ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটো ও রিক্সার ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৮ অক্টোবর ২০১৭

দেশজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটো ও রিক্সার ছড়াছড়ি

সমুদ্র হক ॥ অটো নামে অধিক পরিচিত ব্যাটারি চালিত যন্ত্রযান। প্যাডেল রিক্সায় মোটর ও ব্যাটারি লাগিয়ে দ্রুতগামী রিক্সা। এসব যানবাহনের চলাচলের অনুমতিদানকারী প্রতিষ্ঠান কে! এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে; এখনও যাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কথা- তারা অকটেন, পেট্রোল ও সিএনজি চালিত যন্ত্রযান মোটরগাড়ির লাইসেন্স দেয়। অটো গাড়ি যন্ত্র চালিত নয়। ওটা ব্যাটারিতে চলে। এই যানের লাইসেন্স প্রদানের অধিকার তাদের নেই। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কথা- তারা পায়ে চালিত (প্যাডেল) রিক্সা চলাচলের লাইসেন্স দেয়। ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলের লাইসেন্স দেয়া তাদের কাজ নয়। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কথাÑ নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলতে না দেয়া তাদের কাজ। অটো ও ব্যাটারিচালিত রিক্সার কোন লাইসেন্স নেই সে জন্য জট বাঁধলেই তা সরিয়ে দিতে হবে, তা যেভাবেই হোক। প্রয়োজনে পৌরসভার অনুমতি নিয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গেও দিতে হবে। যেমন বুধবার (৪ অক্টোবর) বগুড়ায় ১৭ টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পৌরসভা ২শ’৫৫টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা আটক করে পৌরসভা চত্বরে রেখে দিয়েছে। পরের দিন (৫ অক্টোবর) জেলা প্রশাসন বগুড়া নগরীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা বিক্রির সাতটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কথা- আঞ্চলিক পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে নগরীর ভেতরে লাইসেন্সবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত যন্ত্রযান অটো এবং ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলতে দেয়া হবে না। নগরীতে যানজটের জন্য এগুলোই প্রধানত দায়ী। এগুলোও সরিয়ে দিতে অভিযান চালানো হবে। জেলা প্রশাসনের এই কথা বগুড়া নগরীতে মাইকে প্রচার হওয়ায় সাধারণের মধ্যে যানজট নিয়ে স্বস্তি এসেছে। নগরবাসীও চায় যানজটে যেন ভোগান্তি না হয়। এদিকে সূযোগ সন্ধানীরা যা করছে- নগরীতে প্রতিটি রুটে এসব যানবাহন চলাচলে চাঁদা তুলছে। যেমনটি করেছিলেন বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ ও মা মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলায় প্রধান অভিযুক্ত শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক দেশজুড়ে আলেড়িত ব্যক্তি তুফান সরকার। তিনি অর্থ নিয়ে টিনের ছোট্ট প্লেটে নম্বর ও স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় এঁটে চলাচলের অনুমতি দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা তুলছিলেন। এখন সেই জায়গায় এসেছে তারই নিয়োজিত কয়েক ক্যাডার। এদিকে শনিবার সকালে ব্যাটারি চালিত রিক্সা মালিক ও চালকরা যখন আটককৃত রিক্সা ছেড়ে দেয়া এবং এ ধরনের রিক্সা চলাচলের দাবিতে বগুড়া নগরীর কেন্দ্রস্থলে মানববন্ধনের জন্য প্রস্ততি নেয় পুলিশ তা ভ-ুল করে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, বগুড়া নগরীর েিভতরে তারা এসব রিক্সা চালাতে পারবে না। নগরীর মূল সড়ক ছাড়া, নগরীর ফিডার রোড ও শহরতলি এলাকায় এসব রিক্সা চলাচল করতে দেয়া হবে। যে সকল রিক্সা আটক করা হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে ছেড়ে দেয়া হবে। এই সময়ই পৌরসভার ভেতরে গিয়ে দেখা যায় একশ্রেণীর লোক ওসব রিক্সা থেকে ব্যাটারি, সুইচ ইগনিশন কিট খুলে নিচ্ছে। ঘটনাগুলোতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। এসব যানবাহনের চলাচলের লাইসেন্স যদি না-ই দেয়া যাবে তাহলে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলো কেন। আমদানি করার সময় তো সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়েছে। ব্যাটারি চালিত এই অটো যন্ত্রযান দেশে এসেছে বেশ কয়েক বছর আগে। দেশের প্রতিটি শহর ও নগরীতে এই অটো গাড়ি চলছে। সাধারণের চলাচলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। অনেক লোকের কাজের সংস্থান হয়েছে। প্রতিদিনের রোজগারে দারিদ্র্য কমেছে। গ্রামীণ পাকা সড়কে এসব যান চলায় গ্রামের সঙ্গে নগরী ও শহরের যোগাযোগ সমৃদ্ধ হয়েছে। জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ব্যাটারি চালিত রিক্সা তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে। যেমন বগুড়া নগরীর বিভিন্নস্থানে এসব রিক্সা তৈরির অন্তত দশটি কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি কারখানায় কাজ করছে কয়েকজন করে শ্রমিক। প্যাডেলবিহীন এসব রিক্সার সঙ্গে মোটর, ব্যাটারি ও ইগনিশন বোর্ড এঁটে দেয়া হচ্ছে। হালে অনেক সাইকেলভ্যানেও এ ধরনের মোটর, ব্যাটারি ও ইগনিশন প্যানেল এঁটে দিয়ে পণ্য পরিবহনেও দ্রুততা এসেছে। তারপরও কি শহরের ভেতরে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। এর আগেও কয়েকবার এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। পরে ফের মূল সড়কে নামে। অভিযোগ পাওয়া যায়: এসব যানবাহন চালাতে ট্রাফিক বিভাগকেও ‘চাঁদা’ দিতে হয়। আবার লাঠি হাতে একশ্রেণীর তরুণ চাঁদা তোলে। বগুড়ার সুধীজনের কথা- প্রযুক্তিকে অস্বীকার ও বন্ধ করে রাখা ঠিক নয়; বিশেষ করে যে প্রযুক্তি দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এবং জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এদিকে শহরে যেখানে সড়ক থাকার কথা ২৫ শতাংশ সেখানে প্রায় প্রতিটি নগরী ও শহরে আয়তনের তুলনায় রয়েছে ৭ থেকে ১২ শতাংশ। যে কারণে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে সড়ক বাড়েনি।
×