি নতুন আদেশ দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নবেম্বর থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন। প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়ানো বা অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন আইনমন্ত্রীর কাছে। উত্তরে আনিসুল বলেন, ‘এটাকে বলতে হবে যে উনি যেটা চেয়েছেন চিঠিতে, যেটা আছে, সেটাই কিন্তু আমাদের সামারি বলেন, প্রজ্ঞাপন বলেন, সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। চিঠিতে উনার ব্যক্তিগত সহকারী যেটা লিখেছেন সেটা হচ্ছে উনি বিদেশ যেতে চান।’ প্রধান বিচারপতি চারটি দেশে যেতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এবং ইউনাইটেড কিংডম এই চারটি দেশে যেতে চান। আগামীকাল ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগ করতে চান এবং ১০ নবেম্বর দেশে ফিরে আসবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।’ ‘আগে ছুটি নিয়েছিলেন ১ নবেম্বর পর্যন্ত, সেই ছুটিটা এক্সটেন্ড করে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত করেছেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হয়, সেই নিয়োগের কারণে অবহিত করেছেন,’ বলেন আইনমন্ত্রী। বিএনপি অভিযোগের বিষয়ে আনিসুল বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি চিঠি লিখে ছুটি নিয়েছেন তার অসুস্থতার কারণ বলে, এটিকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। আমি মনে করি কোন পয়েন্ট তো তারা পায় না আন্দোলন করার, তারা চেষ্টা করে খড়কুটো ধরে আন্দোলনটা যদি করা যায়।’ এর আগে অনুষ্ঠানে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) মধ্যে লেজিসলেটিভ ইম্প্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট বিষয়ে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের পক্ষে যুগ্মসচিব শাহেদ আহমেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) এ্যাক্টিং কান্ট্রি ম্যানেজার এহসানুল আজিম এক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা এবং ফলাফল নিরূপণের নামই হচ্ছে লেজিসলেটিভ ইম্প্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট বা রেগুলেটরি ইম্প্যাক্ট এনালাইসিস।
×