ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাত কলেজের ছাত্রদের দিনভর নীলক্ষেত সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৯ অক্টোবর ২০১৭

সাত কলেজের ছাত্রদের দিনভর নীলক্ষেত সড়ক অবরোধ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। রবিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে আজিমপুর থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত আটটি সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশের আশ^াস দেন। বিকেলেই অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেও সঙ্কট জটিল রূপ ধারণ করেছে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষা কার্যক্রমে। আট মাসেও পরীক্ষার ফল পায়নি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, ২০১৬ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষ (নিয়মিত, অনিয়মিত, গ্রেড উন্নয়ন) পরীক্ষা আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। বিস্তারিত সময়সূচী যথাসময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। বিক্ষোভ থেকে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘চতুর্থ বর্ষের স্নাতক পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে তারা সকাল নয়টা থেকে নীলক্ষেতের মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর চতুর্থ বর্ষের ফল গত মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাদের ফল এখনও প্রকাশ না হওয়ায় তারা স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তিও হতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের এবং ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ফল দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। আর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয় ৬ ফেব্রুয়ারি, চলে ১৪ মার্চ পর্যন্ত। এরপর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশ হয়নি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তারা পাঁচ দফা দাবিতে শহীদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফল প্রকাশ ছাড়া অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে, ১ হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, তৃতীয় বর্ষের রুটিন প্রকাশ করা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট চালু। এদিকে আন্দোলন চলাকালে বেলা সোয়া ১২টার দিকে নীলক্ষেতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, আমরা অনেক দুঃখিত যে তোমাদের ভরদুপুরে রাস্তায় আন্দোলনে নামতে হয়েছে। এর দায় আমাদের, এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য বলেন, নবেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। উপাচার্য বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থী ৩০ হাজার, কিন্তু আমাদের অধীন ৭ কলেজের শিক্ষার্থী ৩ লাখ। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, লোকবলের অভাব, সার্বিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সে মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তোমাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য যা যা করণীয় তা গ্রহণ করেছি। আমরা একটু সময় চেয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি এ মাসেই রেজাল্ট দিতে হবে। আর কোন প্রহসন নয়, আর কোন তালবাহানা সহ্য করা হবে না। ভিসির বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে ছাত্রদের বিক্ষোভ স্লোগান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে ফল প্রকাশের দাবিতে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে এলে বাধার মুখে পড়েছিল। এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, আট মাসেও স্নাতক পরীক্ষার ফল পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এবার আন্দোলনে নেমেছেন তাই পরীক্ষা ফল ঘোষণার দাবিতে। এর আগে গেল মাসের আন্দোলনের পর মাস্টার্স পরীক্ষার তারিখ আদায় করতে সমর্থ হয়েছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মাস্টার্স পরীক্ষার দাবিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চোখ হারান সরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। পরে সেই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে পরীক্ষা শুরুও হয়েছে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই আন্দোলন সফল হলেও আট মাস আগে পরীক্ষা দেয়া চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্কট কাটেনি। এবার তাই ফল প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে সাত কলেজে। অবিলম্বে দাাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা চলাকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিলেও ফল দেয়ার দায়িত্ব বর্তায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের ওপর। কিন্তু ইতোমধ্যে আট মাস চলে গেলেও তারা ফল পাচ্ছেন না। অথচ তাদের সঙ্গে পরীক্ষা দেয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফল ঘোষণা করা হয়েছে তিন মাস আগে। এ অবস্থায় ৩৮তম বিসিএস থেকে শুরু করে অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় তারা আবেদন করতে পারছেন না। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন তারা ফল পেয়েছেন আরও তিন মাস আগে। আমরা ফল না পাওয়ায় ৩৮তম বিসিএস থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনীহার কারণে আমরা হাজার হাজার শিক্ষার্থী আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা পিছিয়ে পড়ছি। চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ইডেন কলেজের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী পপি রায় বলেন, রেজাল্টের কারণে কোন চাকরির আবেদনও করতে পারি না। এটা কি আমাদের সঙ্গে প্রহশন নয়? পপির মতো ইডেন, ঢাকা, তিতুমীর, সোহরাওয়ার্দী, নজরুল, বদরুন্নেছা এবং বাংলা কলেজের ২০১১-২০১২ সেশনের সবাই এতদিনেও স্নাতক রেজাল্ট পায়নি। অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়েছে। যা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলনে নামা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে চাকরিতে আবেদন করতে পারছে অথচ আমরা রেজাল্ট পাইনি। পড়াশোনার গুণগত মান নিশ্চিত, সেশনজট কমানোসহ বেশকিছু সমস্যা নিরসনে ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ৭ কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপরও এসব কলেজে সময়মতো পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ হয়নি। একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, দেখা দিয়েছে সেশন জট। ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ না হওয়ায় চাকরির অবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তাই বাধ্য হয়েই তারা আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, গত সাত মাসে তাদের যেসব ক্ষতি হয়েছে তা পোষাবে কে? তিতুমীর কলেজের ছাত্র ফয়সাল হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় আমরা খুশিই হয়েছিলাম। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকার সময়ে সেশনজট ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় ভেবেছিলাম সবকিছুর আমূল পরিবর্তন হবে। কিন্তু গত আট মাসে যে ক্ষতি হলো তা পোষানো কঠিন হবে। তিনি বলেন, চতুর্থ বর্ষের ফল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা না হওয়ায় ৩৮তম বিসিএসসহ অনেকগুলো চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে আমরা পিছিয়ে পড়েছি কয়েক ধাপ।
×