ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৮ অক্টোবর ২০১৭

মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলেন শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিমানবন্দর থেকে গণভবন। সর্বত্রই এক অন্যরকম পরিবেশ। দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ যেন জনারণ্য। চারদিকে উৎসবের আমেজে শুধু মানুষ আর মানুষ। জনতার ঢলে রাজপথ যেন জনসমুদ্র। শত শত পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াত, গোয়েন্দা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়। আর নিরাপত্তায় এসএসএফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই টেকেনি তীব্র জনস্রোতের কাছে। প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে মানুষের তীব্র স্রোত নেমেছিল এই সুদীর্ঘ সড়ক পথে। লাখো মানুষ এ দীর্ঘপথে মানবঢাল রচনা করে শনিবার দেশে ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পুষ্পবৃষ্টি আর হৃদয়নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত করেন। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক গণসংবর্ধনায় অংশ নেয়া লাখো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ২০ দিন পর বিপন্ন মানবতার বাতিঘর হয়ে নিজ সরকারী বাসভবন গণভবনে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতা এবং বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি রাজপথে লাখো নেতাকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের উষ্ণ ভালবাসা পেয়েছেন তিনি। বিমানবন্দর-গণভবন পর্যন্ত সুদীর্ঘ এ পথে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে এক অন্যরকম গণসংবর্ধনা দেয়। ফুল ছিটিয়ে, বাদ্য বাজনার তালে স্লোগানে স্লোগানে আর রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বরণ করেন নেন তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে। তবে এবারই ব্যতিক্রম হচ্ছে জনদুর্ভোগ এড়াতে গণসংবর্ধনায় অংশ নেয়া লাখো মানুষের কেউ-ই রাস্তায় নয়, দু’ধারের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে। এই পুরোটা পথে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সড়কের দুই ধারের ফুটপাথে। কেউ কেউ গানে গানেও শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনাকে। কোন ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেই এ সংবর্ধনা দেয়ার আশ্বাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দিয়েছিলেন। শৃঙ্খলা বজায় থাকায় নগরবাসীর উল্লেখ করার মতো কোন দুর্ভোগ ছিল না। ফলে এবার গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগের মাত্রা ছিল অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় নগন্য। অভূতপূর্ব সংবর্ধনা এবং মানুষের আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা জাতির সম্মান, মানুষের সম্মান। এই অর্জন জনগণের, জনগণের প্রাপ্য। দোয়া করবেন যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে পূর্ণোদ্যমে দেশের জন্য কাজ করে যেতে পারি। মানুষের বিশ্বাস, আস্থা অর্জনের চেয়ে রাজনীতিকের জীবনে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হয় না। শনিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বিজি-০০২ ভিভিআইপি ফ্লাইটে করে লন্ডন থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান থেকে নামার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি টার্মিনাল লাউঞ্জে আসেন। সেখানে প্রথমে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর ১৪ দল, বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। একে একে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষক সমাজ, প্রবীণ সাংবাদিকবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ, শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক ও ব্যবসায়ীরা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন। ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান নওফেল, ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। ১৪ দলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান, রাশেদ খান মেনন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আকতার, দিলীপ বড়ুয়া, ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুণ-অর রশীদ. বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রবীণ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, রাহাত খান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবেদ খান, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল ইসলাম বুলবুল প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা ও নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে সঙ্গে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের নেতৃত্বে সংস্কৃতিকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুস, সারা যাকের, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রমুখ। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষে এফবিসিসিআই বর্তমান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রীকে। এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফেরার পর তাঁকে গণসংবর্ধনা জানাতে শনিবার সকাল থেকেই রাজপথে নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাপক সংবর্ধনার এ কর্মসূচী নির্ধারিত ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়। কিন্তু সকাল ৭টা থেকেই বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথের দু’ধারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ দাঁড়িতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানাতে। সকাল ৯টার মধ্যে মানুষের তীব্র স্রোতে দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার এই পথের কোথাও এতটুকুও ফাঁক ছিল না। হাতে হাত ধরে কণ্ঠে স্লোগান, আর হাতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা, ফুলের পাপড়ি নিয়ে বাদ্য-বাজনার তালে তালে দীর্ঘ এই পথ প্রকম্পিত করে রাখেন লাখো মানুষ। আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারাও মানুষের এমন অবিশ্বাস্য ঢল দেখে স্বীকার করতে বাধ্য হন- এত মানুষ রাজপথে নামবে তা তাঁরা কল্পনাও করেননি। ঢাকা মহানগর ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম ও সমমনা সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকেন নির্ধারিত ১৬টি স্পটের পথের দু’ধারে। সরকারী দলের এমপিদের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল শো-ডাউন সবার নজর কাড়ে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে শুধু ১৪ দলই নয়, সকল পেশাজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্নাত করতে রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাজপথের পাশাপাশি দীর্ঘ এ পথের দু’ধারে বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উঁচু বিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য নতুন মাত্রা যোগ করে। জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও বেলুনসহ ফুল হাতে সমবেত এসব মানুষ দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। রাস্তার দুই ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বড় বড় বিলবোর্ড ও ব্যানার শোভা পেয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমবেত মানুষ গান ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্য-বাজনার পাশাপাশি সেøাগানে সেøাগানে মুখর রেখেছেন গোটা এলাকা। মাইকে বেজেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দেশাত্মবোধক সঙ্গীত। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণভবনমুখী সড়ক জনারণ্যে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানানো উপলক্ষে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়িবহরটি গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেয়। এ সময় রাজপথে থাকা লাখো জনতা বাঁধাভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন এবং তুমুল করতালি, ফুল ছিটিয়ে, বেলুন উড়িয়ে এবং সেøাগানে সেøাগানে অভিনন্দিত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁদের কণ্ঠে ছিল, ‘শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য’, ‘যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা’, ‘শুভেচ্ছা-স্বাগতম, প্রধানমন্ত্রীর আগমন’, শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার’ ইত্যাদি নানা সেøাগান। পুরো পথে প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে নেড়ে অভিবাদনের জবাব দেন। রাস্তার দু’পাশে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বাদ্য ও মাইকে গান বাজিয়ে, স্লোগান দিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানান। শেখ হাসিনাও পুরো রাস্তায় হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজছিল। পথে পথে সংবর্ধনা নিতে নিতে সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে প্রবেশ করেন। গণসংবর্ধনায় আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, জাতীয় ও দলীয় পতাকা, টমটম, বাদ্যযন্ত্র, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের বাস-ট্রাকসহ কোন কিছুরই কমতি ছিল না। জাহাঙ্গীর গেট থেকে বিজয় সরণি এবং বিজয় সরণি থেকে গণভবন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের হাজারো নেতাকর্মীর গায়ে ও মাথায় সবুজ গেঞ্জি-ক্যাপ, হাতে লাল সবুজের পতাকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে ঘোড়ার গাড়ির ওপর শান্তির প্রতীক পায়রা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন গান ও বিশাল শোডাউন উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। এছাড়া ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের উদ্যোগে বিশাল বিশাল শোডাউনও ছিল উল্লেখ করার মতো। নির্মল রোজারিওর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অজ¯্র সংগঠনও নিজস্ব ব্যানার নিয়ে যোগ দেন গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। নির্যাতিন হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া, জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ভূমিকা রাখায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হওয়া এবং বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ গণসংবর্ধনা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণ করায় ব্রিটিশ মিডিয়া শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যা দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনপ্রিয় দৈনিক খালিজ টাইমস রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি মানবিক আবেদন জানানোয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তাঁকে ‘প্রাচ্যের নতুন তারকা’ অভিহিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিমানবন্দরের অনুষ্ঠানে বলেন, শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও মানসিক দৃঢ়তার কারণেই কেবল পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহেই এই নির্মাণকাজ এত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, সবই ছিল, কেবল ছিলেন না এই প্রকল্পের (পদ্মা সেতু প্রকল্প) রূপকার (শেখ হাসিনা)। আমি বারবার বলেছিলাম সাতদিন পিছিয়ে দিই। তখন তিনি বলেছেন, ‘গভীর কমিটমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। আমার জন্য পদ্মা সেতুর কাজ এক মিনিটও বিলম্বিত হবে না। সেটাই আমাদের প্রেরণা। প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুতে স্প্যান বসানো হয়। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছান। ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা, গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহণ ও কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও তাদের ফেরত নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। জাতিসংঘের কর্মসূচী শেষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পিত্তথলি অপসারণ করা হয়। কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে ৩ অক্টোবর লন্ডনে যান তিনি। সেখান থেকে শুক্রবার দেশের পথে রওনা হয়ে শনিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
×