ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সাহিত্যে নোবেল পেলেন ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০১৭

এবার সাহিত্যে নোবেল পেলেন ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন জাপানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো। তার উপন্যাস ‘দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে’ বা দিবসের অবশিষ্টাংশের জন্য তিনি খ্যাতিলাভ করেন। ৬২ বছর বয়সী এ লেখকের প্রশংসায় সুইডিস একাডেমি বলেছে, তার উপন্যাসে জোরালো আবেগীয় শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। যেখানে দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের ইন্দ্রজালিক বোধের হাহাকার রয়েছে। জাপানের নাগাসাকিতে ১৯৫৪ সালে জন্ম নেয়া সাহিত্যে ১১৪তম নোবেলজয়ী ইশিগুরো মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। তার বাবা ছিলেন একজন সমুদ্র বিশেষজ্ঞ। সাবালক হওয়ার পর একবারের জন্য তিনি জাপান ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘এ পেইল ভিউ অব হিল্্স’ বা পাহাড়ের একটি বিবর্ণ দৃশ্য প্রকাশ পায়। ১৯৮৬ সালে তার দ্বিতীয় বই ‘এন আর্টিস্ট অব দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’ বা ‘ভাসমান পৃথিবীর এক শিল্পী’ বের হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি। তবে দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে লিখেই তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান। পরবর্তীতে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়। জেমস আইভরির পরিচালনায় তাতে অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা এ্যান্তনি হপকিনস। সুইডিস একাডেমি জানায়, ইশিগুরোর লেখায় পরিমিত প্রকাশভঙ্গি রয়েছে। তিনি কাহিনীকে নির্বিকারভাবে নিজের গতিতে চলতে দিয়েছেন। ইশিগুরোর উপন্যাসের একটা বৈশিষ্ট্য হলো তা কোন সমাধানে পৌঁছায় না। তার চরিত্ররা অতীতে যে সমস্যা-সংঘাতে পড়ে, তা অমীমাংসিতই থেকে যায়। বিষণœতায় শেষ হয় তার কাহিনী। তিনি মাত্র আটটি বই লিখেছেন। যা চল্লিশটিরও বেশি ভাষায় অনূদিত। এছাড়াও চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জন্যও পা-ুলিপি লিখেছেন তিনি। নোবেল পাওয়ার পর তিনি বলেন, এটা বিস্ময়ে হতভম্ব হওয়ার মতো খবর। তামাশা করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তিনি বলেন, এটা আমার জন্য চমকপ্রদ সম্মান। এর অর্থ হচ্ছে, আমি বড় বড় লেখকদের পদাঙ্ক অনুসরণের চেষ্টার মধ্যে আছি। এটা আমার জন্য ভীষণ রকমের স্বীকৃতি। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আমার প্রত্যাশা, সমগ্র নোবেল পুরস্কার বিশ্বটাকে একটা ইতিবাচক দিকে ধাবিত করবে। বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদী তার প্রশংসায় বলেন, তার উপন্যাস পড়ার পর থেকেই আমি তার লেখার প্রেমে পড়েছি ও সম্মান করতে শুরু করেছি। ব্রিটিশ কবি এন্ড্রু মোশন বলেন, ইশিগুরোর কাল্পনিক বিশ্ব ব্যাপক উৎকর্ষ ও মূল্যবান, একসঙ্গে খুবই ব্যক্তিতান্ত্রিক। যেটা বিচ্ছিন্নতা, পর্যবেক্ষণ, হুমকি, বিস্ময় ও ধাঁধাঁর দুনিয়ার সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত। সুইডিশ একাডেমির সেক্রেটারি সারা ডেনিয়াস ইশিগুরোর উপন্যাসকে জেন অস্টিন ও ফ্রান্স কাফকার লেখার সংমিশ্রণ হিসেবে আখ্যা দেন। তবে অস্টিন ও কাফকার সঙ্গে ফরাসী উপন্যাসিক মার্শেল প্রাউস্টকেও কিছুটা মেশাতে হবে। এরপর সামান্য নাড়া দেয়ার পর যা থাকবে, তা-ই হলো ইশিগুরোর লেখা। এই খ্যাতিমান লেখক চারবার ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তার চারটি উপন্যাসের জন্য। দ্য টাইমস ম্যাগাজিন তাকে ১৯৪৫ সালের পরের শ্রেষ্ঠ ৫০ ব্রিটিশ লেখকদের তালিকায় ৩২তম বলে সম্মান জানিয়েছিল। তার শেষ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে, ‘দ্য ব্যুরিড জায়ান্ট’ বা ‘সমাহিত দানব’ নামে। তবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার কোন একটি সাহিত্যকর্মের জন্য নয়, লেখকের সামগ্রিক সাহিত্যকীর্তির জন্য দেয়া হয়ে থাকে। ইশিগুরো কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ও দর্শনে লেখাপড়া করেছেন। ইস্ট এ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে তিনি এমএ ডিগ্রী নেন। সেখানে তার শিক্ষক ছিলেন লেখক ম্যালকম ব্র্যাডবুরি ও এঞ্জেলা কার্টার। তিনি তার থিসিস হিসেবে এ পেইল ভিউ অব হিলস উপন্যাসটি লিখেন। যেটি দিয়ে তিনি সমালোচকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে কাজুও ইশিগুরোর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার। গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান মার্কিন গায়ক ও গীতিকার বব ডিলান, যা চমকের জন্ম দেয়। নোবেলের ইতিহাসে এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সঙ্গীত শিল্পী ও গীতিকার তিনি। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
×