ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইনজীবী সমিতির আর্জি প্রকাশ্য আদালতের বিষয় নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৬ অক্টোবর ২০১৭

আইনজীবী সমিতির আর্জি প্রকাশ্য আদালতের বিষয় নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার বাসায় আছেন এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ কয়েক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে চেয়ে মৌখিক আবেদন করতে গেলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা তাদের এ কথা বলেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা গত মঙ্গলবার থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে চলছে নানামুখী আলোচনা। সরকার প্রধান বিচারপতিকে চাপ দিয়ে ছুটিতে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনে অসুস্থতার কথা লেখা থাকার বিষয়টি দেখিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই ছুটির সঙ্গে রায়ের কোন সম্পর্ক নেই, চাপেরও কোন বিষয় নেই। বুধবার বিকেলে ৩৮ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনা চেয়ে তারা আপীল বিভাগের শরণাপন্ন হবেন। এছাড়া সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্যও চেষ্টা করবেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে আদালত বসার পর বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী এবং সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আপীল বিভাগের এক নম্বর আদালতে যান। শুরুতেই আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন একটি লিখিত আবেদন তুলে ধরে গত ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যাওয়া এবং সাক্ষাত করতে না পারার কথা বলতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার বাসভবনে আছেন।’ বারের সভাপতি এ সময় তার পুরো আবেদনটি পড়ার অনুমতি চাইলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা জানতে চান, এই প্রক্রিয়া ১০৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে পড়ে কি না। জয়নুল আবেদীন এ সময় বলেন, ‘সেটা পরে। আমরা একটা আবেদন নিয়ে এসেছি দিক-নির্দেশনা চাইতে, সহযোগিতার জন্য, সেটা আগে পড়ি।’ এরপর জয়নুল আবেদীন তার এক পৃষ্ঠার লিখিত আবেদন পড়ে শোনান। এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের কথা তুলে ধরলাম। বিষয়টা কিন্তু বিচার বিভাগ সম্পর্কিত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অসুস্থ।’ পড়া শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা আইনের অধীন। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। জেনেছি উনি অসুস্থতার জন্য পারফর্ম করতে পারছেন না। আমরা আপনাদের কথা শুনলাম, চিন্তা করে দেখব। জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। আমি নিশ্চিত, তিনি তার বাসভবনে আছেন। তিনি কার সঙ্গে দেখা করবেন কি করবেন না, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আপনারা আমার চেম্বারে আসবেন। এটা তো প্রকাশ্য আদালতের বিষয় না।’ পরে বেরিয়ে এসে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলকে নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, গার্ডিয়ান অব দ্য কনস্টিটিউশনের কাছে গিয়েছিলাম। আমরা সেখানে বলেছি, গত ২ তারিখে বিকেল পাঁচটা ৩০ মিনিটে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে বাসভবন থেকে একজন সিপাহি আমাদের জানায়, তিনি অসুস্থ। আমরা যখন বললাম, আমরা বারের প্রতিনিধি, অসুস্থ হলেও তাকে দেখার অধিকার আমাদের আছে, আমরা তাকে দেখতে চাই, কথা বলতে চাই। তখন বলা হলো, আপনারা একটু অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে ওই একই সিপাহি ভেতর থেকে এসে বললেন, স্যার সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি কথা বলতে পারবেন না। এই কথাটিই আজকে আমরা আদালতের কাছে বলেছি। বারের সভাপতি বলেন, আদালত যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়, সেই আবেদন তারা করেছেন। যেহেতু আমরা শুনেছি প্রধান বিচারপতি অসুস্থ, কাজেই এ অবস্থায় আমরা মনে করি, বার এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের সেখানে যাওয়া দরকার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে আমাদের যেতে দিচ্ছে না। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন। বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করাই ভাল : এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে আদালতে গিয়ে আইনজীবী সমিতির উদ্বেগ প্রকাশ প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, উনার জানা মতে প্রধান বিচারপতি তার নিজ বাসভবনেই আছেন। তাদের প্রার্থনায় আদালত কোন রকম আদেশ প্রদান করেননি।’ প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে যাচ্ছেন- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি (প্রধান বিচারপতি) তো এর আগে বহুবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন, কানাডায় গিয়েছেন। আমার জানা মতে তার এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, এক মেয়ে কানাডায় থাকেন। এই সমস্ত দেশে এর আগেও উনি গেছেন। এখন উনি যাবেন কি যাবেন না সেটা সম্পূর্ণ উনার নিজস্ব বিষয়। কাজেই এগুলো নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করাই ভাল।’ বারের সভাপতি-সম্পাদক রাজনৈতিক নেতা ॥ এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কার্যালয়ের সামনে ব্রিফ করেন সমিতির সহ-সভাপতি আওয়ামীপন্থী আইনজীবী নেতা এ্যাডভোকেট মোঃ ওয়াজি উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদক একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের উচ্চ পদে আছেন। তাদের বিশেষ একটি বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যেসব জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল আছে, তারাই তাদের সঙ্গে বসেছেন, মতবিনিময় করেছেন। এখানে বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বা বারের অন্য সদস্যদের কোন মত নেই।’ বুধবারের বৈঠকে এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াজি উল্লাহর উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা বারের নির্বাচিত সদস্য। যখন কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়, তখন আমাদের থাকতে হয়। এটা আমাদের সুপ্রীমকোর্ট বারের রীতি। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় না থাকলে সেটা গঠনতন্ত্রের অবমাননা হয়। তাই আমাদের থাকতে হয়।’ আদালতে আইনজীবী সমিতি যে আরজি জানিয়েছে, সে সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি এবং আরও অনেকেই একমত নন বলে জানান ওয়াজি উল্লাহ।
×