ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকের শৃঙ্খলাবিধি মামলায় নবেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৯ অক্টোবর ২০১৭

বিচারকের শৃঙ্খলাবিধি মামলায় নবেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে সরকারকে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে আপীল বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ওই গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রবিবার আবারও সময় চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর বিচারকদের চাকরিবিধির এই বিষয়টি রবিবারই প্রথম আপীল বিভাগে ওঠে। এর আগে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে আরও ২৬ বার সময় দেয়া হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। সকালে রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম চার সপ্তাহ সময় আবেদনের কথা বলেন। এরপর বিচারপতি মোঃ আবদুল ওযাহ্হাব মিঞা এ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আমরা টাইম (সময়) দিয়ে দেব। তবে এটা (বিধিমালা) হওয়া দরকার। বসারও দরকার। কোথায় আপত্তি আছে বলেন। তবুও এটা হওয়া দরকার। ৫ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে দিচ্ছি। আমরা বসতে চাই। গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপীল বেঞ্চ শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িয়েছিলেন। রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ আবারও ৪ সপ্তাহের সময় আবেদন করলে এ আদেশ দেয় আপীল বিভাগ। অন্যদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি হবে, তবে সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অক্ষুণœ রেখে এই শৃঙ্খলাবিধি তৈরির বিষয়ে সরকার যা যা দরকার সবই করবে। রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের নিজ কার্যালয়ে এমন মন্তব্য করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের বিষয়ে আজকে (রবিবার) কার্যতালিকায় ছিল। আমরা সরকারের পক্ষে চার সপ্তাহের সময় চেয়েছি। আদালত বলেছেন, তারা অতি শীঘ্রই এর সুরাহা চান। আমিও বলেছি হ্যাঁ, সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অক্ষুণœ রেখে এই শৃঙ্খলাবিধি তৈরির বিষয়ে সরকার যা যা দরকার সবই করবে। আদালত বলেছেন- এটার নিষ্পত্তি চান। আমরাও একমত হয়েছি। হ্যাঁ, আমরাও নিষ্পত্তি চাই। তবে শৃঙ্খলাবিধি হবে, তবে সংবিধানের যে বিধিবিধান আছে সেটাকে অক্ষুণœ রেখে এবং এই বিষয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা দেয়া আছে, সে ক্ষমতাকে অক্ষুণœ রেখে বিধিবিধান তৈরি করতে হবে।’ গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপীল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠায়। গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপীল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এরপরই সুপ্রীমকোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ৬ নবেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গত বছরের ৬ নবেম্ব^র সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। পরে আপীল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে এ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ৭ নবেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন। ওইদিন এ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত সময় দেন। গত বছরের ২৪ নবেম্বর এ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপিন্সে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পরও ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।
×