ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে সিনহার চিঠি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ অক্টোবর ২০১৭

বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে সিনহার চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার॥ বিদেশ যেতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদকে অবহিত করে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। চিঠিতে তিনি ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থানের কথা রাষ্ট্রপতিকে অবগত করেছেন। মঙ্গলবার তিনি এ চিঠি পাঠিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। এদিকে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, শুনেছি মন্ত্রণালয়ে চিঠি এসেছে। আমি ৪টা পর্যন্ত ছিলাম। আমি হাতে পাইনি। অন্যদিকে আইন সচিব আবুল সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, চিঠি আমরা পেয়েছি। উনি (প্রধান বিচারপতি) দেশের বাইরে যাবেন জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে ১৩ অক্টোবর অথবা নিকটবর্তী কোন সময় থেকে ১০ নবেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থানের কথা রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে। এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতির নিকট যাবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, চিঠিতে ছুটি ও বিদেশে অবস্থানের বিষয়ে শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক অবসাদগ্রস্ততার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ২ অক্টোবর এক মাসের ছুটিতে যান এসকে সিনহা। এর পর রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা জানায় আইন মন্ত্রণালয়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বয়স বিচারে অবসরে যাওয়ার দিন ধার্য রয়েছে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস আগেই এক মাসের ছুটিতে গেলেন তিনি। এর আগে গত ৮ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কানাডা ও জাপান সফরে যাওয়ার জন্য ১৬ দিনের ছুটি নেন প্রধান বিচারপতি। উল্লেখ্য, ৩৯ দিনের অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্ট খোলার দিনই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১ নবেম্বর পর্যন্ত এক মাসের ছুটিতে যান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠে। এর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় এবং বিচারিক আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর অভিযোগ তোলেন বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদসহ আইনজীবী সমিতির একাংশ। তবে সরকার ও আওয়ামী লীগ এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। প্রধান বিচারপতি বা আদালতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই প্রধান বিচারপতি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পাঁচ বছরের ভিসার জন্য দূতাবাসে আবেদন করেন। সেখানে তাদের বড় মেয়ে সূচনা সিনহা থাকেন। তাদের তিন বছরের ভিসা দেয় অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন। এরপর মঙ্গলবার তিনি রাষ্ট্রপতিকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে অবহিত করলেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতির আগামী ৩১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা। আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার প্রতিবাদে সুপ্রীমকোর্ট বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে না দেয়ার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে সুপ্রীমকোর্ট বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (আওয়ামী পন্থী) প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমাউনের সভাপতিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, নুরুল ইসলাম সুজন, আজাহারুল ইসলাম ভুইয়া, কুমার দেবুল দে। নেতৃবৃন্দ বলেন বিএনপি আদালতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তাদের এই অতৎপরতা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপির অংশ অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফায়েজী, আহমেদ আজম খান, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সানা উল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।
×