ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সময় বিদেশে পড়ে থাকায় সমালোচনা

খালেদার অনুপস্থিতিতেবিএনপি স্থবির,নেতাকর্মীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:০১, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

খালেদার অনুপস্থিতিতেবিএনপি স্থবির,নেতাকর্মীরা হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলীয় কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে স্বাভাবিক কর্মকান্ড ও ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করতেও নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে দলটি। তাই তাঁর লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে দেরি হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা হতাশ। সূত্র মতে, প্রায় ৩ মাস ধরে দেশের বাইরে থাকায় দলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠনসহ বিএনপির কর্মকা- থেমে আছে। এমনকি সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দলের রুটিন ওয়ার্ক করার ক্ষেত্রেও নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে অংশ নেবে বিএনপি। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কি কি প্রস্তাব দেয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুসারে ঈদ-উল আযহার পর পর বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার কথা ছিল। সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়াও ঠিক করে রাখা হয়েছে। কিন্তু দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বিদেশে থাকায় সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়টিও ঝুলে গেছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয়া হলেও নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ কর্মসূচী সফল করতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানামুখী কথাবার্তা হচ্ছে। এদিকে গত বছর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হলেও সে কমিটিতে বেশ ক’টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদ পূরণের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে যারা এসব শূন্য পদপ্রত্যাশী তাদের মধ্যে বেশি হতাশা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে দল বিমুখ হয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও আর বেশি দিন বাকি নেই। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো যখন তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে সেখানে বিএনপির সর্বস্তরে এখনও স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আর দেশের এখন প্রধান সমস্যা মিয়ানমার থেকে আসা ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে দেশ-বিদেশ থেকে রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধিরা আসলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ সময়ে বিদেশে অবস্থান করায় খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। ১৫ জুলাই খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর থেকে সেখানে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে ঈদের আগেই খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে জানানো হয়। পরে জানানো হয় চিকিৎসার জন্য তার আসতে কিছুদিন দেরি হবে। এখ পর্যন্ত কয়েক দফা খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ পরিবর্তন হলেও আসলে তিনি কবে আসবেন এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছুই বলা হচ্ছে না। তাই এ নিয়ে দলের বাইরে যেমন সমালোচনা হচ্ছে দলের ভেতরেও নানামুখী কথা হচ্ছে। জানা যায়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অক্টোবরের শেষ দিকে ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। তাই সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের নিশ্চয়তা পেলে এর আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তা না হলে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত সম্পর্কোন্নয়ন করার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতা ভারত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি লন্ডন থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ক’জন প্রবাসী বিএনপি নেতা এ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি সূত্র জানায়, আজ-কালের মধ্যে খালেদা জিয়া চোখ ও পায়ের চিকিৎসার বিষয়ে লন্ডনে ডাক্তারদের পরামর্শ নেবেন। এছাড়া দলীয় বিষয়েও ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তার কিছু বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার কাজ বাকি রয়েছে। এসব কিছু শেষ করে যত শীঘ্র সম্ভব খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আসবেন। তবে তিনি কবে দেশে ফিরে আসবেন এখন পর্যন্ত তারিখ ঠিক হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র এক বছর পর। এখন সার্বিকভাবে দলকে গতিশীল করা প্রয়োজন। কিন্তু খালেদা জিয়া দেশের বাইরে থাকায় অনেক কাজ গতিহীন হয়ে আছে। দলের স্বাভাবিক কর্মকা-ও মাঝেমধ্যে ঠিকমতো হচ্ছে না। যেমন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হঠাৎ করেই কোন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় আবার হঠাৎ করেই কখনও কখনও পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করা হয়। এ কারণে সাধারণ নেতাকর্মীরা বিব্রত হয়। খালেদা জিয়া দেশে থাকলে এ ধরনের সমস্যা হয় না। কারণ তিনি নিয়মিত গুলশান কার্যালয়ে বসে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আর তিনি বিদেশে থাকলে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাকর্মীরাও সচরাচর দলীয় কার্যালয়ে যান না। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারপার্সন দেশে ফিরলে দলের কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা দেয়ার কথা তা তিনি দেশে ফিরেই দেবেন। সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঠিক করে রাখা হলেও তিনি দেশে ফেরার পরই তা চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই দলের সার্বিক কর্মকান্ড চেয়ারপার্সনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির যোগে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দলীয় কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও চেয়ারপার্সন বেশি দিন বিদেশে থাকলে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। তবে তিনি দেশে ফেরার পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
×