ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলবোর্ডে বরিশাল নগরীর সৌন্দর্য ম্লান

বিবির পুকুরের চারপাশ দুই বছরের জন্য বিক্রি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ অক্টোবর ২০১৭

বিবির পুকুরের চারপাশ দুই বছরের জন্য বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান বিবির পুকুর বিলবোর্ডে ঢাকা পড়েছে। আগে থেকেই পুকুরের চারিপাশে রাজনৈতিক দলের কয়েকটি বিলবোর্ড ছিল। সম্প্রতি পুকুরের চারপাশ দুইবছরের জন্য ২০ লাখ টাকা চুক্তিতে বিক্রি করেছেন সিটি কর্পোরেশন। ফলে সেখানে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ১২টি বিলবোর্ড স্থাপন করায় পুকুরের সৌন্দর্য মøান হয়ে গেছে। নগরবাসী বলছেন, বিবির পুকুরে একসময় বর্ণিল ফোয়ারা ছিল। সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরের ব্যস্ত কোলাহলে এখনও শহরের বাসিন্দারা সকাল-বিকেল এই পুকুরকে ঘিরে আড্ডা জমান। শহরের ভেতর খোলা জায়গায় এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত স্থান।কিন্তু বিলবোর্ডের কারণে সে সুযোগ আর থাকছে না। এসব বিলবোর্ড অপসারণের দাবিতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ। অবিলম্বে বিবির পুকুর এলাকা থেকে সব বিলবোর্ড অপসারণ করে উন্মুক্ত করা না হলে আন্দোলনের ডাক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সচেতন নগরবাসী। জানা গেছে, বিবির পুকুরের চারপাশে বেসরকারী কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে ১২ বিলবোর্ড স্থাপনে কর্পোরেশনের সঙ্গে দুই বছরের জন্য ২০ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে। এ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের বনায়ন ও বিবির পুকুর সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান। হুয়াওয়ের বরিশালের বিক্রয় ও বিপণনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রাহজির আল তাকওয়া বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ১২ বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পুকুরের পূর্ব পাশে ভেঙ্গে যাওয়া লোহার গ্রিল সংস্কার ও রং করা হবে। এর সঙ্গে চারদিকে থাকা বৈদ্যুতিক বাতি (যেগুলো নষ্ট হয়েছে) সেগুলো লাগানো হবে। এ জন্য কর্পোরেশনকে ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে চারটি করে আটটি, উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে দুটি করে চারটি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিলবোর্ড। ফলে দূর থেকে কেবল বিলবোর্ডই চোখে পড়লেও পুকুরের পানি আর দেখা যায় না। পুকুরপাড়ে ঘুরতে আসা তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, চারপাশ উন্মুক্ত থাকলে বিবির পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। কিন্তু রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিলবোর্ডের কারণে সে সুযোগ আর থাকছে না। তার মতো শহরের অনেকেই এ অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্পোরেশনের চুক্তি হয়েছে। তবে এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ও মধ্যস্থতা করেছেন পুকুর রক্ষার দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান। তিনি আরও জানান, পুকুরের সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ তুলে নাগরিকেরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ বিষয়ে পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর একেএম মরতুজা আবেদীন অভিযোগ করেন, বিবির পুকুরপাড়ে বাণিজ্যিক বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য কর্পোরেশনের সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান বলেন, পুকুরের চারপাশে বিলবোর্ড স্থাপনের সিদ্ধান্ত আমার নয়। কোম্পানির সঙ্গে মধ্যস্থতার অভিযোগও সঠিক নয়। এটা সিটি কর্পোরেশন করেছে। তবে ওই অর্থ দিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া গ্রিল সংস্কার, পুরো অংশ রং করা, বৈদ্যুতিক বাতি লাগিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। এখান থেকে ব্যক্তিগত বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই।
×